ক্যাম্পাস

প্রজাপতি মেলায় দর্শনার্থীতে মুখর জাবি

‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’ স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শুরু হয়েছে প্রজাপতি মেলা-২০১৫। মেলাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার শীতের সকালে মুখরিত হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাহির রায়হান মিলনায়তন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কীটতত্ত্ব শাখা ৬ষ্ঠ বারের মত এ মেলার আয়োজন করে।শুক্রবার সকাল ১০টায় মেলার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আবুল হোসেন (উপ-উপাচার্য)। এসময় অন্যান্য অতিথিদের সাথে নিয়ে প্রজাপতি অবমুক্ত করে ও বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন তিনি।শুভেচ্ছা বক্তব্যে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি ও মেলার আহ্বায়ক অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন তুহিন বলেন, প্রজাপতি টিকে থাকলে গাছপালা টিকে থাকবে, আর প্রকৃতি ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকবো।  প্রজপতির পরাগায়নে বীজ উৎপাদন হয়, যত বেশি বীজ উৎপাদন হবে তত বেশি বন টিকে থাকবে। ফরেস্ট ইকোসিস্টেম এ প্রজাপতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।উদ্বোধনী বক্তব্যে অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, আমাদের গ্রাম-বাংলায় একটা কথা প্রচলিত আছে যে ঘরে প্রজাপতি আসলে আমরা একে লক্ষ্ণী বলে মনে করি। আর আমাদের এ ক্যাম্পাসকেই প্রজাপতির আবাস হিসেবে গড়ে তুলেছেন অধ্যাপক মনোয়ার। এটা আমাদের জন্য জন্য সৌভাগ্য। তিনি আরো বলেন, অতিথি পাখির জন্য আমরা যেমন অভায়রণ্য করেছি, ঠিক তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মনোয়ার হোসেনকে আহ্বান জানাচ্ছি প্রজাপতির আবাসস্থল হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে তৈরি করার জন্য। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের দক্ষিণ পাশে প্রায় তিন একর জায়গাজুড়ে নির্মিত দেশের প্রথম প্রজাপতি পার্ক ও গবেষণাকেন্দ্র উদ্বোধন করেন অতিথিরা। সেখানে বিশালাকৃতির তিনটি ‘প্রজাপতি হাটে’ প্রজাপতি পূর্ণাঙ্গ বাসস্থান এর আদলে তৈরি করে অসংখ্য প্রজাপতি রাখা হয়েছে। প্রজাপতি জীবন্ত দৃশ্য সকল বয়সের মানুষের চিত্তাকর্ষণ করেছে।জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সার্বিক অবদানের জন্য এবারের মেলায় আইইউসিএনকে (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার) ‘বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। সংস্থাটির পক্ষে বাংলাদেশ প্রতিনিধি ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ এ পুরস্কার গ্রহণ করেন। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম খলিল আল হায়দারকে ‘ইয়াং বাটারফ্লাই এনথুজিয়াস্ট’ পুরস্কার দেওয়া হয়।আজ মেলা উপলক্ষে ক্যাম্পাসে দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। পরিবার পরিজন কিংবা বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন অনেকেই। কেউ ঘুরে ঘুরে দেখছে, কেউবা আবার ছবি আর সেলফি তোলায় ব্যস্ত । প্রজাপতি প্রেমীদের জন্য মেলার উদ্বোধনস্থল জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে এবং বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রজাপতির হাট তৈরি করা হয়। জাল দিয়ে ঘেরা এ ঘরগুলোতে প্রায় শতাধিক জীবন্ত প্রজাপতি রাখা হয়। নানা রঙ ও বাহারের প্রজাপতি দেখে খুশিতে আত্মহারা মেলায় আগত শিশুরা। ইট-কাঠের এ নগরীতে প্রজাপতির দেখা তো আর হর-হামেশাই পাওয়া যায় না! দিনব্যাপী এ মেলায় অন্যান্য আয়োজনের মধ্যে থাকছে ; প্রজাপতিবিষয়ক ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা (শিশু-কিশোরদের জন্য), প্রজাপতির আলোকচিত্র প্রদর্শনী, প্রজাপতিবিষয়ক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির হাট দর্শন (জীবন্ত প্রজাপতিপ্রদর্শন), অরিগামি প্রজাপতি, প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি উড্ডয়ন, বারোয়ারি বিতর্ক (প্রজাপতি ও জলবায়ু পরিবর্তন), প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতিবিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী, পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল খায়ের, জীব বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবদুল জব্বার হাওলাদার, আই ইউ সি এন এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজির ডিন এস এম মাহবুবুল হক মজুমদার প্রমুখ।হাফিজুর রহমান/এসকেডি/এমএস

Advertisement