করোনায় ধুকছে নোয়াখালীর একমাত্র চামড়া শিল্পপ্রতিষ্ঠান ‘দ্য নোয়াখালী ট্যানারি’। তিন প্রজন্মের এ শিল্প কারখানাটি আর্থিক অনটনে পড়ে দুর্দিন পার করছে। সরকার এ খাতে নানা প্রণোদনা দিলেও দীর্ঘ ৭১ বছরে এর ছিটেফোঁটাও পায়নি প্রতিষ্ঠানটি।
Advertisement
প্রতিষ্ঠানের মালিক শাহরিয়ার ছারওয়ার বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলে আমার দাদা মরহুম সাঈদ মিয়া ভারতে ট্যানারি শিল্পে কাজ করতেন। ১৯৪৭ সালে যুদ্ধের সময় তিনি দেশে এসে দেখেন তখনকার লোকজন গরু জবাই করে চামড়া খালে ফেলে দিচ্ছে অথবা মাটিতে পুঁতে ফেলছে। তখন তিনি ১৯৫০ সালে নোয়াখালীর সোনাপুরের দত্তেরহাট এলাকার গোপাই গ্রামে এ শিল্প কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করেন।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে সরকার এ প্রতিষ্ঠানের নামে দেড় একর (১৫০ শতাংশ) জমিও লিজ দেয়। ১৯৭৭ সালে দাদা মারা যাওয়ার পর আমার বাবা গোলাম ছারওয়ার মিন্টু এ কারখানার হাল ধরেন। তিনিও ২০০৭ সালের মারা যাওয়ার পর এখন আমরা তিন ভাই কারখানাটি পরিচালনা করছি।’
শাহরিয়ার বলেন, ‘গত ২০০০ সাল থেকে এ প্রতিষ্ঠান থেকে দেশে চামড়া সরবরাহ করে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। এতে মাসে কমপক্ষে ৫০ হাজার ডলার করে বছরে গড়ে ছয়লাখ মার্কিন ডলার পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা আসতো। এর মধ্যে চায়না, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ইতালিতে পণ্য সরবরাহ করে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু গত দুই বছর করোনার প্রভাবে তাও বন্ধ হয়ে গেছে। আগে অনেক বেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থান ছিল এখানে আর এখন মাত্র ৩০-৩২জন শ্রমিক কাজ করছে।’
Advertisement
বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) দুপুরে দ্য নোয়াখালী ট্যানারিতে গিয়ে দেখা যায়, ১৫-১৬ জন শ্রমিক চামড়ায় লবণ দেয়ার কাজ করছেন। মেশিনগুলোতে জং ধরেছে। অনেকগুলো ঘর পরিত্যক্ত পড়ে আছে। ২০১৯ সালের পর থেকে ক্রয়করা চামড়া মজুত পড়ে আছে। করোনা মহামারি, চামড়ার চাহিদা না থাকা, কেমিকেল সঙ্কট, শ্রমিকের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে প্রতিষ্ঠানটি তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।
শাহরিয়ার জানান, ‘কোনো কোনো বছর কোরবানে দেড় লাখ গরুর চামড়া, দুই লাখ ছাগলের চামড়া ও ৫০ হাজার মহিষের চামড়া ক্রয় করে প্রক্রিয়াজাত করেছেন। সেই ক্ষেত্রে এবার পাঁচ হাজার গরুর চামড়া ক্রয় করার চিন্তা থাকলেও গত দুই দিনে কিনেছেন মাত্র দেড় হাজার চামড়া। এটি কিনতেও ভয় পাচ্ছেন তিনি। কারণ লবণ ও কেমিকেলের যে দাম তাতে একটি চামড়া প্রস্তুত করতে খরচ যা হয় বাজারে তার দাম পাওয়াও মুশকিল।’
তিনি বলেন, ‘সরকার যদি জরুরি ভিত্তিতে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ স্থাপনার (ইটিপি) ব্যবস্থা করে তাহলে অনেক উপকার হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ প্রতিষ্ঠানকে যদি স্বল্পসুদে ঋণ দেয় তাহলে বৃহত্তর নোয়াখালীর ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠান আবারো মাথা তুলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।’
এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে আমার জানা ছিল না। এটিকে রক্ষা করা প্রয়োজন। এ প্রতিষ্ঠানকে সরকারিভাবে সবধরণের সহযোগিতা করা হবে।’
Advertisement
ইকবাল হোসেন মজনু/আরএইচ/এমএস