দেশজুড়ে

প্রচারণায় ব্যস্ত রাঙামাটির মেয়র প্রার্থীরা

আসন্ন রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে জমে উঠেছে প্রচারণা। বুধবার আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী আকবর হোসেন চৌধুরী। সকাল থেকে দলীয় প্রতীক নিয়ে ভোট চাইতে প্রচারণায় নামতে দেখা গেছে তাকে। এছাড়া জনসংযোগে ব্যস্ত বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম চৌধুরীসহ অন্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। জানা যায়, এবার রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার ঘোষিত বৈধ প্রার্থী মেয়র পদে ৭, তিনটি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে ৫ এবং ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৪৬ প্রার্থী। মেয়র প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামী লীগের আকবর হোসেন চৌধুরী, বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক মেয়র হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপির সাইফুল ইসলাম চৌধুরী ভুট্টো, বিদ্রোহী প্রার্থী রবিউল আলম রবি, জাতীয় পার্টির ডা. শিব প্রসাদ মিশ্র, জেএসএস সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. গঙ্গা মানিক চাকমা ও অমর কুমার দে। এছাড়া বাতিল হয়েছে মেয়র পদে ১, সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে ২ এবং সাধারণ ওয়ার্ডে ২ কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র। ১৯৭২ সালে গঠিত বর্তমানে প্রথম শ্রেণির রাঙামাটি পৌরসভায় এবার নির্বাচনে মোট ভোটার হলেন ৫৭ হাজার ৭৮৪। তন্মধ্যে পুরুষ ৩২ হাজার ১শ` ৮ এবং নারী ২৫ হাজার ৬শ` ৮৬ ভোটার। এদিকে দলীয় প্রতীক নৌকায় ভোট চাইতে মিনি পোস্টার সহকারে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে বুধবার সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নেমেছেন আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী আকবর হোসেন চৌধুরী। প্রচারণায় হ্যান্ড মাইক ব্যবহার করতে দেখা গেছে তাকে। এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হলেও নতুন মুখ তিনি। তবে ছাত্র রাজনীতি দিয়েই দীর্ঘদিন ধরে জড়িত আওয়ামী লীগে। বর্তমানে আকবর হোসেন চৌধুরী জেলা যুবলীগের সভাপতি। আনুষ্ঠানিক প্রচারণার শুরুর দিন তার সঙ্গে ছিলেন জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি চিংকিউ রোয়াজা, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. সোলায়মানসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক। এসময় দোকান, ব্যবসায়ী ও কর্ম প্রতিষ্ঠান, পাড়া, মহল্লা, কলনিসহ বিভিন্ন জায়গায় ভোটারদের দ্বারস্থ হয়ে নৌকায় ভোট চান আকবর হোসেন চৌধুরী এবং দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।   প্রচারণাকালে নৌকায় ভোট চেয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, আমি ছাত্রবস্থা থেকে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চা দিয়ে এই শহরে বেড়ে উঠেছি। আমি এই শহরের সন্তান। রাঙামাটি শহরে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের বসবাস। তাই এখানে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হচ্ছে সবার মাঝে সম্প্রীতির উন্নয়ন। আমি দল মতের ঊর্ধ্বে থেকে আপামর পৌরবাসীর সেবায় আত্মনিয়োগ করতে চাই। সেই উদ্দ্যেশে আমার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া। আমি রাঙামাটিকে সম্প্রীতির শহর হিসেবে উপহার দিতে চাই। এ লক্ষ্যে সব সময় আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছি। তাই আমি আশাবাদী অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করে এ পাহাড়ি শহরের উন্নয়ন ও সম্প্রীতির বন্ধনকে জোরদারে আমাকে কাজ করার সুযোগ দেবেন। এজন্য পৌরবাসী সবার দোয়া ও আশীর্বাদ চাই। আসন্ন নির্বাচনে আমাকে দলমত নির্বিশেষে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।অপরদিকে, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী সাবেক মেয়র হাবিবুর রহমান হাবিবও জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি। হাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, পৌরবাসীর সেবায় আগে অনেক কাজ করেছি। পৌরবাসীর অনুরোধে আমি এবারও নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি। তাই ভোটগ্রহণ পর্যন্ত নির্বাচনে আছি। জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত আমি।      অন্যদিকে, বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম চৌধুরীও ব্যস্ত রয়েছেন জনসংযোগ নিয়ে। গত নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা ও দলীয় কোন্দলের কারণে এবার নির্বাচনে তার জনপ্রিয়তায় যথেষ্ট ভাটা পড়েছে বলে মনে করছেন ভোটাররা। তবে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে সাইফুল ইসলাম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, গত মেয়াদে আওয়ামী লীগের বাধার মুখে অনেক ক্ষেত্রে কাজ করতে গিয়ে ব্যর্থ হতে হয়েছে। সামনে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারে। সেজন্য আমি এবারও প্রার্থী হয়েছি। দল এবারও মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমার মোকাবিলা হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে। তারপরও জয়ের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত আমি। বিদ্রোহী প্রার্থী রবিউল আলম রবির ব্যাপারে তিনি বলেন, নির্বাচন করতে পারেন- কিন্তু তিনি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী নন। প্রচারণায় পিছিয়ে নেই বিএনপির বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী রবিউল আলম রবি। তিনি জেলা বিএনপির তৃণমূলের প্রথম সারির নেতা। এর আগে দুইবার ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। তাই প্রভাব ও জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে তার বিপুল ভোট প্রাপ্তির বিষয়টি কোনোভাবেই উড়িয়ে দেয়া যায় না। ফলে নির্বাচনে বিএনপির জন্য বড় ফ্যাক্টরও তিনি। দলীয় প্রার্থীর প্রতি ছাড় দেয়ার প্রশ্নে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী রবিউল আলম রবি জাগো নিউজকে বলেন, এটা প্রশ্নই আসে না। এতে কোনো ছাড় নেই। শেষ লড়াই করে জয় ছিনিয়ে আনতে চাই। অপহরণ বা হত্যা ছাড়া আমাকে নির্বাচন থেকে সরানোর কারও শক্তি নেই। জয়ের ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। আগে জনগণের পাশে থেকে কাজ করায় রাঙামাটির পৌরসভার জনগণ এবার আমাকে মেয়র হিসেবে দেখতে চান। সেজন্য আমার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া। তাকে নিয়ে দলীয় প্রার্থী সাইফুল ইসলাম চৌধুরীর বিভিন্ন মন্তব্যের জবাবে রবিউল আলম রবি জাগো নিউজকে বলেন, ভুট্টোর ওই ধরনের মন্তব্য প্রলাপ ছাড়া কিছুই নয়। আমি একজন শক্তিশালী প্রার্থী। সেজন্য আমাকে ভয় পাচ্ছেন তিনি।অন্যদিকে, মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. গঙ্গা মানিক চাকমাকে নিয়ে পরোক্ষভাবে এবার রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হচ্ছে আঞ্চলিক দল জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দীপংকর তালুকদারকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঊষাতন তালুকদারকে নিয়ে এ আসনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে জেএসএস। এরপর অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে জেলার মোট দশ উপজেলার মধ্যে সদর উপজেলাসহ পাঁচটি আসনে নিরঙ্কুশ জয়লাভ করে জেএসএস। এবার পৌরসভা নির্বাচনেও জয় নিয়ে নিশ্চিত আশাবাদী তারা।  এদিকে দেখা যায়, রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে এবার মেয়র পদে লড়াই হবে ত্রিমুখী। লড়াই হবে তিন প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জেএসএস সমর্থিতদের মধ্যে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে মেয়র নির্বাচিত হবেন এ তিন প্রার্থীর একজন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী ডা. শিব প্রসাদ মিশ্র ভোটারদের মাঝে এখনো আলোচনায় আসতে পারেননি। অপর স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী অমর কুমার দে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকছেন কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়।এমজেড/এমএস

Advertisement