এই ছবিটিই ইতিহাসে ‘কিস অব লাইফ’ হিসেবে পরিচিত। ছবিটি আজও সেদিনের ভয়াবহ কাহিনী মনে করিয়ে দেয় সবাইকে। ১৯৬৭ সালের ১৭ জুলাই, ফ্লোরিডার এক ফটোগ্রাফার রোকো মোরাবিটো তার ক্যামারায় ঐতিহাসিক এক মুহূর্ত বন্দী করেন।
Advertisement
যদিও তখন তিনি বুঝতে পারেনি, তার তোলা ছবিটি ঐতিহাসিক হতে চলেছে! দুইজন ইলেকট্রিক লাইনম্যান ছিলেন এই ছবিটির সাবজেক্ট। হৃদয় বিদারক ‘লাইফ অব কিস’ ছবিটি ছবিটি ১৯৬৮ সালে পুলিৎজার পুরস্কার জিতে।
এই ছবিটি দেখলে হয়তো অনেকেই নানান মন্তব্য পোষণ করতে পারেন। তবে এর পিছনের গল্পটি জানলে আপনার চোখ দিয়ে পানি ঝরতে পারে! জীবন বাঁচাতে অনেক সময় কোটি কোটি টাকা নয়, একটি চুমুও যথেষ্ট!
ইলেকট্রিক লাইনের কাজ করতে গিয়ে সেদিন মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার এক বন্ধুর জীবন বাঁচাতে অন্যজন ঝুলন্ত অবস্থাতেই প্রাণপনে চেষ্টা করে যান। সেদিন কী ঘটেছিলো? পরবর্তীতে ফটোগ্রাফার রোকো মোরাবিটো জানিয়েছিলেন সেই ভয়াবহ মুহূর্তে কাহিনী।
Advertisement
সেদিন বিকেলে এই ফটোগ্রাফার ট্রেন শ্রমিকদের ধর্মঘটে ছবি তুলতে গিয়েছিলেন। দুপুরের দিকে পত্রিকা অফিসে ফেরত যাওয়ার পথে হঠাৎই তিনি আকাশের দিকে তাকালেন। দেখলেন জ্যাকসনভিলে ইলেকট্রিক অথরিটির(জেএ) বেশ কয়েকজন লাইনম্যান বিদ্যুতের খুঁটিতে কাজ করছেন।
ফটোগ্রাফার রোকো তখন তার ক্যামেরা বের করে বিদ্যুতের খুঁটিতে কাজ করা লাইনম্যানদের ছবি তোলার জন্য ফ্রেম ঠিক করতে লাগলেন। সবে রোকো তার ক্যামেরার লেন্সে চোখ রেখে ফ্রেম ঠিক করছেন; ওই মুহূর্তে হঠাৎ লাইনম্যানদের মধ্যে একজন জোরে চিৎকার উঠল।
হঠাৎ একজন খুঁটি থেকে ছিটকে পড়লো। যেহেতু খুঁটির সঙ্গে তার কোমরে বেল্ট লাগানো ছিলো, তাই সে মাটিতে না পড়ে বরং উল্টে গিয়েছিলেন। ৪০০০ ভোল্টের কারেন্ট শক লেগে মুহূর্তেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন এই লাইনম্যান।
তার নাম র্যান্ডাল চ্যাম্পিয়ন। তার এই ভয়াবহ অবস্থা দেখে বিভিন্ন ইলেকট্রিক খুঁটিতে কর্মরত ব্যক্তিরা হইচই শুরু করে দেন। ফটোগ্রাফার রোকো এই দৃশ্য দেখে দ্রুত তার অফিসে রেডিওর মাধ্যমে জানান ওই স্থানে একটি অ্যাম্বুলেন্স পাঠাতে।
Advertisement
এর মধ্যেই চ্যাম্পিয়নের জীবন সংকটে থাকতে দেখে, তার বন্ধু জেডি থম্পসন এগিয়ে যান তার কাছে। চ্যাম্পিয়নের খুঁটি থেকে তার দূরত্ব ছিলো ৪০০ ফুট। দ্রুততার সঙ্গে থম্পসন বন্ধুকে বাঁচাতে ওই খুঁটিতে গিয়ে নিজেকে শক্ত করে বেঁধে ফেলেন।
তারপর দেখেন, চ্যাম্পিয়নের হাতের চারটি আঙ্গুল বৈদ্যুতিক শক লাগার কারণে কালো হয়ে গিয়েছে। এমনকি তার পুরো শরীর নীল হয়ে যাচ্ছে। বন্ধুকে বাঁচাতে থম্পসন তার প্রশিক্ষণের উপর নির্ভর করেন। বন্ধুর জ্ঞান ফেরাতে তার মুখের মধ্যে মুখ দিয়ে জোরা বাতাস দিতে থাকেন।
আর এ সময়ই ফটোগ্রাফার রোকো ঐতিহাসিক এই ছবিটি তোলেন। একসঙ্গে তিনি তখন ৫টি ছবি তুলেছিলেন। ততক্ষণে হুইজেল বাজাতে বাজাতে সেখানে আসে অ্যাম্বুলেন্স। পরবর্তীতে চ্যাম্পিয়নকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
অন্যদিকে ফটোগ্রাফার রোকো তার নিউজরুমে ফিরে গেলেন অসাধারণ এই ছবিটি নিয়ে। নিউজরুমে ফিরে, জ্যাকসনভিলি জার্নালের সম্পাদক ডিক ব্রুসার্ডকে এই ছবি দেখান রোকো। জার্নালের অনুলিপি সম্পাদক বব প্যাট একটি অনুপ্রেরণামূলক ক্যাপশনের ‘কিস অব লাইফ’ সঙ্গে ছবিটি ছাপান।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের মাধ্যমে রোকোর তোলা ছবিটি ফ্লোরিডাসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদপত্রগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। এর ১০ মাস পরে ফটোগ্রাফার রোকো পুলিৎজার পুরস্কার পান।
ঘটনার কিছুদিন পরেই লাইনম্যান র্যান্ডাল চ্যাম্পিয়ন সুস্থ হয়ে ওঠেন। চ্যাম্পিয়ন, থম্পসন এবং রোকো মোরাবিটো জ্যাকসনভিল জার্নালের শেষ দিনটিকে স্মরণ করে রাখতে ১৯৮৮ সালে জড়ো হয়েছিল। পরবর্তীতে র্যান্ডাল চ্যাম্পিয়ন ও জেডি থম্পসন টানা ৩০ বছর একসঙ্গে (জেএ) তে কাজ করেছিলেন।
সূত্র: অল দ্যাট ইন্টারেস্টিং
জেএমএস/জিকেএস