উদ্ভাবনই পারে যে কোনো সামাজিক সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে। সেই চিন্তাধারা থেকেই সানজিদুল আলম শান ২০১৫ সালে লিটার অব লাইট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন, যা জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে গবেষণা এবং উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করছে। সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তার কাজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন এই তরুণ উদ্ভাবক। বিস্তারিত জানাচ্ছেন মমিনুল হক রাকিব—
Advertisement
প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবন বিনামূল্যে আলোকিত করা, মেয়েদের পিরিয়ডকালীন স্বাস্থ্যকর সমাধান দেয়া, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা, বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিতের মতো জনহিতকর কাজগুলোই হচ্ছে শান এবং তার সামাজিক প্রতিষ্ঠান লিটার অব লাইট বাংলাদেশের কাজ।
তাদের স্বেচ্ছাসেবক-পরিচালিত প্রকল্পগুলো তরুণ স্বেচ্ছাসেবীদের উদ্ভাবনী প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানুষের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করছে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বিশেষত এসডিজি১, এসডিজি৬, এসডিজি৭, এসডিজি৯, এসডিজি১১, এসডিজি১৩ এবং এসডিজি১৭ নিয়ে কাজ করছে শান এর এই প্রতিষ্ঠান।
‘প্রজেক্ট লাইটগিভার’ লিটার অব লাইট বাংলাদেশের একটি প্রজেক্ট। এটি বিনামূল্যে মানুষের জীবন আলোকিত করার একটি প্রকল্প। স্বেচ্ছাসেবীরা একটি ছোট সোলার প্যানেল, প্লাস্টিকের বোতল, বাঁশ, এলএইডি লাইট এবং ছোট সার্কিট ব্যবহার করে শতাধিক সোলার বোতল ল্যাম্প এবং স্ট্রিট লাইট তৈরি করে।
Advertisement
প্রজেক্ট লাইটগিভার সম্পর্কে জানতে চাইলে শান বলেন, ‘দেশের ঘরে ঘরে আলো পৌঁছাতে তরুণ স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে উদ্ভাবনী সোলার ল্যাম্প তৈরি করে বিনামূল্যে বিতরণ করছে প্রজেক্ট লাইটগিভার, আমাদের প্রতিটা লাইট গিভারই একেকজন আলোর ফেরিওয়ালা।
তাদের হাত ধরেই অন্ধকারমুক্ত করতে পারবো আমাদের দেশ। ‘বিভিন্ন স্পন্সর এর আর্থিক সহায়তায় প্রতি মাসে অন্তত একটি গ্রামকে সম্পূর্ণরূপে আলোকিত করে লিটার অব লাইট বাংলাদেশের প্রজেক্ট লাইটগিভার। বর্তমানে তাদের মূল কার্যক্রম রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবির কেন্দ্রীক তবে প্রতি মাসে স্পন্সরের সহায়তায় ৫টি সম্প্রদায়কে আলোকিত করার পরিক্লল্পনা রয়েছে।
সানজিদুল আলম শান এর উদ্ভাবনী চিন্তাধারা এবং দেশ ও দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই লিটার অব লাইট যেমন বৃহৎ কাজ করছে তেমনি উন্নয়ন ক্ষেত্রে দেশি এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার নজর কেড়েছে।
তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি জাতিসংঘের ইউএনডিপি থেকে স্টার্ট-আপ এওয়ার্ড পান, জাতিসংঘের ‘ইয়াং লিডার্স ফর এসডিজিস’ এওয়ার্ডের জন্য সারা বিশ্বের মাঝে শর্টলিস্টেড হন। সানজিদুল এর প্রযুক্তি নিয়ে নেশা সেই শৈশব থেকেই। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি ব্লগ সাইট বানিয়ে গুগল এডসেন্স থেকে বিজ্ঞাপনী আয়ের চেক পান।
Advertisement
গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইনসহ বিভিন্ন কাজে ফ্রিল্যান্সিং করতে গিয়ে ডিজিটাল মার্কেটিং বিদেশি ক্লায়েন্টদের জন্য কাজ করেন ১৮ বছর বয়সেই। পরবর্তীতে ই-কমার্স পরামর্শক হিসাবে সার্টিফায়েড হন প্যারিসভিত্তিক একটি সংস্থা থেকে। হংকং ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ডিজিটাল ব্যবসা পরামর্শক কোম্পানি ‘ডাবলজিরো ডিজিটাল’ প্রতিষ্ঠা করেন যেখানে ইনি পরিচালক এবং প্রধান পরামর্শক।
ভবিষ্যতেও দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ এবং উদ্যোক্তাদের জন্য নিজেকে নিবেদিত রাখতে চান এই তরুণ সমাজসেবক এবং উদ্যোক্তা।
এমএমএফ/এমকেএইচ