মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টা। রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হ্যান্ডমাইকে বার বার ঘোষণা দিচ্ছেন- ‘টিকিট ছাড়া কোনো যাত্রী স্টেশনে প্রবেশ করবেন না। মাস্ক পরিধান করুন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ান। করোনা ঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।’
Advertisement
কিন্তু কে শুনে কার কথা। স্টেশন চত্বরে তখন হাজার হাজার মানুষের ভিড়। ৭০ বছরের বৃদ্ধ থেকে শুরু করে শিশুসহ অসংখ্য নারী-পুরুষ ব্যাগ ও বস্তা হাতে প্রবেশ করছেন স্টেশন কম্পাউন্ডে। অপরদিকে কমিউটার (লোকাল) ট্রেনের টিকিটের জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন নারী-পুরুষ।
এছাড়া যারা অনলাইনে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট কেটেছিলেন ভিড়ের কারণে তারাও সামনে এগুতে পারছিলেন না। মানুষের ভিড় ও পরিস্থিতি সামাল দিতে এক পর্যায়ে রেলস্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা র্যাব, পুলিশের সহায়তায় চেকপোস্টের মতো ব্যারিকেড বসিয়ে টিকিট আছে কিনা তা দেখেই তবে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছিলেন।
সরেজমিন ও যাত্রীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির কথা জেনেও তারা পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে যাচ্ছেন। ভোর থেকে ট্রেনের টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। কখন টিকিট পাবেন, আদৌ পাবেন কি-না তা নিয়ে অনেকে সন্দিহান হলেও লাইনে অপেক্ষা করছেন। সবার একটাই কথা, করোনা ঝুঁকি থাকলেও বাবা-মা, ভাইবোনের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি যেতে হবে।
Advertisement
এদিকে করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব (দুই ফুট দূরত্ব) বজায় রেখে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দাঁড়ানোর পরামর্শ থাকলেও বাস্তবে দুই ফুট তো দূরের কথা গায়ের সঙ্গে গা ঘেঁষে কমলাপুর রেলস্টেশন সবাই দাঁড়িয়ে আছেন। বেশিরভাগ মানুষের মুখে মাস্ক থাকলেও কেউ থুতনির নিচে আবার কেউ কানের পাশে ঝুলিয়ে রেখেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ট্রেনের জন্য ভোর ৬টায় লাইনে দাঁড়িয়েছেন শাহাজাদা নামের এক যুবক। তিনি রাজধানীর গুলিস্তানে একটি জুতার দোকানে কাজ করেন। মানুষের ভিড়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ঘামছিলেন।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘এখানে যেভাবে মানুষ গায়ের সঙ্গে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে, কেউ মাস্ক পরেছে কেউ পরেনি, এমন অবস্থায় ট্রেন ভ্রমণেই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।’
তবুও কেন যাচ্ছেন বলতেই তার তড়িৎ জবাব, সারা বছর চাকরির ব্যস্ততায় দিন কাটে। ঈদের সময়ই শুধু ছুটি পান। তাই পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে যাচ্ছেন।
Advertisement
কমলাপুর রেলস্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘তারা সরকারি নির্দেশনা মেনে ৫০ শতাংশ অর্থাৎ অর্ধেক সংখ্যক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী পরিবহন করছেন। ঢাকা থেকে ২৫ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন ও ৯ জোড়া কমিউটার ট্রেনে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে।’
তিনি জানান, লকডাউন শিথিলের পর ১৫ জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত ট্রেনে আনুমানিক এক লাখ থেকে সোয়া লাখ মানুষ গ্রামে গেছেন। ঈদের আগে সোম ও মঙ্গলবার কমিউটার ট্রেনের যাত্রী অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে।
এমইউ/জেডএইচ/জেআইএম