দেশজুড়ে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অক্সিজেন সঙ্কটে করোনা ইউনিটে রোগীদের হৈচৈ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে জেলার একমাত্র করোনা আইসোলেশন সেন্টারে সময় মতো অক্সিজেন সরবরাহ না পেয়ে রোগীরা আতঙ্কে হৈচৈ শুরু করেন।

Advertisement

শুক্রবার (১৬ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে এই ঘটনা ঘটে।

এই হাসপাতালের নিচতলায় আইসোলেশনে থাকা সাইমা খন্দকার নামে এক রোগী অভিযোগ করে বলেন, ‘চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে আমি এই হাসপাতালের আইসোলেশনে আছি। আজ বিকেলে আমার অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল কমে ৮৬ হয়ে যায়। এরপরও স্যাচুরেশন কমতে থাকে। এই অবস্থায় আইসোলেশনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্সকে অক্সিজেন দিতে বললে তিনি বলেন, “আমি কী করতে পারি, অক্সিজেন সিলিন্ডার নাই।” তখন আমি বলেছি, তাহলে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ইউনিট অন করেন। কিন্তু আমার কথার উত্তর না দিয়ে তিনি চলে গেলেন। তিনি কিছুই করলেন না।’

সেখানে ভর্তি জাকিয়া ইসলাম আরেফিন নামে আরেক রোগী বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় আইসোলেশনে ভর্তি হয়েছি। আজ বিকেলে আইসোলেশনে অক্সিজেন ছিল না। আমরা নার্সকে বলার পরও অক্সিজেনের ব্যবস্থা করেননি। এর আধা ঘণ্টা পর অক্সিজেন সিলিন্ডার দেয়।’

Advertisement

জানা গেছে, ঘটনার সময় প্রায় ৩০ মিনিট অক্সিজেন না থাকায় হাসপাতালের নিচতলায় আইসোলেশনে থাকা রোগীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। উত্তেজিত হয়ে হৈচৈ শুরু করেন তারা। সন্ধ্যা প্রায় ৬টার দিকে আইসোলেশনের নিচতলার ইউনিটে অক্সিজেনের সিলিন্ডার সরবরাহ করা হয়।

এ সময় হাসপাতালের নিচতলায় আইসোলেশনের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র স্টাফ নার্স নাজমীন বলেন, ‘আইসোলেশনে যে অক্সিজেন সিলিন্ডার ছিল তা অন্যান্য রোগীরা ব্যবহার করছিলেন। পাশাপাশি সেন্ট্রাল অক্সিজেন শেষ হয়ে যাওয়ায় সিলিন্ডার বদল করা হচ্ছিল। দুইজন রোগী অক্সিজেন চাওয়ায় তাদের তখন দেয়া যাচ্ছিল না। সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাগাতে যতটুকু সময় লেগেছিল, শুধু সেই সময় অক্সিজেন দেয়া যাচ্ছিল না। এ নিয়ে তারা হৈচৈ করেছিল।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘বিকেলে আইসোলেশন ওয়ার্ডে অক্সিজেনের সঙ্কটের বিষয়টি আমি অবগত নই। প্রায় প্রতিদিনই পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার হাসপাতালে আনা হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও অক্সিজেন আনা হবে।’

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত বছর করোনা সংক্রমণের শুরুতে জেলা শহরের মেড্ডা বক্ষব্যাধী ক্লিনিক ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক ওয়ার্ডকে করোনা আইসোলেশন ইউনিট হিসেবে রূপান্তর করা হয়। মাঝে করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের ইউনিটটি সাময়িক বন্ধ করে দেয়া হয়। গত জুন মাসে হাসপাতালে নতুন তত্ত্বাবধায়ক যোগদান করার পর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের নিচতলায় পেয়িং বেডকে আইসোলেশনে যুক্ত করেন। এখন আইসোলেশনের শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে ৭৫টি করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ৫১ জন করোনা রোগী আইসোলেশনে ভর্তি রয়েছেন।

Advertisement

এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যার আসা ফলাফলে জানা যায়, জেলায় নতুন আরও ৭৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৩৭৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৯৮৬ জন। এছাড়া করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলায় মারা গেছেন ৭৬ জন।

আবুল হাসনাত মো. রাফি/এমআরআর/জেআইএম