জাতীয়

ট্রেনে ঈদযাত্রায় কমলাপুরে নেই হুড়োহুড়ি

বিধিনিষেধ শিথিল করায় অন্যান্য পরিবহনের মতে ট্রেনেও ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে। তবে ঈদযাত্রায় অন্যান্য সময়ের মতো যাত্রীদের হুড়োহুড়ি নেই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে।

Advertisement

শনিবার (১৭ জুলাই) সকাল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, অনলাইনে টিকিট কাটা ও টিকিট ছাড়া স্টেশনে প্রবেশ করতে না দেয়ার কারণে স্টেশনে হুড়োহুড়ি নেই।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে ট্রেন। শনিবার সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কমলাপুর স্টেশনে যাত্রী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সব ট্রেনই সময়মতো প্রবেশ এবং স্টেশন ত্যাগ করেছে।

আগামী ২১ জুলাই বুধবার দেশে মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন, জনসাধারণের যাতায়াত, ঈদ পূর্ববর্তী ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে গত ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে আগামী ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করেছে সরকার।

Advertisement

বৃহস্পতিবার থেকে অন্যান্য গণপরিবহনের মতো অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচলও শুরু হয়। তবে অনলাইনে সংগ্রহ করতে হচ্ছে ট্রেনের টিকিট, কাউন্টার থেকে কোনো টিকিট দেয়া হচ্ছে না। অন্যান্য গণপরিবহনের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানো হলেও ট্রেনে রাখা হচ্ছে আগের ভাড়াই।

শনিবার সকালে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, টিকিট চেক করে যাত্রীদের স্টেশনে প্রবেশ করানো হচ্ছে। সঙ্গে হ্যান্ড মাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য যাত্রীদের অনুরোধ জানানো হচ্ছে। পুরো স্টেশন জুড়ে ছড়িয়ে আছেন রোবার স্কাউটের সদস্যরা। কারো মুখে মাস্ক না থাকলে মাস্ক পরার অনুরোধ জানাচ্ছিলেন তারা। স্বাস্থ্যবিধি মানা সংক্রান্ত বিভিন্ন স্লোগানের ফেস্টুনও দেখা গেছে তাদের হাতে। যাত্রী প্রবেশ মুখেই রাখা আছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার।

কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসের যাত্রী মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘সপরিবারে ঈদে বাড়ি যাচ্ছি। ভিড় এড়াতে একটু আগেভাগেই যাচ্ছি। অনলাইনে টিকিট কেটেছি, তেমন সমস্যা হয়নি। সাড়ে ১০টার দিকে ট্রেন।’

জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসে ছেলেকে নিয়ে সিলেট যাবেন শাহরিয়ার হোসাইন। তিনি বলেন, ‘আমার ট্রেনের সময় বেলা সাড়ে ১১টা। সময়মতোই ছাড়ছে ট্রেন, তাই আগেভাগেই চলে এলাম। স্টেশনে খুব বেশি ভিড় নেই। হুড়োহুড়ি নেই। ভালই লাগছে।’

Advertisement

সকাল পৌঁনে ১০টার দিকে স্টেশনে থাকা একতা এক্সপ্রেসে দেখা গেছে, সেভাবে যাত্রীদের ভিড় নেই। যাত্রীরা এক সিট ফাঁকা রেখে বসেছেন।

তবে অনেকে আন্তঃনগর ট্রেনে যাতায়ায়াতের জন্য অনলাইনে টিকিট পাচ্ছেন না। আর কমিউটার ট্রেনে স্বাস্থ্যবিধিও সেভাবে মানা হচ্ছে না। গাদাগাড়ি করে ভ্রমণ করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।

এ ছাড়া কমলাপুর স্টেশনে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ট্রেনের টিকিট কাউন্টারে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঈদকে সামনে রেখে নিরাপদ রেল ভ্রমণ উপহার দিতে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের। আমরা সেটা মানছি। মানুষকে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মানাতে পেরেছি।’

তিনি বলেন, ‘ঈদের সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্কাউট, রেলের লোকজন মিলে মোটামুটি সুন্দর জার্নি উপহার দেয়ার চেষ্টা করছি।’

এক সিট খালি রেখে যাত্রী পরিবহন করায় আন্তঃনগর ট্রেনের অনেকে টিকিট পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। তবে কমিউটারে ট্রেনে গাদাগাদি করে যাত্রী যাচ্ছে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার চাইলে সব ট্রেন চালাতে পারতো, তবে মানুষকে ঘরে রাখতে চাই আমরা। টিকিট সংগ্রহ কষ্টসাধ্য হলে সে ঘরে থাকবে। জীবনে ঈদ অনেক করা যাবে। এটাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। আগামী দিনগুলোতেও আমরা কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবো। যত ভিড়ই থাকুক বিনা টিকিটে, বিনা মাস্কে কেউ ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারবে না।’

বিধিনিষেধ শিথিলের সময় আটদিন সারাদেশে ৩৮ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন, ১৯ জোড়া মেইল কমিউটার ট্রেন চলাচল করবে বলেও জানান তিনি।

স্টেশন ম্যানেজার বলেন, ‘গত তিনদিন ধরে এই প্রেক্ষাপটে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেনি। সময়মতো ট্রেন স্টেশনে আসছে, স্টেশন ছেড়ে যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার থেকেই ঈদের যাত্রী পরিবহন শুরু হয়েছে। যাত্রীর চাপ সামনে আরও বাড়বে।’

‘যেহেতু কেউ টিকিট ছাড়া স্টেশনে ঢুকতে পারছে না তাই স্টেশনে হুড়োহুড়ি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’ যোগ করেন তিনি।

শনিবার ঢাকা থেকে ২৫ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন এবং ৯ জোড়া কমিউটার ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করবে। এসব ট্রেনে প্রায় ২০ হাজারর যাত্রী পরিবহন করা হবে। ২২ জুলাই পর্যন্ত এভাবেই চলবে বলেও জানান স্টেশন ম্যানেজার।

আরএমএম/ইএ/এমএস