নুসরাত নাহার রেশমি চট্টগ্রাম সদরের নাসিরাবাদের মেয়ে। দেশে এ লেভেল পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য মালয়েশিয়ায় যান। মালয়েশিয়ার ‘ইউনিভার্সিটি অব মালায়ে’তে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। অনার্স শেষ করার পর ২০১৯ সালের শেষদিকে সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ পান। তখন মালয়েশিয়া থেকে সিঙ্গাপুরে যান। সিঙ্গাপুরের এসএসআই স্কুবা স্কুলে অ্যাকাউন্টস অ্যাসোসিয়েট হিসেবে ৬ মাস চাকরির পর করোনা বেড়ে গেলে দেশে ফিরে আসেন।
Advertisement
দেশে এসে মনমতো চাকরি না পাওয়ায় ভাবতে থাকেন, নিজে কিছু করবেন। বাবা ব্যবসায়ী হওয়ায় ব্যবসা সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা আছে। ব্যবসার কলা-কৌশল বাবার কাছ থেকেই রপ্ত করেছেন। সম্পূর্ণ নতুন ধরনের একটি ব্যবসা করতে চান রেশমি। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে ব্যবসা চালু করার সাহস হচ্ছিল না। অবশেষে অনেক ভেবে-চিন্তে অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসার কথা ভাবেন।
রেশমি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঢাকায় একটা কোম্পানিতে চাকরির জন্য আবেদন করি। কিন্তু সে সময় সিঙ্গাপুরে থাকা ও লকডাউনের কারণে ভাইভা মিস করি। তাই চাকরিটা পাইনি। আমার ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিলো চাকরি নয়তো ব্যবসা করার। চাকরি যেহেতু মনমতো পেলাম না আর এদিকে দেশে এখন করোনার প্রকোপ। তাই অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা করার চিন্তা করি।’
২০২০ সালের প্রথম লকডাউনের সময় রেশমি তার জমানো ১ লাখ টাকা দিয়ে ফেসবুকে ‘ফ্রেশিটা’ নামে পেজ খুলে অনলাইন ব্যবসা শুরু করেন। এরপর ডোমেইন হোস্টিং নিয়ে ফ্রেশিটা ডটকম নামে ওয়েবসাইট খোলেন। ফ্রেশিটার মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন রকমের ফল বিক্রি করে থাকেন। তবে চলতি মৌসুমে ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইট থেকে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে দেশি আম। আমগুলো তিনি রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট ও খাগড়াছড়ির রামগড়ের বাগান মালিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন।
Advertisement
এ সম্পর্কে রেশমি বলেন, ‘আমি আমার পেজ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আমের মৌসুমে প্রায় ৫ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছি। আমি সরাসরি বাগানের কৃষকদের কাছ থেকে আম কিনি। কৃষকদের ন্যায্য মূল্য বুঝিয়ে দিয়ে তাদের কাছ থেকে আম নেই। এতে কৃষকরাও লাভবান হন।’
রেশমি দেশি ফলের পাশাপাশি বিদেশি অর্গানিক ফলও বিক্রি করে থাকেন। বিদেশি ফলগুলোর মধ্য রয়েছে অস্ট্রেলিয়া থেকে সরাসরি ইমপোর্ট করা স্ট্রবেরি, কিউই, অ্যাভোকাডো, ব্ল্যাকবেরিসহ বেশ কিছু ফল। তিনি সরাসরি ইমপোর্টারদের কাছ থেকে ফল সংগ্রহ করেন বলে ঝামেলা পোহাতে হয় না।
ফ্রেশিটায় ফলের পাশাপাশি আছে বিভিন্ন রকমের পণ্য। যেমন বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী ‘চিনিপাতা’ শো-রুমের দই-মিষ্টি ও কুষ্টিয়ার কুলফিসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রসিদ্ধ খাবার। এছাড়াও নিজস্ব পণ্য ঘি, মধু, বরফিসহ দেশি-বিদেশি বাদাম পাওয়া যায়। প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন পণ্য।
রেশমি পণ্যগুলো অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে কুরিয়ারের মাধ্যমে সারাদেশের ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেন। এছাড়াও চট্টগ্রাম শহরের ভেতর হোম ডেলিভেরি দিয়ে থাকেন। তার মাধ্যমে করোনার সময়ে আরও দশ শিক্ষার্থীর আয়ের পথ বের হয়েছে। তারা পণ্য ডেলিভারি, প্যাকেজিং, সংগ্রহসহ বিভিন্ন কাজে রেশমিকে সাহায্য করেন।
Advertisement
রেশমির ইচ্ছা, করোনার প্রকোপ কমে গেলে চট্টগ্রামে একটি শো-রুম দেওয়ার। ফ্রেশিটাকে একটা ব্র্যান্ডে রূপান্তর করতে চান তিনি। পণ্যের গুণগত মান ঠিক রেখে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়াই লক্ষ্য তার। দেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চান রেশমি। সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী।
এসইউ/এমএস