একটি বাড়িতেই বছরখানেক কেউ না থাকলে মানুষ ভূতের ভয়ে সেখানে যান না। আর ৮০ বছর বছর ধরে একটি গ্রাম জনশূন্য হয়ে আছে। সেখানে গাছ-পালা, মসজিদ, ঈদগাহ, পুকুরসহ বাড়ি-ঘর সবই আছে; শুধু নেই মানুষ।
Advertisement
রহস্যময়ভাবে ঝিনাইদহের এই গ্রামটি লোকশূন্য হয়ে পড়ে আছে ৮০ বছর ধরে। ভূতের ভয়ে দিনের বেলায়ও কেউ এই গ্রামের ত্রিসীমানায় ঢুকেন না। ঝিনাইদহের এই গ্রামটির নাম মঙ্গলপুর। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নে এ গ্রামটির অবস্থান।
সরকারি নথিতেও এই গ্রামের অস্তিত্ব আছে; শুধু নেই কোনো মানুষের কোলাহল। ইতিহাস অনুসারে, মহামারি কলেরা রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার কারণে এই গ্রামের মানুষেরা অন্যান্য এলাকায় আশ্রয় গ্রহণ করেন।
তখন থেকেই মঙ্গলপুর গ্রাম অমঙ্গল হিসেবে মানুষের মুখে মুখে রটে যায়। মহামারির কারণে জনশূন্য গ্রাম থেকে অবশিষ্টরাও একসময় ভয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যান। এখনো গ্রামজুড়ে আছে ধান, ফসলি জমিসহ পুকুর ভরা মাছ। শুধূ মানুষেরই দেখা নেই সেখানে।
Advertisement
তবে ব্যক্তি মালিকানায় সেখানে যাদের জমি ও পুকুর আছে; তারা দিনের বেলায় সেখানে গিয়ে চাষ করেন। তাও আবার কয়েকজন একসঙ্গে চাষের কাজে যান গ্রামটিতে। একা একা কেউ মঙ্গলপুর গ্রামে ঢোকার সাহসটুকু পর্যন্তও পান না।
এ গ্রামের জনশূন্যতার বিষয়ে কোটচাঁদপুর এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, অতীতে মঙ্গলপুর গ্রামের অধিকাংশ মানুষ হিন্দু সম্প্রদায়ের ছিল। গ্রামে যখন কলেরা মহামারি আকার ধারণ করে তখন অনেক মানুষ মারা যান। এরপর থেকেই গ্রামটি অমঙ্গল হিসেবে রটে যায় লোকমুখে।
ইতিহাস অনুযায়ী জানা যায়, মঙ্গলপুর গ্রামে মঙ্গল পাঠান নামের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। তার নাম অনুসারেই গ্রামটির নামকরণ করা হয়। তিন একর জমির উপর এই প্রভাবশালী ব্যক্তির ছিলো বিশাল এক বাড়ি। বাড়ির চারদিকে তিনি উঁচু করে ৩০-৪০ ইঞ্চি চওড়া মাটির প্রাচীর ছিল।
বিশাল এই বাড়ির প্রাচীর এতোটাই উঁচু ছিলো যে, বাইরে দাঁড়িয়ে বাড়ির ভেতরের কাউকে দেখা যেত না। মঙ্গল পাঠানের পরিবার ছিল আবার খুবই পর্দাশীল। বাড়ির মেয়েরা কখনো বাইরে বের হতো না।
Advertisement
এমনকি বাইরের কোনো পুরুষের সঙ্গে দেখাও দিতেন না। মঙ্গল পাঠান একসময় সেখানেই মারা যান। তার কবর এখনো আছে মঙ্গলপুর গ্রামে। তবে এক সময়ের কোলাহলমুখর গ্রামটি কী কারণে মানবশূন্য হয়ে পড়েছে তা জানা নেই কারও।
তবে মঙ্গলপুর গ্রামের অমঙ্গল কাটিয়ে ৮০ বছর পর সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন করে মানুষের বসতি শুরু হতে যাচ্ছে। মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে গ্রামটিতে নির্মাণ করা হচ্ছে সাতটি ভূমিহীন পরিবারের জন্য ঘর।
কর্মকর্তারা বলছেন, এরই মধ্যে ওই গ্রামে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়েছে। মাস খানেকের মধ্যে ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের কাজ শেষ হবে। সাতটি ভূমিহীন পরিবারকে এই ঘর দেওয়া হবে। তারা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবেন।
জেএমএস/জিকেএস