সাহিত্য

খান মুহাম্মদ রুমেলের চারটি কবিতা

নাগরিক পাখি

Advertisement

শহরজুড়ে বৃষ্টি, ভিজছে আদিম নগরশহিদ মিনারের বাবলা গাছের কাকের জন্য হাহাকার তোমারকার্জন হল কলা ভবনের পাখির জন্য ভাবনা অসীমবৃষ্টি আকাশে ওড়ে শঙ্খচিল শকুন!

বড় মায়ায় বলেছিলে এক সন্ধ্যায়—পাখিগুলোর ঘর নেই?ডালেই থাকবে সারারাত?সবজান্তার ভাব নিয়ে বলেছিলুম—ঘর থাকে না নাগরিক পাখির!বিশ্বাস করেছিলে কি-না, কে জানে?বিজ্ঞান ভবনের গাছে ঝুলে থাকা পাখির ঝাঁকযেন আমি সব জানি,জিজ্ঞেস করেছিলে পাখির নামবিগত জন্মের অভিজ্ঞতায় সপ্রতিভ উত্তর আমার—এ তো শকুন!

এরপর সন্ধ্যা মেলায় রাতের পানেঘরে ফেরার তাড়া তোমার, পাখির মতোশুধু জানলে না,আমার যে ঘর নেই কোথাওআমার যে শেকড় নেই কোনো

Advertisement

ঘর না থাকুক সমস্ত আকাশ আমার বাড়িশুধু শেকড় না থাকার আক্ষেপ আমার!গভীর শেকড়ে একদিন বড় বৃক্ষ হতামযেন আমার ডালে দুদণ্ড জিরোতে পারো তুমি!

কী আক্ষেপ কী আক্ষেপঘরহীন পাখি আমি, শেকড়হীন গাছ!

****

ব্যথা নীলাম্বরী

Advertisement

বেদনার উপাখ্যান জেনে গেছে শব্দেরাধরা দেয় না আর কবিতার খাতায়।কোথাও তবু জমা আছে স্মৃতি কিছুনোনাধরা দেয়ালের কার্নিশে নীরবেব্যথার জালে পোড়ে, কেউ অনিঃশেষ।কেউ ধরে রাখে বিগত জন্মের দাগবলে না কিছুই ডালে বসা মাছরাঙা!ঠোঁট থেকে চুঁইয়ে পড়ে অভিমানী জলক্ষতগুলো রয়ে যায় বুকের গহীন কপাটে!

এরপর আর কোথায় দাঁড়াই বলোযখন জলে ডুবে গেছে পথগুলো সব!স্বপ্নের বারুদ ভিজে গেছে সুদূর অতীতেআক্ষেপ জাগানিয়া সময়গুলো ভোঁতাকেন তবু ভাসে উড়ে যাওয়া কোকিলের ডাক?

কাকে সুধাই কার কাছে বলি আজপথের শেষে মিলন হলো না কেন পথের?প্রশ্ন ছোঁড়ে চারপাশ উত্তর দেবে কেআগুনে জলাঞ্জলি দেয় সাদা বকঝিলের মায়া ভুলেছে সে সেই কবে!

এখন চলে দাহকাল অনন্ত সন্তর্পণেভাঙা মাস্তুল ঠেলে বৈঠাহীন মাঝি!

তোমাদের সময়ে নীলাম্বরী ব্যথায় বাঁচি!

****

ফেরারি জোছনা

এই চাঁদ জোছনামাখা রাতসব ফেলে ফেরার হবো একদিন।থাকবে না কোথাও কোলাহল কোনোশূন্যতায় বাতাস বয়ে যাবে অবিরাম।বলার থাকবে অনেক কিছুই, দেখারও।তবুও নির্লিপ্ত যোগীর মতো চেয়ে রবোএকদিন বাতাস না হয় পাখি হবো।থাকবে না ঠিকানার তাড়া হলে পথহারা।

কায়মনে তৈরি হয়ে যাই যখনকী জানি পিছুটান টেনে ধরে তখন।একেই ভালোবাসা বলে তবে!

কই!তুমি তো প্রতিশ্রুতি দিলে না কখনো!

একদিন ঠিকই জলে মিশে যাবোএকদিন ঠিকই হাওয়া হয়ে যাবো।বেদনার চাষাবাদে বিরহ ফলাবো!

****

শূন্যতার আখ্যান

এই শহরটা আজ পড়ে আছে নিঃসঙ্গ—শূন্য হাঁড়ির মতো!সব চেটেপুটে খেয়ে নিলেপড়ে থাকে দুয়েক দানা,কিন্তু এই শহরটা একেবারেই ফাঁকাব্যর্থতার আখ্যান!আন্দোলনের উত্তাপ নয়ভালোবাসার জলে ভরুক শহরটাখুব জোর বৃষ্টি হোকঝরুক ভালোবাসাউপচে পড়া গোলাপি আভায়আমি কি ঠাঁই পাবো?

এসইউ/এমএস