আইন-আদালত

অবসরে গেলেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী

অবসরে গেলেন হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অ্যানেক্স ভবনের ১৪ নম্বর বিচারিক এজলাসে তাকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী, অ্যাটর্নি জেনারেল এবং সুপ্রিম কোর্ট (বার) আইনজীবী সমিতির সদস্যরা।সংবর্ধনার জবাবে আইনজীবীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি বার হচ্ছে বিচারকের সুতিকাগার, আর এ কারণেই সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ আইনজীবী সমিতির এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করেন জজ সাহেব কেমন? সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেবো- সুপ্রিম কোর্ট (বার) আইনজীবী সমিতি যেমন।আমি মনে করি, বার ও বেঞ্চ একই পাখির দুটি ডানা। আর পাখিটি হলো বিচার বিভাগ। একটি ডানা দিয়ে যেমন পাখি উড়তে পারে না। তেমনই বিচার বিভাগ শুধু বিচারক দিয়ে চালানো অসম্ভব। অবশ্যই সেখানে আইনজীবীদের সহযোগিতা অপরিহার্য, না হলে সম্পূর্ণ ব্যবস্থাটাই অচল হয়ে দাঁড়ায়।বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী আরও বলেন, আইনজীবীরা শুধু মামলা পরিচালনা করেন না, তারা বিচারপ্রার্থীর আমানতের দায়িত্বপ্রাপ্তও বটে। এই মনোভাব নিয়ে যারা কাজ করেন তারাই মহান আইনজীবী। তারা মৃত্যুর পরও জীবিত থাকেন অর্থাৎ তারা চিরঞ্জীব। তিনি বলেন, ন্যায় বিচার ধনী-গরিব নির্বিশেষে ছোট কিংবা বড়দের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না এবং এ কাজে আইনজীবীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিজয়ের এই মাসে আসুন আমরা সবাই মিলে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা গড়ে তুলি যা দেশের সামগ্রিক অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য।প্রথমে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে সংবর্ধনা প্রদান করে বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও এরপর বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন। অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনবিদ বিচারপতি টিএইচ খান, ব্যারিস্টার রফিকুল হক, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল বাসেত মজুমদার এবং হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবীসহ চার-পাঁচশ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, বিচারপতি নজরুল নিরপেক্ষতার প্রতীক। তিনি বলেন, বিচারপতি ভুল করতে পারেন কিন্তু প্রভাবিত হতে পারেন না। বিচারপতি নজরুল এমনই একজন যিনি কখনও কারও দ্বারা প্রভাবিত হননি। আপনার সবচেয়ে বড় গুন নিরপেক্ষতা। নিরপেক্ষতাই আপনাকে চালিত করেছে সব সময়। আপনার জনপ্রিয়তা আদালতে বিপুল সংখ্যক আইনজীবীর উপস্থিতির প্রমাণ। এটা আপনার চরম তৃপ্তি।সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আপনার মতো একজন বিচারপতিকে আরও বড় পরিসরে সংবর্ধনা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমি দুই বছর আগে বলেছিলাম, আপিল বিভাগের চার বিচারপতির পদ খালি। এসব পদে হাইকোর্টের দক্ষ যোগ্য ও জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের নিয়োগ দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। বলেছিলাম, এই বিচারপতিরা অবসারে যাওয়ার পর সরকার আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ দেবে। আজ দক্ষ ও যোগ্য বিচারপতিদের দুঃখজনকভাবে অবসরে যেতে হচ্ছে। দুই বছর পর আমার ভবিষ্যৎ বাণী প্রতিফলিত হচ্ছে।খন্দকার মাহবুব বলেন, আপনি বলেছিলেন, দেশে যদি বন্যা হয় তা হলে বাধ দিতে হবে। তা না হলে দেশ ভেসে যাবে। এর জন্য আপনি রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের আইন অনুযায়ী জামিন দিয়েছিলেন। এটাই অপনার জন্য কাল হয়েছে। তা না হলে আপনার মতো সৎ ও যোগ্য বিচারপতিকে আরও বড় পরিসরে দেখতে পেতাম। সব চেয়ে বড় বিষয় হলো ন্যায় বিচার। ন্যায় বিচার বঞ্চিত সমাজে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার থাকে না।আইনজীবীদের বিভিন্ন বক্তব্যের জবাবে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জানেন আমার জন্য কোনটা মঙ্গল আর কোনটা অমঙ্গল। আল্লাহ বলেছেন, আমি সবরকারীদের সঙ্গে আছি। আমার কাছে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছু নেই।বিচারপতি বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী ১৯৪৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মৃত মো. গোলাম মোস্তফা চৌধুরী, মা মৃত রহিমা খানম চৌধুরী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৪ সালে জেলা বারের আইনজীবী হন। এরপর ১৯৭৭ সালে হাইকোর্টে এবং ১৯৯২ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০০১ সালের ৩ জুলাই তিনি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি নিযুক্ত হন এবং ২০০৩ সালের ৩ জুলাই হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি নিযুক্ত হন।তিনি ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, দক্ষিণ করিয়া, কানাডা এবং সৌদি আরব ভ্রমণ করেন। এছাড়া ২০১৫ সালে ভারতে লখনৌতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রধান বিচারপতি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।এফএইচ//বিএ

Advertisement