জাগো জবস

অনলাইন থেকে অফলাইনে ঘুরে দাঁড়ালেন সোনিয়া

আনিসুল ইসলাম নাঈম

Advertisement

মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সোনিয়া রহমান। এক ভাই ও বোনের মধ্যে বড়। পড়াশোনার পাশাপাশি ছবি আঁকা, বইপড়া ও লেখালেখির শখ ছিল। অর্জনের তালিকায় থাকতো যেকোনো প্রতিযোগিতায় প্রথম বা দ্বিতীয় স্থান। ছোট থেকেই ইচ্ছে ছিল নিজে কিছু করবেন। বাঁধাহীন নিজের ইচ্ছেমতো চলবেন। সোনিয়ার জন্ম ও বেড়ে ওঠা চাঁদপুর সদরে। বর্তমানে অনার্স কোর্সে অধ্যয়নরত।

মনে থাকা স্বপ্ন ইন্টারমিডিয়েট পড়া অবস্থায় তীব্র হতে থাকে। এরমধ্যেই বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। কিন্তু সোনিয়ার বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখা বন্ধ হয়নি। স্বামীর সহায়তায় ফেসবুকে একটি গ্রুপ খোলেন। গ্রুপে নিয়মিত লেখালেখি ও দৃশ্য আঁকার পোস্ট করা হতো। পাশাপাশি খাবারের ছবিও দেওয়া হতো। তখন থেকে তার মনে সাহস উঁকি দেয়।

সোনিয়া বলেন, ‘আমার বাড়ি গ্রামের দিকে। এখানকার মানুষ ফেসবুক ও ইন্টারনেট সম্পর্কে তেমন বুঝতো না। বাসায় কিছু অব্যবহৃত প্রোডাক্ট ছিল। নিজের কৌতূহল থেকে সে ছবি গ্রুপে দেই। অবিশ্বাস্য ভাবে ৭টির মধ্যে ৩টিই বিক্রি হয়ে যায়। মনে আত্মবিশ্বাসের জায়গাটা বড় হতে থাকে। তারপর সাধারণ কিছু ড্রেসের ছবি দেই। তখন সবার সাড়া পেতে থাকি। অনেকেই ব্যবসার জন্য সাপোর্ট দেন। বিশেষ করে স্বামী ও বাবা-মা পাশে ছিলেন। তখন সিন্ধান্ত নেই অনলাইনে ব্যবসা করার। গ্রুপের নাম দেই ‘ফ্যাশন কর্নার’।’

Advertisement

সোনিয়া প্রথমে ২৬০০ টাকার পণ্য কিনে ব্যবসা শুরু করেন। ফেসবুক গ্রুপের মেম্বার সংখ্যা বাড়াতে থাকেন। শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, কামিজ, বাচ্চাদের ড্রেস ও ফ্যামিলি ম্যাচিং ড্রেস, জুয়েলারি ও অন্যান্য পণ্যের বিজ্ঞাপন দিতে থাকেন। ধীরে ধীরে অর্ডার বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে মানুষের চাহিদাও। অল্পতেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে গ্রুপ। অল্প দিয়ে শুরু করলেও এখন প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকার বেশি পণ্য বিক্রি হয়। হোম ডেলিভারি ও কুরিয়ারের মাধ্যমে পণ্য পৌঁছে দেওয়া হয়।

কিছুটা আক্ষেপের সঙ্গে সোনিয়া বলেন, ‘প্রথমে যখন হোম ডেলিভারি দিতাম; তখন সবাই বলতেন, মেয়ে হয়ে এসব কাজ করছি। মেয়েকে দিয়ে এখন কাজ করে খাওয়াবে। যখন দেখলেন, অনলাইনে অনেক ভালো বিক্রি হচ্ছে। তখন সবাই ভালো বলছেন। তবে শ্বশুরবাড়ি, স্বামী ও ফ্যামিলি থেকে সব সময় অনুপ্রেরণা পেয়েছি।’

সোনিয়া ভাবতে থাকেন, ব্যবসা আরও বড় করবেন এবং শহরে দোকান দেবেন। এতে গ্রুপের সাপোর্ট পান। সবার সহযোগিতায় চাঁদপুর শহরে দোকান নেন। তিনি ও তার স্বামী দোকান দেখাশোনা করেন। দিনের একবেলা সন্তানকে নিয়ে দোকানে সময় দেন সোনিয়া। আগের তুলনায় ব্যবসা ভালো হচ্ছে।

সোনিয়া বলেন, ‘দোকান দেওয়ার শুরুতে অনেক বাধা আসে। এসব বাধা কখনো আমাদের থামাতে পারেনি। সব বাধা এক করে সামনে এগিয়ে গেছি।’

Advertisement

সম্প্রতি বেশ কয়েকবার ফ্যাশন কর্নারের পক্ষ থেকে গরিব ও অসহায়দের সহযোগিতা করা হয়েছে। সোনিয়া জানালেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, খুব শিগগিরই ঢাকা ও কুমিল্লায় ‘ফ্যাশন কর্নার’র শাখা খুলবেন। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাদের শাখা করার স্বপ্ন আছে। তা ছাড়া সুবিধাবঞ্চিত ও অসহায়দের নিয়ে বড় পরিসরে কাজ করার পরিকল্পনা আছে।

এসইউ/এএসএম