মাহমুদুল হক জালীস
Advertisement
কুরবানি শব্দের আভিধানিক অর্থ ত্যাগ, আত্মোৎসর্গ, নৈকট্য লাভ। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় কুরবানি হলো, জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট জন্তু জবাই করা। এ প্রসঙ্গে কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই (হে নবী!) আমি আপনাকে (নিয়ামতপূর্ণ) কাওসার দান করেছি। অতএব আপনি আপনার রবের সন্তুষ্টির জন্য সালাত কায়েম করুন ও তার নামে কুরবানি করুন।’ (সুরা আল কাওসার, আয়াত ১-২)
কুরবানি সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করবে না, সে যেন ঈদগাহের কাছে না আসে।’ (আহমদ ও ইবনে মাজাহ)।
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কুরবানির দিনে মানব সন্তানের কোনো নেক আমলই আল্লাহর কাছে তত প্রিয় নয়; যত প্রিয় কুরবানি করা। কুরবানির পশুর শিং, পশম ও খুর কিয়ামতের দিন (মানুষের নেক আমলনামায়) এনে দেওয়া হবে। কুরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়। সুতরাং তোমরা আনন্দচিত্তে কুরবানি করো।’ (তিরমিজি)
Advertisement
কুরবানি হযরত আদম আলাইহিস সালামের যুগ থেকেই বিদ্যমান। মূলত তার দুই সন্তানের ঝগড়া নিরসনের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে কুরবানির বিধান দেওয়া হয়েছিল। তারপর থেকে পৃথিবীতে যত নবি এসেছিলেন, সবার শরিয়তে কুরবানির বিধান ছিল। তবে প্রত্যেক নবির যুগে কুরবানির পন্থা ভিন্ন ভিন্ন ছিল।
সবশেষ উম্মতে মোহাম্মদির উপরে যে কুরবানির পদ্ধতি চালু রয়েছে, তা হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের শরিয়ত থেকে এসেছে। এ বিধান কেয়ামত পর্যন্ত সব জাতি ও ভূখণ্ডের জন্য বলবৎ থাকবে। কুরবানি প্রসঙ্গে এসেছে, ‘সাহাবারা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করেছিলেন, কুরবানি কী? উত্তরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা তোমাদের পিতা ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সুন্নাত।’ (মিশকাত, ইবনে মাজাহ)
কুরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। কুরবানির দিনগুলো হলো, জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ। এ দিনগুলোয় যে ব্যক্তির কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত যাকাতের নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকবে, তার জন্য একটি পশু কুরবানি করা ওয়াজিব।
ওয়াজিব কুরবানি পরিত্যাগকারীর উপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠিন সতর্কবার্তা পেশ করেছেন। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর এবং পশু কুরবানি কর।’ হাদিসে এসেছে, ‘হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি সামর্থ থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২৩)
Advertisement
পশু কুরবানির মাধ্যমে কুরবানিদাতা হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও শেষ নবি হযরত মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক সুন্নাত পালন করতে পারে। ইসলামে যার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক। কুরবানি প্রসঙ্গে কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে এসব পশুর রক্ত ও গোশত পৌঁছায় না, তার কাছে পৌঁছায় কুরবানিদাতার তাকওয়া।’ (সুরা হাজ্জ, আয়াত ৩৭)
লেখক: মুহাদ্দিস, খাদিমুল ইসলাম মাদরাসা, কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা।
এসইউ/জেআইএম