জাতীয়

করোনায় শ্রম-স্বাস্থ্যগত সংকটের মুখে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে গভীরভাবে শ্রম ও স্বাস্থ্যগত সংকটময় পরিস্থিতির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছে এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ অ্যালায়েন্স। সংগঠনটির গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

Advertisement

প্রতিবেদনের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে এশিয়ার সাতটি দেশের ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা ও শিক্ষাবিদরা শ্রম অধিকার লংঘনের জন্য গ্লোবাল ফ্যাশন ব্রান্ডগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) ‘মজুরি চুরি : কোভিড-১৯ অতিমারির সংকটকালে গ্লোবাল ফ্যাশন ব্রান্ড সরবরাহ চেইনে শ্রম মজুরি চুরি’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্বে করেন এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ অ্যালায়েন্সের কো-অর্ডিনেটর অনন্যা ভট্টাচার্য্য।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসেন, ইন্দোনেশিয়া এফএসবি গারটেক্সের জেনারেল চেয়ারম্যান আরি জুকো সুলিশতা, শ্রীলংকার টেক্সটাইল গার্মেন্টস অ্যান্ড ক্লোথিং ওর্য়াকার্স ইউনিয়নের চিফ অরগানাইজার ললিতা, পাকিস্তান ন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি নাসির মুনসুর, ভারতের গার্মেন্টস লেবার ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট রূকমিনি, কম্বোডিয়ান অ্যালায়েন্স অব ট্রেড ইউনিয়নের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সার মোরা, ভারতের ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের প্রফেসর দেভ নাথান, ইউএসএ-এর ডিউক ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড ফাউন্ডিং ডাইরেক্টর অ্যামোরেটাস প্রফেসর গ্যারি গেরিফি, নেদারল্যান্ডের লিডেন ইউনিভার্সিটি অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর রত্মা সাপটারি, ইউএসএ-এর বুকনেল ইউনিভার্সিটির অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর শাহাম আজহার এবং গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট অ্যাট দ্য ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার ইউকে-এর অ্যামিরেটাস প্রফেসর স্টেফেনি বারিয়েন্টস।

Advertisement

অনুষ্ঠানে গৃহীত সুপারিশে বলা হয়, এশিয়ান পোশাকশ্রমিকদের সম্মানজনক কাজের সুযোগ ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য বিশ্ব সরবরাহ চেইনে শক্তি ও মুনাফা ব্যবস্থার কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে। শ্রমিকের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে গ্লোবাল ব্রান্ড ও বিশ্ব বাণিজ্যের ভোক্তাদের জন্য একটি নতুন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

এতে আরও বলা হয়, উৎপাদনশীল দেশগুলোতে আইনের মাধ্যমে বাধ্যতামূলকভাবে নূন্যতম মজুরি ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে ট্রেড ইউনিয়ন, ব্রান্ড ও খুচরা বিক্রেতারা স্বাক্ষরের মাধ্যমে একটি এনফোর্সেবোল ওয়েজ কন্ট্রাক্ট (ইডাব্লিউএ) তৈরি করতে হবে। নিয়োগ কর্তৃপক্ষের একটি যৌথ দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন বাংলাদেশের শ্রমিকদের পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কোভিড অতিমারির সময়ে কারখানা মালিক কর্তৃপক্ষ বিনা অজুহাতে প্রায় ৩০ হাজার গার্মেন্টস শ্রমিককে কাজ থেকে বঞ্চিত ও কোনো প্রকারে বেতন দিয়ে বা বেতন পরিশোধ না করেই চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছেন। এ শ্রমিকদের শূন্য হাতে গ্রামে ফিরে যেতে হয়েছে।

ওয়েবিনারে আলোচকরা এ গবেষণা প্রতিবেদনকে সময় উপযোগী একটি দলিল হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তারা বলেন, বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন ব্রান্ডসমূহের ব্যবসায়িক মডেলের মাধ্যমে শ্রমিকদের মজুরি ফাঁকি দেয়ার বিষয়টি গবেষণায় উঠে এসেছে। কোভিড-১৯ অতিমারির সংকটকালে এটা তীব্রতর হয়েছে। বর্তমানে গার্মেন্টস শ্রমিকরা ঋণ, ক্ষুধা ও স্বাস্থ্যহানিজনিত দুর্ভোগসহ মানবিক সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। এই অনিশ্চিত সময়ে গামেন্টস শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য বৈশ্বিক আইন প্রণয়নের আহ্বান জানান তারা।

Advertisement

ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে বিশ্বের ৪৮টি দেশের ৩৫০ জন প্রতিবেদনটির সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। এ গবেষণা কার্যক্রমটি বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান এবং শ্রীলংকার ১৮৯টি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান থেকে দুই হাজার ১৮৫ জন গার্মেন্টস শ্রমিককে সরাসরি সম্পৃক্ত করে পরিচালিত হয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে ১৫টি বৃহৎ ব্রান্ড এবং খুচরা সরবরাহকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে। যারা দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহে গার্মেন্টস কারখানায় হঠাৎ করে অর্ডার বাতিল করেছিল বা গার্মেন্টস কারখানায় অর্থ প্রদানে অস্বীকার করেছিল। যে কারণে শ্রমিকরা গণ-ছাঁটাইসহ শোষণের শিকার হয়েছে।

এইচএস/এএএইচ/জিকেএস