লাইফস্টাইল

চোখের ক্ষতি এড়িয়ে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের নিয়ম

কেউ চোখের সৌন্দর্য বাড়াতে ব্যবহার করেন কন্টাক্ট লেন্স; কেউ আবার চোখের সমস্যায় ব্যবহার করেন। বর্তমানে চোখে বিভিন্ন কালারের কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করে থাকেন নারী-পুরুষ সবাই। যদিও নারীরা এক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন। কনের সাজ থেকে শুরু করে ঘরোয়া সাজেও আজকাল সবাই কন্টাক্ট লেন্স পরে চোখের সৌন্দর্য বাড়াচ্ছেন।

Advertisement

তবে যে কারণেই লেন্স ব্যবহার করুন না কেন, মনে রাখতে হবে কয়েকটি বিষয়। না হলে আপনার চোখের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। ভুল উপায়ে এবং মানহীন লেন্স ব্যবহারের কারণে চোখ হতে পারে অন্ধ। তাই লেন্স পরার আগে কিছু বিষয় মানতে হবে।

কন্টাক্ট লেন্সের ব্যবহার শুরু হয় মূলত এই শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে। গত কয়েক দশকে এর গুণগত মান যেমন অনেক বেড়েছে; তেমনই এর ব্যবহার ও জনপ্রিয়তাও দ্বিগুণ বেড়েছে। যেহেতু লেন্সটি সরাসরি চোখের কন্টাক্টে থাকে, তাই এর নাম কন্টাক্ট লেন্স। ছানি অপারেশনে যে কৃত্রিম লেন্স (আইওএল) লাগানো হয়, সেটা চিরদিনের জন্য চোখের ভেতরে বসানো হয়। তাই কন্টাক্ট লেন্সের সঙ্গে কৃত্রিম লেন্সের কোনো মিল নেই।

কন্টাক্ট লেন্সের ধরন

Advertisement

হার্ড, সেমি সফট ও সফট এবং ডিসপোজ্যাবল এই চার ধরনের লেন্সই মূলত ব্যবহৃত হয়।

> হার্ড লেন্স হলো, এক ধরনের স্বচ্ছ প্লাস্টিক। এই লেন্সের ভেতর দিয়ে অক্সিজেন আসতে পারে না। সে জন্য চার ঘণ্টা পরপর খুলে ধুয়ে আবার পরতে হয়। হার্ড লেন্স আবার টেকে বেশি, দামে কম এবং অনেক পরিষ্কার।

> সেমি সফট লেন্স বা আরজিপি লেন্স অক্সিজেন পরিবহনে সক্ষম। তাই কর্নিয়ার সুস্থতায় কোনো অসুবিধা হয় না। অন্য সব দিক দিয়ে এতে হার্ড লেন্সের মতো সুবিধা।

> সফট লেন্সও মূলত প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থ। তবে এর জলীয় অংশের পরিমাণ বেশি হওয়ায় বেশ নরম হয়। তাই বেশ আরামদায়ক। লেন্সটি হার্ড লেন্সের তুলনায় আকারেও বড়। তাই সহজে খুলে পড়ে যায় না। তবে খুব নরম হওয়ায় সহজে ছিঁড়ে বা ভেঙে যেতে পারে। এই লেন্সের দাম বেশি, টেকেও কম, খোলার পরপর সলিউশনে ডুবিয়ে রাখতে হয়।

Advertisement

> ডিসপোজেবল লেন্স বর্তমানে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি এক ধরনের সফট লেন্স। তবে চলে এক সপ্তাহ থেকে এক মাস।

লেন্স ব্যবহারের সঠিক নিয়ম

> সফট কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারকারীদের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা খুবই জরুরি।

> চোখে লেন্স লাগানো বা খোলার আগে হাত ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, নখের আঁচড় লেগে লেন্স যেন ছিঁড়ে না যায়।

> সর্বোচ্চ ৮-১০ ঘণ্টা লেন্স পরে থাকতে পারবেন। তবে ভুল করেও লেন্স পরে ঘুমাবেন না।

> খেয়াল রাখতে হবে ডান ও বাম দিকের লেন্স যেন গুলিয়ে না ফেলেন।

> লেন্স পরা অবস্থায় চোখ ঘষা বা রগড়ানো যাবে না।

> খোলার পর একটি লেন্সের কৌটায় সলিউশনে ডুবিয়ে রাখুন। সলিউশনটি প্রতিদিন পরিবর্তন করতে হবে। পাত্রটিও পানি দিয়ে প্রতিদিন পরিষ্কার করে নিন। তবে কোনোভাবেই পানি দিয়ে লেন্স ধোঁয়া যাবে না।

> চোখ লাল হয়ে গেলে, ব্যথা হলে বা ময়লা জমলে লেন্স পরা বন্ধ করে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

>> মনে রাখবেন কন্টাক্ট লেন্সের অনেক উপকারিতা থাকলেও; এটি সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত নয়। তাই চক্ষু বিশেষজ্ঞের নিয়মিত পরামর্শ ছাড়া কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা উচিত নয়।

কাদের জন্য কন্টাক্ট লেন্স প্রযোজ্য নয়?

> যাদের চোখে অ্যালার্জি আছে, তারা ব্যবহার করবেন না।

> বেশি ধুলাবালির মধ্যে যারা কাজ করেন তারা পরবেন না লেন্স।

> মানসিক ভারসাম্যহীন থাকলে।

> চোখের যত্নে যারা উদাসীন থাকেন, তারাও পরবেন না।

> যাদের চোখ বারবার লাল হয় বা পানি পড়ে।

> যাদের ড্রাই আই সিনড্রোম আছে বা শুকনো চোখ অথবা যাদের চোখে মিউকাসের পরিমাণ বেশি তাদের জন্য এটা প্রযোজ্য নয়।

> ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে যারা ইনসুলিন গ্রহণ করেন; তাদের জন্য কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার কেরা উচিত নয়।

লেন্সের দাম কেমন?

বর্তমানে বিভিন্ন প্রসাধনীর দোকান, অপটিক্যাল হাউজসহ অনলাইনেও বিভিন্ন ধরনের রং-বেরঙের লেন্স বিক্রি হয়ে থাকে। কিছুদিন আগেও একজোড়া লেন্সের জন্য ৫-১০ হাজার টাকা প্রয়োজন হতো। এখন দাম অনেক কমে এসেছে। এক বছর মেয়াদি একটি সফট লেন্স বর্তমানে ২৫০০-৩৫০০ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় পাওয়া যায়।

ডিসপোজেবল লেন্স ৩-৭ হাজার টাকা। কালারড লেন্স তিন হাজার থেকে আট হাজার টাকা। অন্যদিকে হার্ড লেন্সগুলো ৩৫০-১৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। আর এগুলো দেদারছে বিক্রি হচ্ছে সব জায়গায়। যেগুলো চোখের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই লেন্স কেনার সময় ভালো ব্র্র্যান্ড ও সফট লেন্স দেখে কিনবেন।

সূত্র: অল অ্যাবাউট ভিশন

জেএমএস/জেআইএম