আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে পশু বেচাকেনার জন্য বরিশাল নগরীসহ পুরো জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে শতাধিক হাট বসছে। আগামী চার থেকে পাচঁদিনের মধ্যে এসব হাটে পশু কেনাবেচা শুরু হবে। গরু-ছাগল বিক্রি নিয়ে সঙ্কটে পড়েছেন বরিশালের ছয় হাজারের বেশি খামারি।
Advertisement
বরিশাল জেলা প্রশাসন ও বরিশাল সিটি করপোরেশন সূত্রে এতথ্য জানা গেছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বরিশাল জেলার ছয় হাজার ২৪৪টি বাণিজ্যিক খামারে বিক্রির জন্য গরু লালন-পালন করা হয়েছে। এসব খামারে কোরবানির জন্য ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৬ হাজার ৬১৯টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে ৩৮ হাজার ৬৬টি গরু, মহিষ ও ষাঁড় রয়েছে। ছাগলের সংখ্যা ৪৬৬টি আর ভেড়া ৮৭টি। এছাড়া বাসাবাড়িতে লালন-পালন করা আরও ২০ হাজার পশু বিক্রির জন্য প্রস্তত রয়েছে। জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ৮৫ হাজারের কিছু বেশি। অবশিষ্ট ১৫ হাজার পশুর চাহিদা মেটানো হয় অন্যান্য জেলা থেকে সরবরাহ করা পশু থেকে।
জেলার কয়েকজন খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনার কারণে গত বছরের মতো এ বছরও খামারিদের ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে। পশু লালন-পালন করতে গিয়ে অনেক খামারির ধারদেনা হয়েছে। খামারিদের আয়ের প্রধান উৎসই হলো কোরবানির পশু বিক্রি। কিন্তু বিধিনিষেধের কারণে খামারে ক্রেতা আসছে না। গরু বিক্রির সব হাট বন্ধ। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে অনলাইনে পশু কেনাবেচা চালু করা হলেও তেমন সাড়া নেই। তাই পশু বিক্রি নিয়ে তারা শঙ্কায় রয়েছেন।
Advertisement
খামারিদের আশা, গণপরিবহন চালু ও হাট বসলে এ সঙ্কট কিছুটা দূর হবে। লোকসান এড়ানো সম্ভব হবে কি-না তা নিয়ে খামারিদের উদ্বেগ রয়েছেই।
বরিশাল নগরীর সরদারপাড়া ব্রাঞ্চ রোডের বাসিন্দা মঈন আল হাসানের খামারে বিক্রির জন্য উপযোগী ২৩টি গরু রয়েছে। আক্ষেপ করে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, তিনি গত ১০ দিনে মাত্র পাঁচটি গরু বিক্রি করতে পেরেছেন। পরিচিত ব্যক্তিরা ওই গরুগুলো কিনেছেন। তাদের সঙ্গে দরকষাকষি করা যায়নি। তাই প্রত্যাশিত দামও পাননি।
কবির হাওলাদার নামের বানারীপাড়া উপজেলার উদয়কাঠি ইউনিয়নের লবণসাড়া গ্রামের আরেক খামারি বলেন, তার খামারে বিক্রি উপযোগী ১৩টি গরু রয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিধিনিষেধের কারণে তার খামারে এবার তেমন একটা ক্রেতা আসতে পারেনি। গত দুই সপ্তাহে হাতেগোনা কয়েকজন ক্রেতা এসেছেন।
তার ১৩টি গরুর মধ্যে দুটির দাম উঠেছে মাত্র দুই লাখ ২০ হাজার টাকা। অথচ সাড়ে সাত মণ ওজনের একটি গরুর দাম তিনি প্রত্যাশা করেছিলেন এক লাখ ৭০ হাজার টাকা।
Advertisement
বরিশাল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নুরুল আলম জানান, লকডাউনের কারণে গত বছরের মতো এবারও ক্রেতা কম। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে অনলাইনে কেনাকাটায় মানুষকে উৎসাহিত করতে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। খামারি ও ক্রেতাদের কোরবানির পশু অনলাইনে কেনাবেচা করতে অনুরোধ করা হচ্ছে। অনলাইনে পশু বেচাকেনার জন্য প্রাণিসম্পদ জেলা ও ১০ উপজেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্যোগে ‘অনলাইন কোরবানির হাট’ নামের ফেসবুক পেজ খোলা হয়েছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের হাটবাজার শাখার পরিদর্শক রেজাউল করিম জাগো নিউজকে জানান, গত বছরের মতো নগরীতে এবারও একটি স্থায়ী ও দুটি অস্থায়ী হাট বসছে। অস্থায়ী হাট বসবে কাউনিয়া টেক্সটাইল সংলগ্ন মাঠ ও শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীর তীরে খোলা স্থানে। বাঘিয়ার এলাকায় স্থায়ী হাটেও পশু বেচাকেনা হবে। ইতোমধ্যে অস্থায়ী দুটি হাটের ইজারাসহ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ১৬ জুলাই থেকে এই তিন হাটে কোরবানির পশু বেচাকেনা শুরু হবে।
বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, ইজারাপ্রত্যাশীদের আবেদন সাপেক্ষে গত বছরের তুলনায় এবার অস্থায়ী হাটের সংখ্যা বাড়ানো হবে। কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে অস্থায়ী হাটের ইজারাদারদের শর্ত দেয়া হবে। শর্ত না মানলে ইজারা বাতিলও হতে পারে। ম্যাজিস্ট্রেটরা হাটগুলোয় নিয়মিত নজরদারি করবেন।
সাইফ আমীন/এসআর/এমএস