করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সারাদেশে চলছে কঠোর বিধিনিষেধ। ২৩ জুলাই শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে শুরু হয়ে বহাল থাকবে আগামী ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত। কিন্তু এই বিধিনিষেধ মানতে নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো প্রবণতাই দেখা যায়নি। উল্টো নানা অজুহাত নিয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছে মানুষ।
Advertisement
রোববার (২৫ জুলাই) দুপুরে জেলা শহরের চাষাঢ়া এলাকায় প্রায় ৩০ মিনিট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, বিভিন্ন অজুহাতে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন। একইসঙ্গে সবার কমন অজুহাত হলো ‘ডাক্তার দেখানো আর ওষুধ কেনা’। বের হওয়া লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলে প্রায় সবাই একই উত্তর দেন। যে অজুহাতে তাদেরকে আটকিয়ে রাখার কোনো সুযোগ নেই।
এভাবে একের পর এক মানুষ আসছেন আর নির্দ্বিধায় দেখাচ্ছেন বিভিন্ন অজুহাত। ফলে বাধ্য হয়ে ছেড়ে দিতে হচ্ছে তাদের। তবে অযথা ঘোরাঘুরির জন্য বের হওয়া বেশ কয়েকজন তরুণকে দেয়া হয়েছে শাস্তি। একপায়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত। একটু বয়সে বড় যারা তাদের পা উঠানো ছাড়াই দাঁড় করিয়ে রাখা হয় বয়সের সম্মানার্থে।
রোকসানা বেগম নামে এক নারী তার ছেলেকে নিয়ে হাঁটতে বের হয়েছেন। কারণ, ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছেন ছেলেকে নিয়ে হাঁটতে। অন্যথায় পায়ে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বাড়ির ছাদে কিংবা বাড়ির সামনে হাঁটলে চলবে না। তাই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে চলমান বিধিনিষেধের মধ্যেও হাঁটতে এসেছেন চাষাঢ়ায়!
Advertisement
এমন অজুহাত শুনে রীতিমত থ হয়েছেন বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা। ভদ্র নারীকে কীভাবে বোঝাবেন তা নিজেরাও বুঝতে পারছিলেন না তারা।
সস্তাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জে গামছা কিনতে এসেছেন রকিব। বাড়িতে গামছার সঙ্কট চলছে। তাই বিধিনিষেধের মধ্যে বাড়তি ভাড়া দিয়ে কিনতে এসেছেন গামছা।
জেলখানা এলাকায় দেবরের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া নববধূকে নিয়ে ফিরছেন এক যুবক। নব্য বিবাহিত স্ত্রীকে বিধিনিষেধের আগে কেন নিলেন না জানতে চাইলে বলেন, ‘বউ আসতে চায় না। লকডাউনের ভেতর ১০-১২ দিন ওই বাসায় থাকলে তো চলবে না। তাই আজ নিয়ে আসছি। আর বের হব না।’
নতুন জামা ও ভারী সাজ নিয়ে বের হয়েছেন তন্নি নামে এক তরুণী। জিজ্ঞেস করতেই বললেন বন্ধু অসুস্থ। ভিক্টোরিয়া যাচ্ছি তাকে দেখতে। বিধিনিষেধের মধ্যে কেন দেখতে যেতে হবে এমন প্রশ্নে বলেন, ‘ও আমার অনেক ক্লোজ ফ্রেন্ড। আমি না গেলে অনেক খারাপ দেখায় বিষয়টা।’
Advertisement
এমন অসংখ্য অজুহাত আর উদ্ভট কারণ শুনে যেমন বিরক্ত হয়েছেন বিজিবি, পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা, তেমনি মানুষের অসচেতনতা দেখে হয়েছেন অবাকও। ক্রমাগত বেড়ে চলা করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে যেই বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে তা না মানলে অচিরেই ঘরে ঘরে করোনা রোগী ছড়িয়ে যাবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাসান বিন মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘কঠোর বিধিনিষেধ ও সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ২৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত, সেনাবাহিনীর তিনটি পেট্রোল টিম, দুই প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের একটি টিম, ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্য এবং জেলা পুলিশ বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি মানুষকে সচেতন করতে।’
এসজে/এমকেএইচ