জাগো জবস

সাংবাদিকতা থেকেই বিসিএসে সফল হয়েছেন জাহিদ

মো. জাহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩৬ আনসার ব্যাটালিয়ন, লংগদু, রাঙ্গামাটিতে ‘সহকারী পরিচালক’ হিসেবে কর্মরত। বাবা মো. মস্তফা হাওলাদার অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী। মা রাশিদা বেগম গৃহিণী। জাহিদের জন্ম ১৯৯২ সালের ০১ মার্চ পটুয়াখালী জেলায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।

Advertisement

সম্প্রতি তার বিসিএস জয় ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন লেখক ও সাংবাদিক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—

জাগো নিউজ: আপনার ছোটবেলা কেমন কেটেছে?মো. জাহিদুল ইসলাম: অত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে সাধারণ পরিবারের ছেলেদের মতোই কেটেছে। বিশেষ কিছু ছিল না। স্কুলে যাওয়া, বিলে ও পুকুরে মাছ ধরা। গরু-ছাগল রাখা। বিকেলে মাঠে খেলতে যাওয়া। তবে খেলাধুলায় কখনো ভালো ছিলাম না। তাই অনেক সময় দর্শকের ভূমিকায় থাকতাম।

জাগো নিউজ: পড়াশেনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?মো. জাহিদুল ইসলাম: পড়াশোনা স্বাভাবিকভাবেই চলেছে। তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না। ক্লাসে প্রথম হওয়ায় শিক্ষকদের কাছ থেকে ফি-বেতনে বিশেষ সুবিধা পেয়ে লেখাপড়া করেছি। এখনকার মতো প্রতিবছর নতুন বই পেতাম না। অন্যদের পুরাতন বই দিয়ে চালিয়ে নিতাম। তাতে তেমন কোনো অসুবিধা হয়নি।

Advertisement

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?মো. জাহিদুল ইসলাম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার পর বিসিএসের স্বপ্ন দেখা। এর আগে এসব নিয়ে এত জানাশোনাও ছিল না। আর ভাবনাও ছিল না। হলের বড় ভাইদের বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে দেখতাম। সেখান থেকেই আগ্রহ তৈরি হয়।

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই—মো. জাহিদুল ইসলাম: আমার বিসিএসের গল্প বিশেষ কিছু নয়। তবে বলা চলে, বিসিএস কেন্দ্রীক পড়াশোনা বেশি করিনি। যদিও আমি প্রথম বিসিএসে সাফল্য পাই। কিন্তু কখনো রিডিং রুমে, লাইব্রেরিতে পড়তে যাইনি। কেউ কখনো আমাকে এভাবে পড়তে দেখেনি। বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকার চেষ্টা করেছি। বিতর্ক, কুইজ সোসাইটির সাথে কাজ করার চেষ্টা করেছি। এলাকার ছাত্র কল্যাণ সংগঠনে দায়িত্ব পালন করেছি। এছাড়া গ্রামাঞ্চল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে অনেকের মতো আমিও নিজের অর্থ সংস্থানের চেষ্টা করি। প্রথমে টিউশনি করতাম। পরে সাংবাদিকতা শুরু করি। মাঠে-ঘাটে যাওয়া বেশি একটা হয়নি। ডেস্কে সাব-এডিটিং করতাম। বিসিএসে সাফল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে এটিই আমার সবচেয়ে বেশি কাজে লেগেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী নখদর্পণে চলে আসে। প্রতিদিন আল জাজিরা, বিবিসি, গার্ডিয়ান অনলাইনে পড়তাম। দেশীয় ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টার ও নিউ এজ পড়তাম। ফলে ইংরেজি নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয়নি। লেখালেখির একটা অভ্যাস থাকায় লিখিত পরীক্ষায় বেশি বেগ পেতে হয়নি।

বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে গণিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাংবাদিকতা করার আগে টিউশনি করতাম। এতেও সুবিধা পেয়েছি। যদিও আমি মানবিক বিভাগের ছাত্র। কিন্তু ছোটবেলা থেকে গণিত ভালো বুঝতাম। বিজ্ঞান নোট করে পড়েছি। আমার মনে হয়েছে, বিসিএসের জন্য এলোমেলো অনেক পড়ার চেয়ে গুছিয়ে বেছে বেছে প্রয়োজনীয়গুলো পড়া বেশি ফলদায়ক। একটু কৌশলী হলে ভালো ফল করা যায়। তবে যারা কাঙ্ক্ষিত ফল পাননি, তারা যে কম মেধাবী; সেটা বলার সুযোগ নেই। হয়তো কৌশলে কেউ একটু পিছিয়ে পড়েন বা কারো ভাগ্য সহায় হয়নি।

জাগো নিউজ: কততম বিসিএসের কোন ক্যাডারে আছেন?মো. জাহিদুল ইসলাম: আমি ৩৬তম বিসিএসে আনসার ক্যাডারে আছি। বর্তমানে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩৬ আনসার ব্যাটালিয়ন, লংগদু, রাঙ্গামাটিতে ‘সহকারী পরিচালক’ হিসেবে কর্মরত আছি।

Advertisement

জাগো নিউজ: কারো কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কি?মো. জাহিদুল ইসলাম: বিশেষ কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পাইনি। অনুপ্রেরণার কথা বলতে হলে, আমার মা-বাবার কথা বলতে হবে। তারা প্রতিনিয়ত আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকা অবস্থায় দেখেছি, যখন বিসিএসের ফল প্রকাশিত হয়; তখন একটা আলোড়ন সৃষ্টি হয়। অমুক ভাই প্রশাসন ক্যাডারে, অমুকে পুলিশ ক্যাডারে, কেউ পররাষ্ট্র, কেউ শিক্ষা ক্যাডারে। এটিই বিসিএসের প্রতি বেশি উৎসাহ সৃষ্টি করে।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?মো. জাহিদুল ইসলাম: দেশের মানুষের সেবা করার জন্য নিজের যোগ্যতা বৃদ্ধি করা জরুরি। অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে। ভবিষ্যতে এ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। সুযোগ পেলে উচ্চতর শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাব। আপাতত এতটুকুই চিন্তা করছি।

জাগো নিউজ: সাম্প্রতিক করোনা দুর্যোগে আপনার ভূমিকা কী? মো. জাহিদুল ইসলাম: বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী সব ধরনের দুর্যোগে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে। করোনাকালে আমি ঝালকাঠি জেলার সহকারী জেলা কমান্ড্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। বাহিনীর সদস্য হিসেবে আমরা প্রথম দিকে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করি। লিফলেট বিতরণ, মাইকিং করা, মাস্ক পরতে উদ্বুদ্ধ করা—এসব করি। সরকার যখন লকডাউন ঘোষণা করে, সেটি কার্যকর করতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। বাহিনীর পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করি। আসলে এখানে এককভাবে কোনো কৃতিত্ব নেই। সবার প্রচেষ্টার মাধ্যমে করোনা মহামারি থেকে জনগণকে বাঁচাতে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করি।

এসইউ/এমএস