বাংলাদেশি-আমেরিকান ড. রায়ান সাদীর উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের ওষুধ টিভিজিএন-৪৮৯ ও সাইটোটক্সিক টি লিম্ফোসাইটস’র ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)। ১২ জুলাই থেকে এ ট্রায়াল শুরু হয়েছে।
Advertisement
ড. রায়ান সাদী নিউজার্সিতে অবস্থিত বায়ো-টেকনোলজি কোম্পানি ‘টেভোজেন বায়ো’র সিইও এবং গবেষণা টিমের প্রধান। করোনার প্রকোপ শুরুর পরই তিনি ওষুধ আবিষ্কারে মনোনিবেশ করেন।
ড. রায়ান সাদী ঈশ্বরদীর সাহাপুর গ্রামের মরহুম তৈয়ব হোসেনের ছেলে। ছোট বেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। এইচএসসি পাশের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিএস পাশ করেন। এরপর তিনি পাড়ি জমান আমেরিকায়।
ড. রায়ান সাদীর উদ্ধৃতি দিয়ে তার ভাই পাবনার ঈশ্বরদী পাকুড়িয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মো. আবু হেনা জানান, আগে থেকেই তিনি ক্যান্সার চিকিৎসার সবচেয়ে বেশি কার্যকর ওষুধের গবেষণা করছিলেন। সেটিকে করোনাভাইরাস নির্মূলের দিকে ধাবিত করেন। গত বছরের অক্টোবরে তার গবেষণা শেষ হয় এবং এফডিএর অনুমতির আবেদন করেছিলেন। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী এফডিএ পর্যবেক্ষণ-বিশ্লেষণ শেষে এটি করোনা নির্মূলে ভূমিকা রাখবে কি-না তা যাচাইয়ের জন্যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে পাঠিয়েছে। সেই অনুযায়ী ১২ জুলাই ‘টেভোজেন-বায়ো’ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের। এই ট্রায়ালের মাধ্যমে ‘টিভিজিএন-৪৮৯’ মানবদেহের জন্য কতটা নিরাপদ তা নিশ্চিত হতে চায় এফডিএ।
Advertisement
আবু হেনা আরও জানান, করোনা রোগীকে সারিয়ে তোলার এই ওষুধ ব্যবহারের জন্য এফডিএর অনুমতি পাওয়ার পর তা বাংলাদেশ যদি চায় ড. সাদী তা বিনামূল্যে দেবেন। তবে বাংলাদেশে তা যথাযথভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকা এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকের প্রয়োজন হবে। সেল থেরাপি দেয়ার মতো আনুষঙ্গিক সামগ্রীর পাশাপাশি এইচএলএ টেস্টিং মেশিনও লাগবে। বাংলাদেশের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও তিনি করে দেবেন তার খরচেই।
ড. সাদীর বরাত দিয়ে শিক্ষক আবু হেনা জানান, সার্স-সিওভি-২’র সংক্রমণ রোধে সক্ষম কোষগুলোকে আরও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে সেল-থেরাপি অপরিসীম ভূমিকা রাখবে। সেল থেরাপির মাধ্যমে মহামারি দেখা দেয়া অঞ্চলেও এই ওষুধের সুফল মিলবে। এই ওষুধ কোষে সংক্রমিত হওয়া ভাইরাসকে একেবারেই নিঃশেষ করবে। ফলে রোগী স্বল্প সময়ে আরোগ্য লাভে সক্ষম হবে।
আবিষ্কৃত ওষুধ টিভিজিএন-৪৮৯ প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী সাদীর বরাত দিয়ে আবু হেনা জানান, এটি ভাইরাসের গতি-বিধি চিহ্নিত করতে পারে এবং তা মেরে ফেলে সুস্থ মানুষের কোষের ন্যায় অর্থাৎ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নতুন কোষ সৃষ্টিতে সক্ষম হবে। এরইমধ্যে পরিচালিত পর্যবেক্ষণ জরিপে (প্রি-ক্লিনিক্যাল) ড. রায়ানের গবেষণা টিম নিশ্চিত হয়েছেন।
করোনা যেভাবে আর যে নামেই আবির্ভূত হোক না কেন, সেই ভাইরাসকে চিরতরে নির্মূলে সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন এই টিভিজিএন-৪৮৯-ওষুধ আবিষ্কারে নেপথ্য পৃষ্ঠপোষক বিশ্বখ্যাত সেল-থেরাপি বিশেষজ্ঞ এবং ফিলাডেলফিয়ার থমাস জেফারসন ইউনিভার্সিটির মেডিকেল অনকোলজি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান ড. নীল ফ্লোমেনবার্গ।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে আমরা এই ওষুধকে নিরাপদ ভাবতে পারি। এখন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেও তা সব ধরনের ভাইরাসকে নির্মূলে কার্যকর ভূমিকা রাখবে-এটাই প্রমাণিত হবে বলে আশা করছি।’
৭০ বছরেরও অধিক বয়সের রোগী, ডায়াবেটিকস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত এবং করোনায় সংক্রমিত হবার প্রচণ্ড ঝুঁকিতে থাকা ১৮ বছরের অধিক বয়সী সব মানুষ এবং আগে থেকেই জটিল রোগে আক্রান্ত এখন করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন এমন রোগীর ওপর ট্রায়াল চালানো হবে বলে জানিয়েছেন ড. সাদী।
আমিন ইসলাম/এসজে/জেআইএম