দেশজুড়ে

রাজশাহীতে অনলাইনে দৈনিক বিক্রি হচ্ছে দেড় কোটি টাকার পশু

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টালমাটাল অবস্থা সরকার ও স্থানীয় জেলা প্রশাসনগুলোর। রাজশাহীতে জুন থেকে জেলা প্রশাসনের জারি করা বিধিনিষেধ ও পরবর্তীতে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ। দুয়ে মিলে চরম হতাশা ও উৎকণ্ঠার মধ্যে কেটেছে পশু ব্যবসায়ীদের। এ হতাশা দূর করতে অনলাইনে পশু বেচাকেনার ব্যবস্থা করেছে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে অনেকটা আশার আলোও দেখছেন রাজশাহীর পশু ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

রাজশাহী মহানগর ও ৯টি উপজেলায় গত ১ জুন থেকে চালু হয়েছে অনলাইনে পশু বেচাকেনার প্ল্যাটফর্ম। এতে স্থানীয় খামারি ও গৃহে পালন করা পশুর মালিকরাও দিচ্ছেন পোস্ট। অনেকেই তাদের নাম, ঠিকানা, পশুর সংখ্যা, ওজন, পশুর রং এমনকি কোন জাতের গরু ও খাসি সেটিও উল্লেখ করছেন। রাজশাহীর বিভিন্ন অনলাইন পশুর হাটে দৈনিক এক থেকে দেড় কোটি টাকার বেচাকেনাও হচ্ছে বলে জানিয়েছে রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদফতর।

জেলা প্রাণিসম্পদ সূত্রে জানা যায়, জুন থেকে জুলাইয়ের অদ্যাবধি অনলাইন পশুর হাটে মোট ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকার কোরবানিযোগ্য পশুর বেচাকেনা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনলাইনে বেচাকেনা হয়েছে গোদাগাড়ী উপজেলায়। সবচেয়ে বেশি কোরবানিযোগ্য পশুর ছবি আপলোড হয়েছে পবা উপজেলায়।

রোববার (১১ জুলাই) মোট ৪ হাজার ৭৪০টি গরু-মহিষ এবং ৪ হাজার ৪৮৬টি ছাগল-ভেড়ার ছবি-ভিডিও আপলোড হয়েছে। বিক্রি হয়েছে ১৩৬টি গরু-মহিষ ও ২২৮টি ছাগল-ভেড়া। এতে মোট বিক্রি হয়েছে এক কোটি ৪৪ লাখ ২৩ হাজার ৫০০ টাকা।

Advertisement

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের চারটি ও দুটি সরকারি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পবার পশু বেচাকেনার জন্য ছবি এবং ভিডিও আপলোড হয়েছে। এ পর্যন্ত ছয়টি মাধ্যমে মোট বিক্রি হয়েছে এক কোটি ৩৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।

ফেসবুকের দুটি ও একটি সরকারি মাধ্যমে মোহনপুরের ২ হাজার ৬৩৪টি গরু-মহিষ এবং ছাগল-ভেড়া ২ হাজার ৫১৪টি আপলোড হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট বিক্রি হয়েছে এক কোটি ৭ লাখ ২২ হাজার ৫০৭ টাকার পশু।

ফেসবুকে একটি ও একটি সরকারি মাধ্যমে পুঠিয়ার ১ হাজার ৪৬৭টি গরু-মহিষ এবং ২ হাজার ৩৯টি ছাগল-ভেড়ার ছবি আপলোড হয়েছে। এ উপজেলায় অনলাইনে এখন পর্যন্ত একটিও পশু বিক্রি হয়নি।

ফেসবুকের একটি ও একটি সরকারি মাধ্যমে দুর্গাপুরের ১৭৬টি গরু-মহিষ এবং ৯টি ছাগল-ভেড়ার ছবি আপলোড হয়েছে। এ উপজেলায় মোট বেচাকেনা হয়েছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকার পশু।

Advertisement

ফেসবুকের একটি ও একটি সরকারি মাধ্যমে চারঘাটের ৬ হাজার ৩৪২টি গরু-মহিষ এবং ৫ হাজার ৪৭টি ছাগল-ভেড়ার ছবি আপলোড হয়েছে। এ উপজেলায় বেচাকেনা হয়েছে মোট ১ কোটি ৯৬ হাজার টাকার পশু।

ফেসবুকের একটি ও একটি সরকারি মাধ্যমে বাঘার ১ হাজার ৮৯৬টি গরু-মহিষ এবং ২৯৩টি ছাগল-ভেড়ার ছবি আপলোড হয়েছে। এ উপজেলায় অনলাইনে পশু বেচাকেনা হয়েছে ৩৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকার।

ফেসবুকের দুটি ও দুটি সরকারি প্ল্যাটফর্মে বাগমারার ২ হাজার ১৪২টি গরু-মহিষ এবং ৮ হাজার ৭৯৪টি ছাগল-ভেড়ার ছবি ও ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। মোট বেচাকেনা হয়েছে ২৫ লাখ ৫ হাজার টাকার।

ফেসবুকের তিনটি ও তিনটি সরকারি মাধ্যমে তানোরের ১ হাজার ৪৯৩টি গরু-মহিষ এবং ৯৫৩টি ছাগল-ভেড়ার ছবি ও ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। মোট বিক্রি হয়েছে ১৭ লাখ ১৩ হাজার টাকার।

ফেসবুকের দুটি ও দুটি সরকারি মাধ্যমে গোদাগাড়ীর ১ হাজার ১৩৪টি গরু-মহিষ ও ৩ হাজার ৪৩১টি ছাগল-ভেড়ার ছবি-ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। এই উপজেলায় অনলাইনে বিক্রি হয়েছে ১ কোটি ১৬ লাখ ৯ হাজার ৫০০ টাকার পশু।

এছাড়া ফেসবুকের তিনটি ও একটি সরকারি মাধ্যমে রাজশাহী মহানগর এলাকার ২৩০টি গরু-মহিষ এবং ১৬১টি ছাগল-ভেড়ার ছবি-ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। নগরজুড়ে অনলাইনে পশুর বেচাকেনা হয়েছে ৩৪ লাখ ২০ হাজার ৫০০ টাকার।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা ইসমাইল হক বলেন, ‘রাজশাহী জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে গত জুন থেকে অনলাইনে পশু বেচাকেনার একটি সুন্দর মাধ্যম তৈরি করা হয়েছে, যা রীতিমতো বেশ সাড়া ফেলেছে। প্রতিটি উপজেলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুটি থেকে তিনটি ও সরকারি ওয়েবসাইটে দু-একটি ‘অনলাইন পশুর হাট’ তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া খামারিদের অনলাইনে পশু বিক্রয়ের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে ভেটেরিনারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করা হয়েছে। যেসব খামারি বা কৃষকদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই বা অনলাইনে অদক্ষ তাদের পশুকে অনলাইনের আওতায় আনবে এ স্বেচ্ছাসেবক টিম। প্রয়োজনে তারা খামারিদের বাড়ি গিয়ে ছবি, ভিডিও ও পশুর মূল্যসহ সব তথ্য সংগ্রহ করবেন। এরপর ওই তথ্য ফেসবুক গ্রুপ ও সরকারি ওয়েবসাইটে পোস্ট দেবেন। এসব প্লাটফর্ম থেকে ক্রেতারা নিজেদের সাধ ও সাধ্যমতো কোরবানির পশু বাছাই করে নিতে পারবেন।’

চলমান কঠোর বিধিনিষেধে অনলাইনে পশু বেচাকেনার কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিধিনিষেধে বিনা কারণে মানুষ বাইরে প্রবেশ করতে পারবে না। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে, পশু বেচাকেনা, খাবার সংগ্রহ ও পরিবহন লকডাউনের আওতামুক্ত থাকবে। সেক্ষেত্রে যে কেউ চাইলেই অনলাইনে তার পছন্দের কোরবানির পশুটি ক্রয় করতে গন্তব্যে যেতে পারবেন ও কিনে বাসায় ফিরতে পারবেন। পথে কোনো সমস্যা হলে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হটলাইনে ফোন করে এ বিষয়ে সাহায্য নিতে পারবেন।’

অনলাইনে পশু বেচাকেনার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল বলেন, ‘রাজশাহীতে প্রায় দুই লাখেরও বেশি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। দীর্ঘদিনের লকডাউনে খামারিরা তাদের এই বিপুল সংখ্যক পশু নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তাদের চিন্তা দূরীকরণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত জুনের প্রথম থেকেই অনলাইনে পশু কেনাবেচার একটি প্লাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। এতে বর্তমানে রাজশাহীর পশু ব্যবসায়ীদের খামারের পশু ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। দুশ্চিন্তাও দূর হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ মহামারি চলাকালে হাটে ভিড় না করে অনলাইনে পশুর হাট থেকে ক্রেতারা গরুর ছবি ও ভিডিও দেখে পশু কিনতে পারেন। এতে করোনার সংক্রমণের সম্ভাবনাও কম। অনলাইন থেকে পশু পছন্দ হলে নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে দেখে আসবেন। পছন্দ হলে নেবেন না হলে ফিরে আসবেন।’

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘হাটে পকেটমার, ছিনতাইসহ দালালের খপ্পরে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পক্ষান্তরে অনলাইন পশুর হাটে তা নেই। তাই সব দিক থেকে অনলাইনে পশু বেচাকেনা উত্তম।’

ফয়সাল আহমেদ/এসজে/এমকেএইচ