সিলেটের গোয়াইনঘাটে বাড়ছে বাল্যবিবাহ। ১০ থেকে ১৬ বছর বয়সের মধ্যে অগণিত শিশু কন্যাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের অভিভাবক, নিকট আত্মীয়-স্বজনের পছন্দে এসব বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটে। এক্ষেত্রে বাল্যবিবাহের শিকার পাত্রীর অসহায় চেয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্কুল ও মাদ্রাসা পড়ুয়া কোমলমতি কিশোরীরাই বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে।বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে মাঝে মধ্যে প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নেয়া হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় নিকাহ রেজিস্ট্রার ছাড়াই গোপন স্ট্যাম্প দলিল চুক্তিমূলে বর ও কনে পরিবারের সমঝোতায় এসব বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটে থাকে। বিদ্যালয়ের নথি কিংবা ইউনিয়ন পরিষদের দেয়া জন্মসনদ অনুসারে যদি পাত্রির বয়স কম থাকে এক্ষেত্রেই স্ট্যাম্পে চুক্তিমূলে এসব বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটে। ঠিক এ রকম দুটি বাল্য বিয়ে শুক্রবার ও শনিবার হতে যাচ্ছে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, উপজেলার ৫নং আলীরগাঁও ইউনিয়নের টিকর নয়াখেল গ্রামের প্রবাসী বশির উদ্দিনের শিশু কন্যা আলীরগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। জন্মসনদ অনুযায়ী তার জন্ম ২০০০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। সে অনুযায়ী তার বয়স এখন মাত্র ১৫ বছর চলছে। প্রাপ্ত বয়স্ক না হলেও পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবার সায়মা নামের ওই শিশুটিকে বাধ্য হয়েই বিয়ের আসরে বসতে হচ্ছে কনে হিসেবে। এই বিয়ের দিন ধার্য করেছেন তার পরিবারের লোকজনই।এছাড়া একই গ্রামের সাধন দাস ও অঞ্জু রানী দাসের কন্যা নিপি রানী দাস, অষ্টম শ্রেণি রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী ১৯ জানুয়ারি ২০০০ সালে। এ বছর আলীরগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছে নিপি রাণী। সায়মা আক্তারের মতোই পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পিতা মাতার পছন্দের পাত্রের সঙ্গে শনিবার নিপা রানী দাসের বিয়ের দিন ধার্য করা হয়েছে।দুইটি কন্যা শিশুর বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ এলাকার সচেতন সমাজ বাধা দিলেও সংশ্লিষ্ট অভিভাবকরা তা উপেক্ষা করেন। পরে এলাকাবাসী বাল্যবিয়ে রোধে গত ৬ ডিসেম্বর সিলেটের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবরে সম্প্রতি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে লিখিত আবেদন করেন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও অনুলিপির মাধ্যমে জানানো হয়েছে।বৃহস্পতিবার বিকেলে গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাল্যবিয়ে রোধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।এদিকে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার নিদের্শে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশ্রাফ আহমদ রাসেল দুই ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে তাদের অভিভাবকদের ডেকে বিয়ে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। উভয় ছাত্রীর পরিবার বাল্যবিয়ে বন্ধে সম্মত হয়েছে বলে জানান আশ্রাফ আহমদ।ছামির মাহমুদ/এআরএ/আরআইপি
Advertisement