নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় ডাকাতিকালে আটক হওয়া চার ডাকাত নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ঘটনার পরিকল্পনাকারী কয়েকজনের নাম জানিয়েছেন। ওই ঘটনায় গণপিটুনিতে ৮ জনের মৃত্যু হয়। গ্রেফতার ওই চারজন দাবি করে বলেন, তারা মূলত কাজের জন্য ঢাকা এসেছিলেন পরে তাদেরকে ট্রাকে উঠানো হয়। পরে ডাকাতির বিষয়টি জানানো হলেও তারা কেউ রাজী হননি। বরং উল্টো হুমকিতে বাধ্য করা হয় ডাকাতির মিশনে অংশ নিতে। কিন্তু তারা কখনো ডাকাতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তাদেরকে এ কাজে নামতে বাধ্য করা হয়েছে। এদিকে গ্রেফতার ওই ব্যক্তিদের বক্তব্য উড়িয়ে দিয়ে পুলিশ বলছে, হয়তো নিজেদের বাঁচানোর জন্যই তারা এ দাবি করছে। আর তারা যাদের নাম বলেছে তাদের খোঁজা হচ্ছে। ওইসব ব্যক্তিদের আটকের পরেই বের হবে ঘটনার মূল রহস্য। এদিকে ডাকাতির ঘটনার পর পুলিশ ও ডাকাতির শিকার দোকান মালিকের পৃথক দুটি মামলার পর উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের পুরিন্দা বাজার ও এর আশপাশের এলাকাতে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। আবার অনেকে ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ডাকাতির ঘটনার পর আহত অবস্থায় গ্রেফতার চারজনকে দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হয়। রাতেই তাদেরকে আবারও থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। আহত চারজন হলো মানিক (২৫), লোকমান (২৮), সজীব (২৭) ও সাব্বির (২২)। এর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল রামপুর এলাকার মৃত আবদুল লতিফের ছেলে মানিক, একই জেলার সানা মিয়ার ছেলে সজীব, মিলন মিয়ার ছেলে সাব্বির ও চাঁদপুর কালীবাড়ি এলাকার ওসমান বেপারীর ছেলে লোকমান।এদিকে, ডাকাতির ঘটনায় নিহত ৮ জনের মধ্যে পরিচয় শনাক্ত হওয়া চারজনের মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অপর চারজনের মধ্যে আরো একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তার নাম দুলাল মিয়া (২৬)। সে জামালপুর জেলার ইসলামপুর এলাকার জব্বার মিয়ার ছেলে। এখনো পরিচয় শনাক্ত হয়নি অপর তিনজনের। তাদের মরদেহ ১০০ শয্যা বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। আড়াইহাজার থানায় সকালে লোকমান সাংবাদিকদের জানান, শওকত ওরফে সোহাগ, টিটু ও রনিসহ আরো বেশ কয়েজন তাকে বাড়ি থেকে ডাকাতি কাজে নিয়ে আসে। এরা বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করতো। নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে বাড়ি থেকে এনে এসব কাজে লিপ্ত করায়। সাব্বির জানান, জুয়েল নামের এক প্রতিবেশী তাকে ঢাকা আসতে বলে। পরে ঢাকায় আসার পর ডাকাতির কাজের কথা বলে ট্রাকে উঠিয়ে দেয়। তাকে একাধিকবার বারন করা সত্বেও নানা ধরনের হুমকি দিয়ে ডাকাতি করতে ট্রাকে তুলে দেয়। সজীব জানান, শওকত শ্রমিকের কাজের কথা বলে ডেকে এনে এ ডাকাতি কাজে নামায়। কাজ না দিয়ে ডাকাতি করতে হবে কেন এমন প্রশ্ন করতে গেলে শওকত হুমকি দিয়ে ডাকাতি করতে বলে। সজীব কখনো ডাকাতি করেনি এবং কোনো অভিজ্ঞতাও ছিল না। মানিক জানান, মিজান নামের এক ব্যক্তি তার পূর্ব পরিচিত ছিল। তার ডাকেই সে ঢাকায় এসেছিল। তাকে ভাল কাজের কথা বলে এনে ডাকাতি কাজে নামিয়ে দেয়। অন্যদিকে, গ্রেফতার হওয়া ডাকাতদের দেওয়া তথ্য মতে ডাকাত শওকত, টিটু ও রনি মারা গেছে। সে হিসেবে এখনও অধরা রয়ে গেছে জুয়েল ও মিজান। তবে পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ডাকাতেরা যে শওকতের নাম জানিয়েছে সে এখনো বেঁচে আছে কি-না নাকি নিহত যে শওকত তিনি কি-না সেটা যাচাই বাছাই চলছে। এর পেছনে আর কারা আছে তাদের গ্রেফতারেও অভিযান চলছে। কারণ ডাকাতদের দেওয়া তথ্য মতে ১৮ জনের একটি টিম ডাকাতি কাজে অংশ নেয়। এর মধ্যে ৮ জন মারা গেছে। আর চারজন গ্রেফতার। পলাতক আছে বাকি ছয়জন। আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাখাওয়াত হোসেন জাগো নিউজকে জানান, ডাকাতেরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কিছু তথ্য দিয়েছে। কারা কারা এসব ডাকাতির ঘটনায় জড়িত সে ব্যাপারেও জানিয়েছে। তথ্যগুলো যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। মো. শাহাদাত হোসেন/একে
Advertisement