অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরে ছয় যুবকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন বেঁচে যাওয়া যুবক হৃদয় মিয়া। তিনি একই নৌকায় ছিলেন। রোববার (২৫ জুলাই) রাতে নিহতদের পরিবারের কাছে তিনি এতথ্য নিশ্চিত করেন।
Advertisement
নিহতরা হলেন-মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বহেরাতলার যাদুয়ারচর গ্রামের নুরু মাদবরের ছেলে শাহিন মাদবর (২২), একই গ্রামের চাঁনমিয়া হাওলাদারের ছেলে শওকত হাওলাদার (২৩), রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট ঘোসালকান্দি গ্রামের মোশারফ কাজীর ছেলে হৃদয় কাজী (২২), শংকরদী গ্রামের আজিজুল সিকদারের ছেলে সাগর সিকদার (২৩), হোসেনপুর গ্রামের আজিজ শেখের ছেলে জিন্নাত শেখ (২৫), উল্লাবাড়ি গ্রামের বিজেন্দ্রনাথ মল্লিকের ছেলে সাধন মল্লিক (২৪) এবং পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার তপারকান্দি গ্রামের ফজলু মুন্সির ছেলে সজিব মুন্সি (২০)।
এর মধ্যে শিবচর উপজেলার বহেরাতলার যাদুয়ারচর গ্রামের চাঁনমিয়া হাওলাদারের ছেলে শওকত হাওলাদার লিবিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) সন্ধ্যায় মারা যান।
নিহতদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আদরের সন্তানকে হারিয়ে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। এ ঘটনায় দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।
Advertisement
স্বজনরা জানান, তিন মাস আগে দালালদের খপ্পরে পড়ে রাজৈর উপজেলা ও আশপাশের অনেকেই লিবিয়ায় আটকা পড়েন। গত ১৯ জুলাই লিবিয়া থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে তাদের ইতালির উদ্দেশে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে বাধ্য করে দালালরা। নৌকাটির ইঞ্জিন ভূমধ্যসাগরে বিকল হয়ে গেলে তারা চারদিন সাগরে ভাসতে থাকেন। এসময় হিটস্ট্রোকে প্রাণ হারান তারা।
একই নৌকায় থাকা ঘোষালকান্দি গ্রামের ওয়াদুদ মিয়ার ছেলে হৃদয় মিয়াসহ আরও ৫-৬ জন অসুস্থ হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। পরে সেই দেশের নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ড জীবিতদের উদ্ধার করে তিউনিসিয়ার হাসপাতালে ভর্তি করে।
সুস্থ হয়ে রোববার রাতে হৃদয় মিয়া ফোন করে বলেন, ‘ঘটনার দিন প্রথমে হৃদয় কাজী আমার কোলেই পানি পানি করতে করতে মারা যায়। আর সাগর সিকদার, জিন্নাত শেখ, সজিব মুন্সি ও সাধন মল্লিক নিখোঁজ থাকার পর খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি তারাও মারা গেছে। আমরা তিউনিসিয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছি।’
মৃত জিন্নাত শেখের মা হালিমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘রাজৈর উপজেলার সত্যবর্তী গ্রামের দালাল রেজাউল শেখ ও শহিদুল মোল্লা আমার ছেলেকে ইতালি পৌঁছে দেবে বলে কয়েক দফায় ১১ লাখ টাকা নিয়েছেন। এরপর আমার ছেলের মৃত্যুর খবর শুনতে হলো।’
Advertisement
তপারকান্দি গ্রামের মৃত সজিব মুন্সির মা শাহানা বেগম বলেন, “আমার ছেলে সজিবের সঙ্গে সর্বশেষ ১৮ জুলাই ফোনে কথা হয়েছে। তখন আমার ছেলে আমাকে বলছিল, ‘মা আমার জন্য দোয়া করো, আমাকে এখন দালাল গেম ঘরে নেবে’। এর পর আর কথা হয়নি। কয়েক দফায় সত্যবর্তী গ্রামের দালাল শাহিন সরদার আমাদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার পরও আমার ছেলের মৃত্যুর খবর শুনতে হলো। আমি এর বিচার চাই।’”
ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী জানায়, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বড়দিয়া গ্রামের মানব পাচারচক্রের সদস্য ইলিয়াছ ফকির, টুটুল ফকির, রাজৈর উপজেলার সত্যবর্তী গ্রামের শাহিন সরদার, রেজাউল শেখ, শহিদুল মোল্লা, ইলিয়াছ শেখ এবং শ্রীরামপুরের লিটন মোল্লা ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে এক এক পরিবারের কাছ থেকে কয়েক দফায় সাড়ে সাত লাখ থেকে ১১ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। ধারদেনা করে এসব টাকা জোগাড় করে দিলেও শেষরক্ষা হয়নি এসব পরিবারের।
রাজৈর থানার ওসি (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, এ ঘটনায় পরিবার থেকে অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ কে এম নাসিরুল হক/এসআর/এমএস