দেশজুড়ে

ব্যস্ততা নেই কুমিল্লার কামারশালায়

ঈদুল আজহা উপলক্ষে ব্যস্ততা বেড়ে যেত কামারপট্টিতে। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। কুমিল্লার চিরচেনা চকবাজারের কামারপট্টি ক্রেতা শূন্য।

Advertisement

করোনার প্রকোপ আর কঠোর বিধিনিষেধে কপাল পুড়েছে এসব কামারদের। বর্তমানে ক্রেতাদের আশায় বসে থেকে দিন শেষে খালি হাতে বাড়ি ফিরেন কামার দল। অনেকে আবার বন্ধ রেখেছেন দোকান। কেউ কেউ সঙ্কটে পড়ে বাপ-দাদার পুরনো এ পেশা পাল্টানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

নগরীর চকবাজার কামারপট্টিতে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকানেই কোরবানির গরু কাটার সরঞ্জাম তৈরি করে রেখেছেন কামার শিল্পীরা। তবে দেখা মিলছে না ক্রেতা। কামারপট্টিতে ক্রেতাদের পাদচারণা না থাকায় ঝিমিয়ে পড়েছেন দোকানিরা। গত এক দশকেও এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি তাদের। এমনটাই দাবি একাধিক কামার শিল্পীর।

এ দৃশ্য শুধু চকবাজারের কামারপট্টির নয়, নগরীর রাণীর বাজার, পদুয়ার বাজার, চৌয়ারা বাজারসহ জেলার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, বরুড়া, সদর দক্ষিণ, লালমাই, চান্দিনা, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, মুরাদনগর, দেবিদ্বার, দাউদকান্দি, হোমনা, তিতাস ও মেঘনা উপজেলার কামার শিল্পীদেরও। ঋণ নিয়ে আগাম মালামাল প্রস্তুত করলেও নেই বেচাকেনা।

Advertisement

কুমিল্লা নগরীর চকবাজারের কামারপট্টির সুমন কর্মকার, উত্তম কর্মকার, শ্যামল কর্মকারসহ অনেকেই জাগো নিউজকে জানান, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে নিঃস্ব হয়ে গেছেন তারা। এর মধ্যে আবার লকডাইন। সব মিলিয়ে বাজারে ক্রেতা না থাকায় বাড়ছে তাদের দুশ্চিন্তা। পুরো বছরের তুলনায় এ সময় সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হওয়া কথা। কিন্তু দেখা গেছে উল্টো চিত্র। সারাদিন বসে থেকে রাতে বাড়ি ফিরতে হয়ে খালি হাতে। ভরা মৌসুমেও বিক্রি না থাকায় পেশা পাল্টানো কথা জানালেন অনেকে।

মো. আনোয়ার হোসেন নামে এক ক্রেতার দেখা মেলে কামারপট্টিতে। তিনি জানালেন ভিন্ন কথা। তার মতে, এ বছর গরু জবাইয়ের সরঞ্জামের মূল্য সহনীয় পর্যায় নেই। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে দা-ছুরি। একটি চাপাতির দাম ১২০০ টা। যা গতবারের তুলনায় অনেক বেশি বলে জানান সাবেক এ ব্যাংক কর্মকর্তা। তবে বিক্রেতারা বললেন ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

কামারপট্টি ঘুরে দেখা গেছে, পুরনো দা, বঁটি ঝালাই দিতে মজুরি ৪০ থেকে ১২৫ টাকা। গরু জবাইয়ের বড় ছুরি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৭০০ থেকে ১২০০ টাকা, চাপাতি পাওয়া যায় ৪৫০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে। নিজেরা লোহা সরবরাহ করলে মজুরি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, প্রতি পিস বঁটি ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা, দা ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা। ছোট আকৃতির ছুরি ৫০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অমর কর্মকার নামে এক ব্যক্তি জানান, আগে ঈদের ১-২ মাস আগ থেকে কোরবানির কাজে ব্যবহৃত দা, ছুরি, বঁটিসহ সরঞ্জামাদি বানানো ব্যস্ততায় দিনরাত একাকার হয়ে যেতো। ঈদের বাকী আর মাত্র পাঁচদিন। এখনো কাজ নাই। বর্তমানে যারা কামার পেশায় রয়েছেন তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন বলে তিনি জানান।

Advertisement

জাহিদ পাটোয়ারী/জেডএইচ/এমএস