২০ রকমের বাহারি পান বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন মোশারফ হোসেন রাজু। তিনি কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার গজারিয়া গ্রামের বাসিন্দা। ১০ বছর আগে পুরান ঢাকায় একটি জুতা কারখানায় কারিগর হিসেবে কাজ করতেন। রাত জেগে কাজ করতে হতো সেখানে। কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিতে যখন কারখানার বাইরে যেতেন; তখন একটি সড়কের পাশের ছোট দোকানে মিষ্টি পান খেতে যেতেন। সেই দোকানে পান খাওয়া থেকেই গ্রামে এমন পানের দোকান করার ইচ্ছা জাগে।
Advertisement
গ্রামে ফিরেই বাজারে খুলে বসেন ২০ ধরনের বাহারি পানের দোকান। তার হাতের নানা ধরনের পান হয়ে ওঠে জনপ্রিয়। এ সুস্বাদু পানের স্বাদ নিতে ছুটে আসেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পানপিপাসু ছাড়াও পার্শ্ববর্তী কুলিয়ারচর, বাজিতপুর উপজেলার লোকজন। এমনকি রাজধানী থেকে কেউ ঘুরতে এলে ছুটে আসেন মোশারফের বাহারি পানের দোকানে। মিষ্টি পান খেয়ে সাথে করেও নিয়ে যান ৫-১০টি পানের খিলি। এ পান বিক্রি করে হয়েছেন স্বাবলম্বী। সংসারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা।
সরেজমিনে জানা যায়, তিন রাস্তার মোড়ে ছোট একটি দোকানে পানের বাহারি মসলা। ২০ রকমের পান সাজিয়ে মিষ্টি পান তৈরিতে ব্যস্ত দোকানদার। সেখানে ১০-১২ জন লোক ভিড় করে আছেন। কথা বলার সুযোগ নেই দোকানদারের। একের পর এক পানপিপাসুরা আসছেন পান খেতে। অনেক সময় লাইন দিয়ে পান কিনতে হয়। দয়াময় পান ভান্ডারে ২০ টাকা থেকে শুরু করে ২শ টাকা পর্যন্ত দামের পান পাওয়া যায়।
সেখানে বিকালের পান, সন্ধ্যা-রাত্রির পান, বৌ-সোহাগী, আগুন পান, খুশবু পান, শালি-দুলাভাই পান, কোমল মিঠা, ভালোবাসার উপহার, পথচলার সাথী, চাঁদবদনী বধূ, দেবর-ভাবির পান, বেনারশি পান, ইয়াং পান, নিঝুম পান, শিশির ভেজা, হেভি স্পিড পান, ছাত্রবন্ধু পান, ডায়সল্ট, হিরমালাই, বাদশা পান—এমন ২০ রকমের বাহারি পান পাওয়ায় যায়।
Advertisement
মিরারচর গ্রামের আকবর মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘৩৫ বছর ধরে আমি পান খাই। মোশারফের পানের দোকানে ১০ বছর যাবৎ পান খেতে আসি। আমার প্রতিদিন ১০-১২টি পান লাগে। বন্ধু-বান্ধবসহ এলে আরও বেশি লাগে। মোশারফের হাতে অন্যরকম একটি ব্যাপার আছে। তার হাতের মিষ্টি পান অন্যরকম সুস্বাদু। তার হাতের পান ৩-৪টি আমার পকেটে রাখি।’
আবুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘মোশারফ ভাইয়ের পান ভৈরবের সেরা পান। প্রতিদিনই তার হাতে বানানো মিষ্টি পান খেতে আসি। শ্বশুরবাড়িসহ আত্মীয়-স্বজনের বাড়ির জন্য নিয়ে যাই।’ মোশারফের দোকানের মিষ্টি পান ভালো লাগে বলে প্রতিদিনই মোটরসাইকেলে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আসেন পৌর শহরের শুম্ভুপুর গ্রামের আবুল বাশার।
দয়াময় পান ভান্ডারের মালিক মোশারফ হোসেন রাজু জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঢাকার জুতার কারখানা ছেড়ে এই বাজারে ১০ বছর যাবৎ বাহারি পান বিক্রি করছি। বাহারি পানে লং, এলাচ, দারচিনি, হরতকি, বয়রা, বাদাম, মোরব্বাসহ নানা ধরনের মসলা দেই। আমার হাতের পান খেতে উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও পৌরসভাসহ আশেপাশের কয়েক উপজেলার মানুষ প্রতিদিন আসে।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন উপলক্ষ্যে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ পিস পান বিক্রি হয়। এমনিতে প্রতিদিন ৩৫০-৪০০ পিস বিক্রি করি। প্রতিদিন ৯-১০ হাজার টাকার পান বিক্রি করতে পারি। এ ছাড়া বিভিন্ন নামিদামি রেস্টুরেন্ট থেকেও পানের অর্ডার আসে।’
Advertisement
এসইউ/এএসএম