অর্থনীতি

‘কারখানা বন্ধ থাকলে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে বিপর্যয় নামবে’

সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশও ধুঁকছে মহামারি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯)। প্রাণঘাতী এই মহামারি অর্থনীতিতে যেমন স্থবিরতা নামিয়েছে, তেমনি জীবনযাত্রায় দিয়েছে ধাক্কা। তবে মহামারিকালেই দেশের কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের ইতিহাসে হয়েছে সর্বোচ্চ রফতানি আয়ের রেকর্ড। সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে (২০২০-২১) এ শিল্পের রফতানি আয় ১০০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক পার করেছে, যার মধ্যে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের হিস্যাই বেশি। মহামারির মধ্যে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের এ অনবদ্য অবদান থাকলেও সংশ্লিষ্টরা ভাবছেন আসন্ন কঠোর বিধিনিষেধ নিয়ে। সরকারের ঘোষণা অনুসারে ২৩ জুলাই থেকে কঠোর বিধিনিষেধে সব ধরনের শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে কঠিন বিপর্যয় নামবে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে। এক্ষেত্রে খাদ্য নিরাপত্তাকেন্দ্রিক বাস্তবতা মাথায় নিয়ে সরকারকে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

Advertisement

কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাগ্রো-প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ করোনাকালে মানুষ প্রথম প্রাধান্য দিচ্ছে খাদ্য নিশ্চিত করার বিষয়টিকে। করোনার সময় আগে কখনো খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প বন্ধ করা হয়নি। এ সময় এ খাতে কোনো কর্মীও ছাঁটাই হয়নি। বরং উৎপাদন চালু থাকায় খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়নি। এখন দীর্ঘসময়ের জন্য কারখানা বন্ধ থাকলে এ অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে এবং বর্তমান অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না। যারা রফতানি করছেন তারা বিদেশি ক্রেতা হারাবেন।’

ইকতাদুল হক বলেন, ‘দেশে করোনার প্রকোপ থাকলেও প্রধান রফতানিবাজার ইউরোপ, আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশে করোনার প্রকোপ নেই। এমনকি ভারতেও করোনা কমে এসেছে। সবাই এখন তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে জোর দিচ্ছে। নতুন নতুন ক্রেতা এবং অর্ডার আসছে।’

বাপার তথ্য বলছে, সংগঠনটির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৫৬৯। এর মধ্যে দেশে তিন শতাধিক উদ্যোক্তা সক্রিয়ভাবে উৎপাদন কার্যক্রম চালু রেখেছে। যার মধ্যে ৭০-এর বেশি বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর রফতানি করছে শতাধিক প্রতিষ্ঠান।

Advertisement

প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ থমকে গেলে তার প্রভাব পড়তে পারে মানুষের জীবনযাত্রায়

এছাড়া, বাপার সদস্যদের বাইরে ছোট-বড় মিলিয়ে ২০ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে জড়িত। দেশের ২০ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ কাজে জড়িত। প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য খাত বাংলাদেশের জিডিপিতে ২ শতাংশেরও বেশি অবদান রাখছে।

বাপা সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘অন্যান্য শিল্প কারখানা শহরমুখী হলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব খাদ্যপণ্যের কারখানা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত। যেখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব খুব কম। ফলে এসব কারখানা খোলা রাখলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎপাদন চালু রাখা যাবে।’

তিনি মনে করেন, এসব কারখানা বন্ধ থাকলে নিম্নআয়ের শ্রমিকরা কর্ম হারানোর শঙ্কায় পড়বেন। আর এ বন্ধের সময়টা দীর্ঘ হলে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান থমকে যাবে। যে সমস্যা অন্যান্য খাতে হলেও এতদিন কৃষি প্রক্রিয়াকরণ খাতে ছিল না।

Advertisement

ইকতাদুল হক বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে লকডাউনের সময় বিশেষ বিবেচনায় অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য উৎপাদন চালু রাখতে সরকারের কাছে আহ্বান জানানো হয়েছে। আমরা জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত আবেদন করেছি।’

সদ্যসমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের রফতানি আয় ১০০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক পার করেছে

সঙ্কটের আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘শুধু কারখানা বন্ধে আমাদের সমস্যা নয়। দেশে প্রচুর কৃষিপণ্য, দুধ, ডিম,মাংসসহ অন্যান্য খাদ্য নষ্ট হয়ে যাবে এ সময় প্রক্রিয়াকরণ বন্ধ থাকলে। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য উৎপাদন, বিপণন ও রফতানি বন্ধ থাকলে ভোক্তার কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য পৌঁছানো সম্ভব হবে না। ফলে দেশে ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষক ও খামারিরা ব্যাপক লোকসানে পড়বে।’

খরচের একটি দিক তুলে ধরে ইকতাদুল হক বলেন, ‘এমনিতে করোনার সময় অন্যান্য শিল্পের মতো কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প কন্টেইনার ভাড়ার কারণে দারুণ বিপর্যয়ে ছিল। আগের তুলনায় এখন এ ভাড়া ১০ গুন বেড়েছে। অনেক পণ্য এজন্য রফতানি করা যাচ্ছে না। আমরা বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। এ পরিস্থিতি নিয়ে আমরা এখনো বিপর্যস্ত।’

প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ১৪ দিনের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ১৩ জুলাইয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এ সময় সব ধরনের কলকারখানা বন্ধ থাকবে।

অবশ্য বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসানের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ব্যবসায়ীরা। সেখানে তারা কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে শিল্প কারখানা খোলা রাখার দাবি জানান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান সাংবাদিকদের জানান, সরকারের পক্ষ থেকে আগামী শনিবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

এনএইচ/এসএস/এইচএ/জেআইএম