শিক্ষা

প্রাথমিকে ‘মিড ডে মিল’ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ল ৬ মাস

প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিস্কুট বিতরণ তথা ‘দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং প্রকল্প’ মেয়াদ আরও ছয় মাস বেড়েছে। মেয়াদ বাড়লেও প্রকল্পে ব্যয় বাড়ছে না। প্রকল্পের উদ্বৃত্ত টাকা দিয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রাথমিকের ৩০ লাখ শিক্ষার্থীদের উচ্চ পুষ্টিমানের বিস্কুট বিতরণ করা হবে। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

Advertisement

প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি চেয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাতে সম্মতি দিয়ে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ‘প্রাইমারি স্কুল মিল প্রকল্প’র ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) সংশোধনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে এখনই এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি মিললে এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হবে। তবে বিস্তারিত না জানা পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে গত ১ জুন একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী ‘প্রাইমারি স্কুল মিল প্রকল্প’ অনুমোদন না দিয়ে ডিপিপি সংশোধনের প্রস্তাব দেন। নতুন প্রকল্প অনুমোদন না হওয়ায় এবং বিস্কুট বিতরণ প্রকল্পের মেয়াদ গত ৩০ জুন শেষ হয়ে যায়। নতুন প্রকল্পের ডিপিপি সংশোধন করতে অন্তত এক বছর সময় লাগবে। এই সময়ে বিস্কুট বিতরণ প্রকল্পের সুবিধাভোগী ৩০ লাখ শিক্ষার্থী অপুষ্টি ও ঝরে পড়ার আশঙ্কা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) ব্যয় না বাড়িয়ে আরও এক বছর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায়।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে হলে যৌক্তিকতা তুলে ধরে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠাতে হয়। কমিশন প্রস্তাব যাচাই বাছাই করে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ায়।

দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, দেশের দরিদ্রপীড়িত ১০৪টি উপজেলায় ২০১০ সাল থেকে প্রকল্পের অধীনে ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন ৭৫ গ্রামের এক প্যাকেট বিস্কুট বিতরণ করা হয়। বিস্কুট থেকে একজন শিক্ষার্থী প্রতিদিন ৩৩৮ কিলো ক্যালরি শক্তি পায়।

প্রকল্পটি প্রথম দফায় ২০১০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয়। পরবর্তী সময়ে প্রকল্প সংশোধন করে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ১৪২ কোটি ৭৯ লাখ ৯১ হাজার টাকা। এর মধ্যে জিওবি ৫৯৭ কোটি ৭০ লাখ ৫৭ হাজার টাকা ও প্রকল্প সাহায্য ৫৪৫ কোটি ৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।

বিস্কুট বিতরণের সফলতা থেকে সারা দেশের প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের দুপুরে খাবর দিতে প্রণয়ন করা হয় জাতীয় স্কুল মিল নীতিমালা-২০১৯। নীতিমালা অনুযায়ী ‘প্রাইমারি স্কুল মিল প্রকল্প’টি গত ১ জুন একনেকে উত্থাপন করা হয়। শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবর খিচুড়ি দেয়ার প্রস্তাব করায় প্রধানমন্ত্রী ডিপিপি সংশোধনের নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদেশে সফর রাখায় একনেক থেকে প্রকল্পটি ফেরত পাঠানো হয়। এ নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনায় পড়তে হয় সরকারকে।

Advertisement

দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং প্রকল্পটি গত ডিসেম্বরে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ‘প্রাইমারি স্কুল মিল প্রকল্প’ প্রকল্পটির অনুমোদনে বিলম্বের কারণে ব্যয় না বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত আরেক দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়। করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা যাতে ঝরে না পড়ে সেজন্য চলমান প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। মহামারির মধ্যেও শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিস্কুট বিতরণ করেন।

এমএইচএম/এআরএ/জেআইএম