দেশজুড়ে

নোয়াখালীতে কামারশিল্পে দুর্দিন, পেশা পরিবর্তন করছেন অনেকেই

কাঁচা লোহা, উৎপাদনের উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি, উৎপাদিত পণ্যের মূল্য হ্রাস, ইস্পাতনির্মিত মেশিনে তৈরি জিনিসপত্রের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতা ও অর্থাভাবসহ নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দুর্দিন পার করছেন নোয়াখালীর কামারশিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। এতে করে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কামারশালা। ফলে পৈত্রিক পেশায় নিয়োজিত কামাররা পড়েছেন চরম বিপাকে। এতে বাধ্য হয়ে অনেকে পেশাই ছেড়ে দিচ্ছেন। আবার যারা আঁকড়ে ধরে আছেন তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

Advertisement

রোববার (১৮ জুলাই) বিকেলে কথা হয় নোয়াখালীর দত্তবাড়ির মোড়ের ষাটোর্ধ্ব উত্তম কর্মকারের সঙ্গে। পড়ন্ত বিকেলে চোখে-মুখে ক্লান্তির চাপ বয়সের ভারে ন্যুব্জ উত্তমের। এক হাতে হাফরের চেইন টানছেন অন্য হাতে হাতুড়ি দিয়ে কাঁচা লোহা পিটিয়ে তৈরি করছেন দা, ছুরি, চাপাতি, বটি, ধামাসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি।

কাজের ফাঁকে উত্তম কর্মকার জাগো নিউজকে জানান, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া এ পেশায় কাজ করছেন বিগত ৪০ বছর যাবৎ। এত বছর দোকানের আয়ে ভালই চলছিল সংসার। বিশেষ করে প্রতিবছর ঈদুল আজহার সময় চরম ব্যস্ততায় দিন কাটতো তাদের। করোনার প্রভাবে গত বছর থেকে খুব খারাপ সময় যাচ্ছে। চরম আর্থিক অনটনে ভুগছেন এ পেশায় জড়িত প্রায় প্রতিটি ব্যক্তি।

জানা গেছে, জেলায় প্রায় তিন শতাধিক কামার রয়েছে। এবার নোয়াখালীতে প্রায় এক মাস লকডাউন থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। আগের মতো নেই কর্মব্যস্ততা। অভাব অনটনে কাটছে তাদের দিনকাল। অথচ দুই বছর আগে এসময় কামারপাড়ায় জমজমাট দা, ছুরি, বটি বিক্রি ও সান দেয়ার ধুম ছিল।

Advertisement

একই রকম অভিযোগ মাইজদী বাজারের রতন কর্মকারের। তিনি বলেন, ‘প্রায় ৩০ বছর যাবৎ এ পেশায় থাকলেও এ রকম পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি কখনো। গত বছর থেকে আয়-রোজগার নেই বললেই চলে। কাজের চাপও তেমন একটা নেই।’

রতন আরও বলেন, ‘পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে মানুষের মধ্যে তেমন কর্মব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে না। করোনা সংক্রমণের পূর্বে ঈদের আগের দিনগুলোতে যে আয় হতো সেগুলো নিয়ে বছর পার করে দেয়া যেতো। আর এখন তার এক তৃতীয়াংশও আয় হচ্ছে না।’

পার্শ্ববর্তী কর্মকার সুনিল বলেন, ‘আমরা যারা পৈত্রিক পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছি, সবাই খুব কষ্টে আছি। বিভিন্ন স্থান থেকে কয়লা সংগ্রহ করে সকাল থেকেই কাজ শুরু হয়, চলে রাত অবধি। শারীরিক ও কায়িক পরিশ্রম করে লোহার যে সমস্ত জিনিস তৈরি করি তা বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করে লাভ হয় খুব সামান্য। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকা খুবই কষ্টকর।’

তবে ভিন্ন রকম অভিযোগ দত্তেরহাটের কর্মকার উজ্জ্বল দাশের। তিনি বলেন, ‘নোয়াখালীর প্রধান শহর মাইজদী ও তার আশপাশে ২০ থেকে ২৫টি কামারের দোকান রয়েছে। শহরের রাস্তায় ফোর লেনের কাজ শুরু হওয়ায় অধিকাংশ দোকানঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে। নতুন করে কোথাও ঘরও ভাড়া পাচ্ছি না। ফলে রাস্তার ধারে তাবু টাঙিয়েই কাজ করতে হচ্ছে।’

Advertisement

আক্ষেপের সুরে মাইজদী বাজারের কর্মকার স্বপন বলেন, ‘এই আদি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে এবং আমাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য সহজ শর্তে ঋণ নিতে সরকারের সহযোগিতা চাই। তাহলেই পরিবার-পরিজন নিয়ে আমরা বেঁচে থাকতে পারবো।’

ইকবাল হোসেন মজনু/ইএ/জিকেএস