দেশজুড়ে

রাণীনগর হানাদার মুক্ত দিবস আজ

আজ ১০ ডিসেম্বর। নওগাঁর রাণীনগর হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে প্রায় ৩৭ ঘণ্টা সম্মুখ যুদ্ধের পর রাণীনগর উপজেলা হানাদার মুক্ত হয়। জানা যায়, ১৯৭১ সালে ২৪ এপ্রিল রাণীনগরে পাক-হানাদার বাহিনী অনুপ্রবেশ করে। তারা রাণীনগরে আহম্মদ আলীর বাসা, থানা ভবন ও পাইলট স্কুলকে নিরাপদ স্থান মনে করে ক্যাম্প স্থাপন করেন। তৎকালীন সময়ে স্থানীয় কিছু রাজাকার, দালালদের নিয়ে আতাইকুলা পালপাড়া, হরিপুর, স্থল-বড়বরিয়া গ্রামে গণহত্যা, নারী নির্যাতন চালায় এবং অগ্নি সংযোগ ও লুটপাটে মেতে উঠেছিল।বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার সান্তাহারে বাঙালিদের উপর নির্যাতনের খবর রাণীনগর সংগ্রাম পরিষদের মুক্তিযোদ্ধারা জানতে পারেন। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা কৌশলে রাণীনগর থানায় রক্ষিত গোলাবারুদ, অস্ত্র লুট করে। সেইসব অস্ত্র দিয়ে প্রাথমিকভাবে প্রশিক্ষণ নেয় মুক্তিযোদ্ধারা। অবশেষে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মোকাবেলার জন্য যুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করে। রাণীনগর থানা হানাদার মুক্ত করার জন্য ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর বেলা ১১টা থেকে মুক্তিযোদ্ধা হারুন অল-রশিদ ও আকতারুজ্জামান রঞ্জু পাক বাহিনীদের উপর আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনায় ৪০/৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা দলের সঙ্গে ৩টি দল অংশগ্রহণ করেন। এ সময় হক, মোফাজ্জল ও গেরিলা দলের সমন্বয়ে ৯ ডিসেম্বর থেকে একযোগে পাক বাহিনীদের উপর আক্রমণ শুরু হয়। এ সময় যাতে আত্রাই থেকে ট্রেনযোগে হানাদার বাহিনী রাণীনগর আসতে না পারে সেজন্য মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম ও দুলু চকের ব্রিজের উত্তর দিকে খেজুরতলী এলাকায় রেললাইন উড়িয়ে দিয়ে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।নওগাঁ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হারুন অল-রশিদ বলেন, রাণীনগর রেলগেটের ঘুমটি ঘর থেকে ক্যাম্প আহম্মদ আলীর বাসা ও থানা ভবনে ফায়ারিং করে আক্রমণ শুরু হয়। হক, মোফাজ্জল ও গেরিলা দল এবং একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম, রাজ্জাক, সোলেমান, শমসের, আক্কাস, কামরুল, তাকিম, ইব্রামিয়া, আফজাল হোসেন, রাজা ফায়ারিং শুরু করলে পাল্টা হানাদার বাহিনীরাও আক্রমণ করে। গুলিতে লুৎফর রহমান নামের এক তরুণ বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এ সময় হানাদার বাহিনীর দুটি ব্যাংকার ধ্বংস হয়।তিনি আরও বলেন, লুৎফরের মৃত্যুতে ক্ষোভে মুক্তিযোদ্ধারা জমির উঁচু আঁইল ও সীমানা পিলারের আড়ালে অবস্থান নিয়ে শক্রদের উপর বৃষ্টির মতো ফায়ারিং শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধা ও পাক হানাদার বাহিনীর মধ্যে ৩৭ ঘণ্টা তুমুল গোলাগুলি হয়। এ সময় গুলির শব্দে রাণীনগরের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে। ১০ ডিসেম্বর বিকেল ৫ টার কিছু পর যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে পাক-হানাদার বাহিনী ও তার দোসররা বগুড়া জেলার সান্তাহারের দিকে পালাতে শুরু করে। তিনি বলেন, এ সময় রেল স্টেশনের সাত্তার কুলি, বাহাদুরপুর গ্রামের এছাহাক আলীসহ ১৯ জন রাজাকার-আলবদর অস্ত্রসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং রাণীনগর থানা হানাদার মুক্ত হয়। আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে মুক্ত আকাশে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে জয় বাংলার স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে রাণীনগর। আব্বাস আলী/এসএস/পিআর

Advertisement