অনলাইন শপিং প্লাটফর্ম ইভ্যালিতে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা অনুসন্ধানে বাধা হবে না বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান।
Advertisement
বুধবার (২৮ জুলাই) সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক আইনজীবী বলেন, ‘গত নভেম্বর থেকে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরীন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাসেলের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে। নতুন বিনিয়োগের কারণে তাদের বিরুদ্ধে যে অনিয়মের অনুসন্ধান চলছে তাতে কোনো প্রভাব পড়বে না।’ তাদের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও অর্থ আত্মসাৎ অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে বলে জানান দুদক আইনজীবী।
এর আগে মঙ্গলবার ইভ্যালিতে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা দেয় দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ যমুনা। প্রাথমিকভাবে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে তারা। ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে মোট এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে গ্রুপটি। যমুনা গ্রুপের পরিচালক মনিকা ইসলাম গণমাধ্যমকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, ইভ্যালির সঙ্গে যমুনা গ্রুপের একটি পার্টনারশিপ চুক্তি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে শিগগিরই আমরা সেখানে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করব। এরপর ধাপে ধাপে মোট এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে।
Advertisement
এদিকে মঙ্গলবার রাতে ইভ্যালির পক্ষ থেকেও একই তথ্য জানানো হয়। ইভ্যালির মূল বাজার দর (ভ্যালুয়েশন) প্রকাশ করেনি কোনো পক্ষ।
এ বিষয়ে ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘একটি দেশীয় উদ্যোগ হিসেবে আমাদের পাশে আরেকটি দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে পেয়ে আমরা সত্যিই আনন্দিত। যমুনার এ বিনিয়োগ ধারাবাহিক বিনিয়োগের অংশ এবং পরবর্তী ধাপেও তাদের বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এ বিনিয়োগ ইভ্যালির ভবিষ্যৎ উন্নয়ন এবং ব্যবসার পরিধি বাড়াতে ব্যয় করা হবে।’
গ্রাহকদের পুরোনো অর্ডার ডেলিভারি নিয়ে মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘পুরোনো অর্ডার যেগুলো পেন্ডিং সেগুলোর ডেলিভারির ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি, প্রয়োজনে আমরা আরও বিনিয়োগের ব্যবস্থা করব।’
বিনিয়োগের বিষয়ে যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম ইসলাম বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমরা দেখেছি, স্থানীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। যেমন- যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে অ্যামাজন, চীনের ক্ষেত্রে আলিবাবা। তেমনি বাংলাদেশে ইতোমধ্যে নিজের একটি অবস্থান তৈরি করেছে দেশীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি।’
Advertisement
যমুনা গ্রুপের গ্রুপ পরিচালক মনিকা ইসলাম বলেন, ‘দেশের বাজারে মানসম্পন্ন পণ্য ও সেবা নিয়ে যমুনা গ্রুপ ব্যবসা করে আসছে। বাংলাদেশে সব থেকে বড় অফলাইন মার্কেট প্লেস যমুনা ফিউচার পার্ক। আর এখন সবচেয়ে বড় অনলাইন মার্কেট প্লেস গড়ে তোলার জন্য ইভ্যালির সঙ্গে থাকবে যমুনা।’
যমুনা গ্রুপের পরিচালক (অ্যাকাউন্টস) শেখ ওয়াদুদ বলেন, ‘বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময়ে আমরা দেশীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে চাই। এই বিনিয়োগ নিয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য আমরা ধাপে ধাপে প্রকাশ করব।’
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ইভ্যালি নিয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে বলা হয়, গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির গ্রাহকের কাছে ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টদের কাছে ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকা দেনা রয়েছে। এসবের বিপরীতে ইভ্যালির মোট সম্পদের পরিমাণ ৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার ৮৪৬ টাকা। এরমধ্যে চলতি মূলধন রয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩৭৩৬ টাকা।
এটি প্রকাশের পরপরই বিপাকে পড়ে ইভ্যালি। বেশ কয়েকটি ব্যাংক তাদের ক্রেডিট কার্ডে ইভ্যালিতে কেনাকাটা স্থগিত করে। সার্বিক পরিস্থিতিতে পুরোনো অর্ডারগুলো ইভ্যালি ডেলিভারি দিতে পারবে কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। গুঞ্জন রটে ইভ্যালি বিদেশে টাকা পাচার করেছে এবং তারা ব্যবসা গুটিয়ে ফেলবে। বিভিন্ন পক্ষ থেকে ইভ্যালি বন্ধ করে দেয়ারও দাবি ওঠে।
এ অবস্থায় শনিবার (২৪ জুলাই) রাত ১১টায় ফেসবুক লাইভে এসে ইভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘ইভ্যালি বন্ধ করে দেয়া কোনো সমাধান হবে না। কোনো প্রতিষ্ঠানই বন্ধ করে ইনভেস্টমেন্ট ফেরত আনা সম্ভব নয়। তাই আমাদের ব্যবসা করার সুযোগ দিন, আমরা কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেব না। সুযোগ দিলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে পুরোনো সব অর্ডার ডেলিভারি দেব।’
এফএইচ/জেডএইচ/জেআইএম