নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৮ জন হতভাগ্য শ্রমিকের মরদেহ পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। তাদের একজনকেও দেখে চেনার উপায় নেই। তাদের পরিচয় খুঁজে বের করতে এখন শেষ ভরসা ময়নাতদন্তকালে ডিএনএ নমুনা হিসেবে সংরক্ষণ করা বুকের পাঁজর। নিহতদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে সংগৃহীত ডিএনএ’র নমুনার সঙ্গে ময়নাতদন্তকালে লাশের ডিএনএ নমুনা হিসেবে বুকের পাজরের সঙ্গে ম্যাচিং করে পরিচয় খুঁজে বের করা হবে।
Advertisement
নির্ভরযোগ্য দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, রূপগঞ্জের ঘটনাস্থলের ধ্বংসস্তূপ থেকে আনা ৪৮টি লাশের ময়নাতদন্ত শুক্রবার রাতে সম্পন্ন হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাকসুদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম ময়নাতদন্তে অংশগ্রহণ করেন। আরও দুজন হলেন প্রভাষক ডা. প্রদীপ বিশ্বাস ও দেবিকা রায়। ময়নাতদন্ত কার্য়ক্রমে তিনজন অংশগ্রহণ করলেও এটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে করা হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য জানাতে পারেননি।
সূত্র জানায়, নারায়নগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মোড়ানো লাশের প্যাকেটগুলো একে একে খুলে ময়নাতদন্তকালে ফরেনসিক মেডিসিন চিকিৎসক ও অন্যান্য ময়নাতদন্তকারী সহায়করা রীতিমতো আঁতকে ওঠেন। একটি লাশও দেখে চেনার উপায় নেই। প্রতিটি লাশ ভয়াবহভাবে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। পরিচয় খুঁজে বের করার জন্য লাশ থেকে নমুনা হিসেবে প্রত্যেকের বুকের পাঁজর সংগ্রহ করা হয়। তবে ভিন্ন একটি সূত্র জানায়, হাতে গোনা দুই থেকে তিনটি লাশ থেকে ডিএনএর নমুনা হিসেবে মাসল (মাংসপেশির নমুনা) থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
ময়নাতদন্ত কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. মোহাম্মদ মাকসুদ বলেন, ‘৪৮টি লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। লাশগুলো দেখে চেনার উপায় নেই। তারা ডিএনএ নমুনা হিসেবে লাশগুলোর পাঁজর (রিভ) সংরক্ষণ করা হয়েছে।’
Advertisement
এদিকে গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকেই লাশের দাবিদার রক্ত সম্পর্কের ঘনিষ্টজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা শুরু করেছে সিআইডির ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা।
নির্ভরযোগ্য দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, লাশগুলো বেওয়ারিশ হিসেবেই এখন দাফন করা হবে। পরবর্তীতে ডিএনএ’র মাধ্যমে লাশ চিহ্নিত হলে স্বজনদের জানিয়ে দেয়া হবে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের শীর্ষ দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান, ছয়তলা ভবনের রূপগঞ্জের ওই ফ্যাক্টরির প্রতিটি ফ্লোর ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার বর্গফুট। প্রতিটি ফ্লোরে লোহার তারের বেড়া দিয়ে এমনভাবে পৃথক কম্পার্টমেন্ট করা হয়েছে যাতে একটি থেকে আরেকটিতে কেউ না যেতে পারে। তা ছাড়া জরুরি নির্গমন সিঁড়িটি ছিল খুবই ছোট। যার ফলে হতভাগা শ্রমিকরা চোখের সামনে আগুণ দেখেও বের হতে পারেননি। ভয়াবহ আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে মরতে হয় তাদের।
গত ৮ জুলাই বিকেলে রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ঘটনার প্রথম দিন তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হন অর্ধশত শ্রমিক। ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ১৮টি ইউনিট ২০ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন প্রাথমিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর গত ৯ জুলাই সকালে ওই ভবনের চারতলা থেকে ২৬ নারীসহ ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সব মিলিয়ে এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ জনে। ২৯ ঘণ্টা পর ৯ জুলাই রাতে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন।
Advertisement
এমইউ/ইএ/জিকেএস