ফিচার

রহস্যময় এক পরিবার, সবার শরীরই নীল!

হাসপাতালে একদিন হঠাৎ এক শিশু জন্ম হয়। যা দেখে চিকিৎসকরাও অবাক হয়ে যান। কারণ শিশুটি দেখতে স্বাভাবিক হলেও তার শরীরের রং অবাক করে দেয় পুরো বিশ্বকে।

Advertisement

শিশুটির পুরো শরীরই ছিল নীল রঙের। ফর্সা, শ্যামলা বা কালো ত্বকের মানুষদের আমরা অনেক দেখেছি, তবে কখনো কি নীল রঙের মানুষ দেখেছেন!

১৯৭৫ সালের ঘটনা এটি। শিশুটির জন্ম নিয়ে চারদিকে আলোচনা সৃষ্টি হয়। ওই শিশুটির নাম বেঞ্জামিন বেঞ্জি স্টাসি। চিকিৎসকদের কাছেও স্টাসির গায়ের রংয়ের বিষয়টি খুবই বিচিত্র এবং নতুন ছিলো।

দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে শিশু বেঞ্জিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে দ্রুত লেক্সিংটনে অপেক্ষাকৃত ভালো একটি হাসপাতালে হস্তান্তর করা হয়। হাজারো মেডিকেল পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। তবে কোনো ধরনের শারীরিক সমস্যা খুঁজে পাওয়া গেল না।

Advertisement

অবশেষে স্টাসির বাবা জানালেন, তার এক দাদির শরীরের রংও ঠিক এমনই নীল ছিল। তিনি মৃত্যু অবধি অন্য সব মানুষের মতোই সুস্থ এবং স্বাভাবিকভাবেই বেঁচে ছিলেন।তবে স্টাসির জন্মের কয়েক সপ্তাহ পর তার শরীরের প্রচণ্ড নীল রং ফিঁকে হতে শুরু করে।

শুধু তার নখ এবং ঠোঁটে নীল রঙের কিছুটা প্রভাব ছিলো। পরবর্তীতে শুধু ঠান্ডা আবহাওয়াতেই স্টাসির শরীর নীল রং ধারণ করত। অবশেষে জানা যায়, বিরল জিনের প্রভাবেই স্টাসির শরীর এমন নীল হয়েছে।

অ্যাপালাসিয়ান অঞ্চল থেকে এই বিচিত্র জিনের উদ্ভব ঘটে। অতীতে এই জিনের প্রভাবে ওই অঞ্চলের একটি পরিবারের কয়েক প্রজন্মের বেশ কিছু মানুষ নীল রঙের হয়েছিল।

প্রথম নীল মানব

Advertisement

মার্টিন ফুগেট নামক এক ব্যক্তিই ছিলেন কেনটাকি অঞ্চলের প্রথম নীল মানব। মার্টিন ফুগেট এবং তার স্ত্রী অ্যাপালাসিয়ান কেনটাকির ক্রিক অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করেন ১৮২০ সালে।

তাদের প্রথম সন্তান জ্যাকারিয়াহ সম্পূর্ণ নীল শরীর নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। পরবর্তীতে এই দম্পতি সাত সন্তানের জন্ম দেন। যাদের মধ্যে ৪ জন দেহের রংই ছিল নীল।

বিরল জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারণেই এ দম্পতির সন্তানদের শরীর নীল রং হয়েছিলো। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, মার্টিনের শরীরে হয়তো দুই ধরনের রেসিসিভ জিন ছিল।

পরবর্তীতে ফুগেট পরিবারের পরবর্তী কয়েকটি প্রজন্মের মধ্যেও নীল ত্বকের বৈশিষ্ট্য ছিল অনেকের মধ্যেই। স্টাসির শরীরেরও রেসিসিভ জিনের অস্তিত্ব টের পায় চিকিৎসকরা।

লুনা ফুগেট যিনি বেঞ্জির দূর সম্পর্কের দাদি ছিলেন। যার শরীর ছিল নীল রঙের। তবে তিনি অন্যদের মতোই সুস্থ এবং স্বাভাবিক ছিলেন। পরবর্তীতে লুনা ১৩ সন্তানের জন্ম দেন এবং তিনি প্রায় ৮৪ বছর জীবিত ছিলেন।

ফুগেট পরিবারের সদস্যদের ত্বক কেন নীল ছিল?

১৯৬০ সালে মেডিসন ক্যাওইন নামের একজন হেমাটোলোজিস্ট ডাক্তার নীল মানবদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। অতঃপর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে দেখা যায়, তাদের ত্বক নীল রং হলেও ফুসফুস বা হৃৎপিণ্ডে কোনো সমস্যা নেই। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে আরও দেখা যায়, ফুগেট পরিবারের সদস্যদের রক্তে নীল হিমোগ্লোবিন আছে।

মেথেমোগ্লোবিন প্রবাহের আধিক্যের কারণেই তাদের মধ্যে মেথেমোগ্লোবিনেমিয়া নামক এক ধরনের শারীরবৃত্তীয় ঘটনা আছে। এই উপাদানের অধিক উৎপাদন ও প্রবাহ রক্তের স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিনের রং নীলে পরিবর্তন করে দেয়।

মূলত ড্যায়াফোরেজ নামক এক ধরনের এনজাইম দায়ী। এই এনজাইমের কারণেই হেমোগ্লোবিনের রঙ লাল হয়ে থাকে। তবে ফুগেট পরিবারের কিছু সদস্যের শরীরে এই এনজাইম ছিল না। এ কারণে তাদের শরীরে নীল রং প্রাধান্য পায়।

স্টাসির কী হলো?

বর্তমানে শিশু স্টাসি পরিণত হয়েছেন। পূর্ব কেনটাকি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। পরবর্তীতে বিয়েও করেন। তিনি এখন আলাস্কার ফেয়ারবাঙ্কে বসবাস করছেন।

যদিও তার ত্বকের রং এখন আর অতটা নীল নয়। তবে নীল ঠোঁট এবং নখের কারণ অনেকেই জানতে চান তার কাছে। জীবনের ৪৬টি বছর স্বাভাবিকভাবেই কাটিয়ে দিয়েছেন স্টাসি। শারীরিকভাবে তিনি বেশ সুস্থও আছে।

সূত্র: অল দ্যাট ইন্টারেস্টিং

জেএমএস/এমকেএইচ