ফেনীতে গত এক সপ্তাহ ধরে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি থাকলেও মানুষের মাঝে এ নিয়ে তেমন কোনো সতর্কতা নেই। শহরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ। অনেকের উপসর্গও দেখা দিয়েছে। তারপরেও তারা করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। তবে রোগীদের অভিযোগ, করোনা পরীক্ষা করাতে গেলে তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। উপসর্গে ভোগা ব্যক্তিদের ভাষ্য, করোনা এখন ঘরে ঘরে চলে এসেছে। করোনা টেস্ট করতে হাসপাতালে সকালে যেতে হয়। নমুনা দিতে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। তাছাড়া টেস্ট করলেই বেশিরভাগ ব্যক্তির পজেটিভ আসবে। তখন বাড়বে হতাশা, দুশ্চিন্তা ও চিকিৎসা ব্যয়। তাই তারা করোনা টেস্ট করতে আগ্রহী নয়।
Advertisement
ফেনীর শহর ও বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত এক সপ্তাহ ধরে জেলায় সাধারণ মানুষের মাঝে জ্বর, কাশি-সর্দি ও গলাব্যাথা রোগী আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। উপসর্গে আক্রান্ত এসব ব্যক্তি করোনা পরীক্ষা না করে পল্লী চিকিৎসকদের থেকে ওষুধ কিনে খাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ কিনে খাচ্ছেন। কিন্তু উপসর্গে আক্রান্ত ব্যক্তিরা হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও মানছেন না।
চিকিৎসকরা বলছেন, উপসর্গে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নমুনা পরীক্ষা করা হলে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮ থেকে ১০ গুন বৃদ্ধি পাবে। এসব রোগীদের পরীক্ষার আওতায় এনে চিহ্নিত করতে না পারায় তাদের মাধ্যমে পুরো কমিউনিটিতে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।
ফেনীর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে থাকা করোনা আক্রান্ত আবদুল করিম জানান, তিনি জুন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে জ্বর-কাশি ও গলা ব্যথায় ভুগছিলেন। ৩-৪ দিন পর হঠাৎ জ্বর ও গলাব্যাথা বেড়ে গেলে তিনি স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খান। কিন্তু জ্বর, কাশি ও গলাব্যাথা পুরোপুরি সারেনি। ২৫ জুন রাতে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে দ্রুত ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরদিন পরীক্ষায় তিনি করোনা পজিটিভ হন।
Advertisement
এদিকে তার সেবা করতে গিয়ে তার স্ত্রীও করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এখন করিম ও তার স্ত্রী দুইজনই ফেনী জেনারেল হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আবদুল করিমের স্বজন ও প্রতিবেশীরা জানান, উপসর্গ নিয়ে তিনি গ্রামের হাট-বাজার দোকানপাটসহ সর্বত্রই ঘুরেছেন। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে উপসর্গে ভুগলেও তিনি করোনা টেস্ট করেননি।
স্কুল শিক্ষিকা সাদিয়া সুলতানা এ্যানি অভিযোগ করেন, করোনা পরীক্ষার জন্য ফেনী সদর হাসপাতালে সকাল ১০টার দিকে রেজিস্ট্রেশন করে নমুনা দেয়ার জন্য ১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। উপসর্গে আক্রান্ত এসব ব্যক্তিদের প্রায় ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত হাসপাতাল ও আশপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরি করে সময় পার করতে হয়। বিশেষ করে নারী রোগী নমুনা দিতে আসলে দুর্ভোগের শেষ থাকে না। দীর্ঘ সময় নমুনা দেয়ার জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে অনেকেই হাসপাতালের বারান্দা অথবা মূল ফটকে গল্প আড্ডায় মেতে ওঠেন। এতে করে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। দীর্ঘসময় অপেক্ষার ভয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে করোনা পরীক্ষার আগ্রহ কম বলে মনে করেন তিনি। ফেনী শহরের পুলিশ কোয়ার্টার এলাকার পল্লী চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন জানান, গত এক সপ্তাহে তার ফার্মেসিতে জ্বর, সর্দি-কাশি ও গলাব্যাথার রোগী বেড়েছে। তার মতে, উপসর্গে আক্রান্তদের নমুনা পরীক্ষা করা হলে অন্তত ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যাবে।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ইকবাল হোসেন ভূঞা জানান, অচেতনতার কারণে দীর্ঘদিন উপসর্গে ভোগার পরও সাধারণ মানুষ করোনা পরীক্ষায় আগ্রহী হচ্ছে না। রোগী শনাক্ত করতে না পারায় দ্রুত গতিতে করোনা ছড়িয়ে পড়ছে।
Advertisement
এ বিষয়ে ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. রফিক উস ছালেহীন জানান, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য কমিটি ও জনপ্রতিনিধিরা করোনার বিষয়ে মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করছে। এছাড়াও ইসলামী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সকল মসজিদের ইমামদের এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ফেনী জেনারেল হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার নিবন্ধনের পর নমুনা সংগ্রহে যাতে সময় কম লাগে সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নুর উল্লাহ কায়সার/জেডএইচ/জিকেএস