আন্তর্জাতিক

আসলেই কি আইএসকে ঠেকানো সম্ভব?

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) নৃশংসতা দিয়ে বিশ্বব্যাপী জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এর বিরুদ্ধে বিশ্বের পরাক্রমশালী দেশগুলো নেমেছে লড়াইয়ে। এতে অংশ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াসহ তাদের মিত্ররা। তাই বিশ্বের মনযোগ এখন আইএসের দিকে। কিন্তু এ লড়াইয়ে আসলেই কি আইএসকে ঠেকানো সম্ভব? আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য নীতির কট্টর সমালোচক জন মার্শেইমার আলজাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, প্রথাগত যুদ্ধে ইসলামিক স্টেটকে হারানো সম্ভব নয়, কেননা এর মাধ্যমে একটি আদর্শকে পরাজিত করা যায় না।আইএসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোটের হামলার বিষয়ে মার্শেইমার বলেন, সিরিয়ায় মার্কিন জোটের হামলার লক্ষ দুটি। প্রেসিডেন্ট বাশারকে ক্ষমতাচ্যুত করা ও পশ্চিমা জোটের বিমান হামলার শক্তি দেখানো। তিনি বলেন, আইএস যোদ্ধারা মার্কিন সামরিক বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে জড়াবে না। তারা তালেবানের কৌশল গ্রহণ করবে।সুতরাং আইএসকে ঠেকাতে শক্তি প্রয়োগে সমাধান নেই। এদিকে, বাশার আল আসাদকে ক্ষমতায় রাখতে রাশিয়া, ইরান এবং হেজবুল্লাহ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ফলে আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমের জন্য সহজ হবে না। এছাড়া আইএসের বিরুদ্ধে মার্কিন লড়াই শুরু হলেও সিরিয়ায় রাশিয়ার হামলা শুরুর পর সে হিসেবেও চিড় ধরেছে। কেননা ইতোমধ্যে আসাদকে নিয়ে প্রক্সি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে মস্কো ও ওয়াশিংটন। মার্শেইমার বলেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আইএসকে ঠেকানোর কোনো উপায় নেই। কেননা  আদর্শকে পরাজিত করা সহজ নয়। বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী আদর্শ হলো জাতীয়তাবাদ। কিন্তু উদারনীতি ও জাতীয়তাবাদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে অধিকাংশ সময়ই জাতীয়তাবাদের জয় হয়।   তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা   স্থলবাহিনী মোতায়েন করে প্রথাগত কৌশলে  আইএসকে পরাজিত করলে তারা (আইএস) তালেবানের মতো শুধু শহর এবং অন্যান্য এলাকায় অদৃশ্য হবে। কিন্তু এর ফলাফল হবে দুটো। এক. যুদ্ধশেষে তারা আরো বেশি ধ্বংশযজ্ঞ চালাবে। দুই. যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্ররা সিরিয়া এবং ইরাক থেকে যখন চলে যাবে তখন আফগানিস্তানে তালেবান যেভাবে ফিরে এসেছে সেভাবেই ফিরবে। অনেকেই মনে করেন আইএসের বিরুদ্ধে স্থলসেনা মোতায়েন হলে কেবল এ জঙ্গিগোষ্ঠীকে হারানো সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্র আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইতোমধ্যে স্থল বাহিনী মোতায়েনের চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে। এ বিষয়ে মার্শেইমার বলেন, শুধুমাত্র বিমান হামলা চালিয়ে আইএসকে ঠেকানো যাবে না। এজন্য স্থল সেনাও প্রয়োজন। অতীতে মধ্যপ্রাচ্যে স্থল সেনা মোতায়েনের ফল ইতিবাচক হয়নি। আর এ কারণেই ইউরোপীয়ান এবং আমেরিকানরা আইএসের বিরুদ্ধে স্থল সেনা পাঠানোর বিপক্ষে।  আইএসের উত্থানে যুক্তরাষ্ট্র দায়ী কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মার্শেইমার বলেন,  এতে কোনো সন্দেহ নেই। ২০০৩ সালে ইরাকে যখন মার্কিন হামলা শুরু হয় তখন আইএস ছিল না। সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ওই মার্কিন হামলার পর আইএসের উত্থান হয়। একই অবস্থা তৈরি হয়েছে সিরিয়ায়। কেননা ২০১১ সাল থেকে প্রেসিডেন্ট বাশারকে ক্ষমতা ছাড়া করতে দেশটিতে হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে।   তিনি বলেন, আইএসকে বেড়ে উঠতে উর্বর ভূমি  ও এর পেছনে ক্রীড়ানকের ভূমিকাও পালন করছে যুক্তরাষ্ট্র।  এসআইএস/এএইচ/এমএস

Advertisement