ধর্ম

কুরবানি না করে সমপরিমাণ টাকা গরিবদের দেওয়া যাবে কি?

সামর্থ্যবানদের জন্য কুরবানি দেওয়া ওয়াজিব। অনেককেই বলতে শোনা যায় যে, কুরবানি না দিয়ে এ টাকা গরিব-দুঃখী অসহায় মানুষের মাঝে দান করে দেওয়া উত্তম। আসলেই কুরবানি না করে গরিবদের মাঝে এ টাকা বণ্টন করা যাবে কি?

Advertisement

ইসলামি শরিয়তে কুরবানি না করে গরিব-দুঃখীকে দান-অনুদান দেয়ার কোনো অনুমোদন নেই এবং কোনো সুযোগও নেই। যদিও অনেকে মহামারি করোনার এ সময়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ অভাবের কথা চিন্তা করেই কুরবানি না করে তার অর্থ গরিবদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া কথা বলেছেন।

কুরআন সুন্নাহর দিকনির্দেশনার ভিত্তিতে প্রায় সব ওলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে একমত যে, সামর্থ্যবানদের জন্য কুরবানির পশু জবাই করাই ওয়াজিব। একান্তই কেউ যদি নির্ধারিত তিন দিন (১০, ১১ ও ১২ জিলহজ) কোনো কারণবশত কুরবানি করতে না পারে তবে কুরবানির দিনগুলো চলে যাওয়ার পর একটি বকরির মূল্য সদকা করা ওয়াজিব।

হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে কুরবানি (পশু জবাই) করেছেন।

Advertisement

ঈদুল আজহায় পশু কুরবানি করা একটি সুনির্দিষ্ট ইবাদত ও বিধান। এটি পালন করতে হয় নির্দিষ্ট সময় ১০ থেকে ১২ জিলহজের মধ্যে। এটা ওয়াজিব বিধান ও ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَلِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنسَكًا لِيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَى مَا رَزَقَهُم مِّن بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ فَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَلَهُ أَسْلِمُوا وَبَشِّرِ الْمُخْبِتِينَ

‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কুরবানি নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেওয়া চতুস্পদ জন্তু জবেহ কারার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। অতএব তোমাদের আল্লাহ তো একমাত্র আল্লাহ সুতরাং তাঁরই আজ্ঞাধীন থাক এবং বিনয়ীগণকে সুসংবাদ দাও।’ (সুরা হজ : আয়াত ৩৪)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো- ইয়া রাসূলাল্লাহ! কুরবানি জিনিসটা কী? জবাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, এটা হচ্ছে তোমাদের পিতা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত।’

Advertisement

এ গুরুত্বপূর্ণ বিধানটি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের জন্য জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত এই তিন দিন পালন করা ওয়াজিব।

মনে রাখতে হবে

কুরবানির চেয়ে টাকা দান করে দেওয়া যদি উত্তম হতো বা সুযোগ থাকতো তবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরবানিতে পশু জবাই না করে সে অর্থ গরিব-দুঃখী অসহায় মানুষের মাঝে দান করে দিতেন। তবেই প্রমাণিত হতো যে, অভাবের সময় কুরবানি না দিয়ে গরিব-দুঃখী ও অসহায়দের মাঝে কুরবানির অর্থ দান করে দেওয়াই সর্বোত্তম।

এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পশু জবাই করেছেন। শুধু পশু কুরবানি করেছেন তা-নয়; বরং, কুরবানির পশু তাঁর সাহাবিদের মধ্যে বণ্টন করে দিয়েছেন এবং সাহাবিদের উদ্দেশে বলেছেন যে, তোমরা (কুরবানি) জবাই কর।’ তিনি কিন্তু এ কথা বলেননি যে, তোমাদের মধ্যে সদকা করে দিয়েছি, তোমরা নিয়ে যাও। বরং জবাই করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

পশু কুরবানি করার ব্যাপারে হজরত হাসান বসরি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় তার সন্তুষ্টির জন্য কুরবানি হিসেবে একটি ছাগল জবাই করা আমার কাছে ১০০ দিরহাম আল্লাহর রাস্তায় সদকা করার চেয়েও উত্তম। কারণ আল্লাহর রাস্তায় এই রক্ত প্রবাহিত করার বিষয়টিকে আল্লাহ তাআলা ইসলামের একটি মৌলিক নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেছেন।’

সুতরাং সামর্থ্যবানদের জন্য এটি সুস্পষ্ট যে, কুরবানির টাকা গরিব-দুঃখীদের মাঝে বণ্টন নয়; বরং কুরবানি করাই উত্তম।

তবে একটি বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে...

যারা অন্যান্য বছরগুলোতে বেশি পরিমাণে কুরবানি করতেন; ইচ্ছা করলে তারা এবার বেশি কুরবানি বা অতিরিক্ত টাকা খরচ না করে; বাড়তি টাকা গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে পারেন। এটি করার সুযোগ রয়েছে। এতে কুরবানিও আদায় হবে আবার গরিব-অসহায় মানুষও সাহায্য পাবে।

এখন করোনা চলছে। এ সময়ে অন্য সময়ের চেয়ে বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কুরবানির হাটে ও কুরবানির সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সরকারিভাবে কুরবানির জন্য স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হলে; শৃঙ্খলার জন্য, পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখার জন্য নির্দেশ দিলে সেটাও মেনে চলা উচিত।

এমএমএস/জিকেএস