দেশজুড়ে

মৌমাছি পালনে নূরুল ইসলামের ভাগ্য বদল

গ্রাম-বাংলার মাঠগুলো এখন সরিষা ফুলে ভরা। যত দূর চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। সবুজের মাঝে হলুদের সমারোহ। আর এ সরিষা ফুলকে অনেকেই বেছে নিয়েছেন বেকারত্ব ও দারিদ্র্য দূরীকরণের মাধ্যম হিসেবে। এমনই এক ভ্রাম্যমাণ মৌ চাষি শ্যামনগর উপজেলার হরিনগর গ্রামের শাহাবাজ মিস্ত্রির ছেলে নূরুল ইসলাম। তিনি ভিন্ন জেলার বিভিন্ন স্থানে মধু সংগ্রহ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন।বর্তমানে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহের জন্য আস্তানা গেড়েছেন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায়। কাকডাংগা বিওপির এক সরিষা ক্ষেতের পাশে তিনি ৯০টি মৌমাছি বক্স স্থাপন করেছেন। কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন মধু আহরণের কাজে। মৌমাছিকে ব্যাবহার করে এ বছর তিনি ২৫ মণ মধু সংগ্রহ করবেন বলে আশাবাদী। মৌ চাষী নূরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ৬ জনের সংসারে নুন আনতে পানতা ফুরাতো। ৮-৯ বছর আগে বুক ভরা আশা নিয়ে মৌমাছি পালন শুরু করেন। শুরুটা ভালো হলেও প্রলংকরী প্রাকৃতিক দূর্যোগ আইলায় ভিটে বাড়ি লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। তছনছ হয়ে যায় মৌমাছি পালনের বাক্সগুলো। দারিদ্র্য জয়ের স্বপ্ন নিয়ে তারপর আবারও নতুন উদ্যোমে অস্ট্রেলিয়ার মেলি ফ্রেম রানী মৌমাছি এনে শুরু করেন মৌমাছি পালন। অবশেষে সফল হন। এ রানী মৌমাছির বৈশিষ্ট্য হলো- যার যে বাক্স সে সেই বাক্সে ফিরে যাবে। অন্য রানীর বাক্সে এ মৌমাছিরা যায় না। ফলে কোনো চাকে কতটুকু মধু হয়েছে তা সহজে বোঝা যায়। তিনি আরও বলেন, কলারোয়া এলাকায় আগাম সরিষা ফুল দেখা যায়। তাছাড়া এ এলাকায় সরিষার আবাদ হয় রেকর্ড পরিমাণ। আগাম সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করার এখনই সময়। দেড় মাস মধু সংগ্রহের পর পাড়ি জমাবেন সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, পাবনা ও গোপালগঞ্জ জেলায়। এজন্য সরিষা ক্ষেতে দিন রাত অতিবাহিত করবেন। এভাবে বিভিন্ন জেলা ঘুরে ২৫-৩০ মণ মধু ও ১০-১৪ কেজি মোম সংগ্রহ করবেন। অবশেষে সংগৃহীত মধু এপি কোম্পানির কাছে বিক্রি করবেন।নূরুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সুন্দরবনে শুরু হয় মধু ও মোম সংগ্রহ অভিযান। বন বিভাগ থেকে পাশ নিয়ে সুন্দরবনে যান মধু আহরণে। তিন মাসে সুন্দরবন থেকে আহরণ করেন আরও ৩৫-৪০ মণ মধু। সে মধুও বিক্রি করেন এপি কোম্পানির কাছে। বর্তমানে আমার সংসার খুব ভালো চলছে। অভাব নেই।বেকারত্ব ও দারিদ্র্য দূরীকরণে মৌমাছি পালন একটি সহজ উপায়। নূরুল ইসলাম সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, মৌমাছি পালনের মাধ্যমে ভাগ্য বদলাতে পারেন। ভালোভাবে চলতে পারে একটি সংসার। তাছাড়া মধুর বাজার সৃষ্টি করতে পারলে মৌমাছি পালন দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে। বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ ও সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করার দাবি জানান তিনি।কৃষিবিদ মোসাদ্দেক হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, এখন সরিষা ফুল ফোঁটার সময়। সরিষা ক্ষেতে মৌমাছির আগমন ঘটলে ফলন বেশি হয়। মৌমাছির মাধ্যমে অধিক পরাগায়ন ঘটে ফলে ফলন বৃদ্ধি পায়। এছাড়া সরিষার ফুল থেকে মধু আহরণ করে লাভবানও হতে পারেন মৌ চাষিরা। এসএস/পিআর

Advertisement