প্রায় কয়েক দশক আগের কথা। নাটোর শহর তখনও এতটা বিস্তৃত হয়নি। দেশ স্বাধীনের পরে নাটোর-ঢাকা মহসড়কের ধারে চকরামপুর এলাকায় স্থাপিত হয় গীতি সিনেমা হল। এ সিনেমা হলের পশ্চিম পাশে জীবিকার প্রয়োজনে শহরের ভবানীগঞ্জ এলাকার শরিফুল ইসলাম পচু নামের যুবক বেড়া দিয়ে ঘেরা জায়গায় শুরু করেন হোটেল ব্যবসা।
Advertisement
প্রথমদিকে দূরপাল্লার ট্রাক ড্রাইভার হোটেলটির খরিদ্দার হলেও সততা, দক্ষতা ও ভালো রান্নার কারণে ধীরে ধীরে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে সুনাম। বাড়তে থাকে ব্যবসার পরিধি। বেড়ার জায়গায় তৈরি হয় ইটের দেয়াল। তৈরি হয় সুসজ্জিত খাবারের হোটেল। নাম দেয়া হয় ইসলামিয়া হোটেল। তবে প্রথম থেকেই লোকে পচুর হোটেল বলে চিনতেন বলে সাইন বোর্ডে ব্রাকেটে রাখা হয় পচুর হোটেল।
পচুর হোটেলের গরুর গোস্ত ভুনা ও পরোটা সবচেয়ে বেশি মজার।এছাড়া তার দোকানের সব ধরনের খাবারের সুখ্যাতি ছিল এলাকাজুড়ে। প্রথম দিকে শরিফুল ইসলাম পচু নিজের হাতে রান্না করলেও পরে তদারকি করতেন। তার হোটোলে এখন পাচক হিসেবে কাজ করেন অনেকেই। কিন্তু প্রথমদিকে তার হাতের ভালো রান্নার জন্যই ছড়িয়ে পড়ে সুখ্যাতি।
এলাকাবাসী জানান, রান্না ভালো হওয়া পচুকে ডাকা হতো বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে।এভাবেই স্বনামধন্য হোটেল ব্যবসায়ী হিসেবে সুপরিচিত হয়ে উঠেন পচু। এই হোটেল ব্যবসা থেকেই তিনি সংসারের অভাব ঘুচিয়েছেন।সন্তানদের মানুষ করেছেন।কিন্তু বিধি বাম। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে ৭২ বছর বয়সে মারা যান তিনি। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) রাতে তার মৃত্যু হয়। শুক্রবার (৯ জুলাই)সকালে এ খবর পাওয়ার পর হার্টঅ্যাটাকে মারা যায় তার ছোট ভাই বাবলু।এছাড়া পচুর অপর ভাই জাহাঙ্গীর আলম করোনা আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে রয়েছেন।
Advertisement
এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর নান্নু শেখ জানান, শরিফুল ইসলাম পচু সুনাম ধন্য হোটেল ব্যবসায়ী ছিলেন। তার হাতের জশই আলাদা। সুস্বাদু খাবারের জন্য তার হোটেলে ভিড় লেগে থাকতো। এছাড়া তার সততায় সকলে মুগ্ধ ছিলেন। এমন দুই ভাইয়ের এক সঙ্গে মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
রেজাউল করিম রেজা/এএইচ/জেআইএম