তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘দেশে কী কোনো হাহাকার আছে? আজকে ১৬ মাস করোনা বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে, একজন মানুষ তো না খেয়ে মৃত্যুবরণ করেনি। এটিই হচ্ছে সরকারের সফলতা।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব তো জনগণের পাশে দাঁড়াননি। উনি শুধু টেলিভিশনেই বক্তৃতা করেন। আর মাঝে-মধ্যে অনলাইনে উঁকি দিয়ে বক্তৃতা করেন, সে কারণেই তারা বিভিন্ন কথা বলছেন। আমরা ইনশাআল্লাহ এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারব। মির্জা ফখরুল সাহেবকে বলব—এ ধরনের পরামর্শ না দিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়ান।’
দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি নজর দেয়া নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পরামর্শের বিষয়ে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) এসব কথা বলেন।
এর আগে দুপুরে মন্ত্রী রাজধানীর মিন্টু রোডে তার সরকারি বাসভবন থেকে অনলাইনে চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয় সভার বৈঠকে সভাপতির বক্তৃতা করেন।
Advertisement
তথ্যমন্ত্রী এবং চট্টগ্রাম-৭ আসনের সংসদ সদস্য ড. হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীনের সঞ্চালনায় বৈঠকে বক্তৃতা করেন জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রামের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মো. তানভীর, চট্টগ্রামের ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ মমিনুর রহমান প্রমুখ।
বৈঠকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও অন্যান্য দফতরের প্রতিনিধিরা অনলাইন অংশগ্রহণ করেন। এতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলাসহ চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নে বিভিন্ন গণমুখী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন জেলার সমন্বয়ের দায়িত্ব সচিবদের দেয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সরকারি কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্ব সচিবরাই পালন করেন এবং সে হিসেবেই সচিবদের মূলত বিভিন্ন জেলায় সরকারি কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দায়িত্বাধীন জেলায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করেই তারা কাজ করছেন।’
তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক দেশের সরকার একটি রাজনৈতিক সরকার, এ রাজনৈতিক সরকারের দেশ পরিচালনা করার ক্ষেত্রে, করোনা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে, করোনা মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে, ত্রাণ তৎপরতা চালানোর ক্ষেত্রে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে অর্থাৎ কোভিড উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তগুলো সমন্বয় করার জন্যই সচিবদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।’
Advertisement
ড. হাছান বলেন, ‘সচিবরা যেসব জেলায় সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন, তারা সেখানে সেই জেলার মন্ত্রী, এমপিসহ অন্য জনপ্রতিনিধি সঙ্গে আলোচনা করেই সমন্বয়টা করছেন। সুতরাং এখানে কাউকে বড় বা খাটো করা হয়নি। সচিবরাই সরকারি কাজে সবসময় সমন্বয় করেন। এখানেও সমন্বয় করার জন্যই তাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।’
উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যেমন—চট্টগ্রামের সভা হচ্ছে, এই সভার সভাপতিত্ব করছি আমি। আর মোস্তফা কামাল সাহেব, যিনি সচিব চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়েকের দায়িত্ব পেয়েছেন, তিনি পুরো বিষয়টি সঞ্চালনা করছেন। আমরা সবাই আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছি এবং সেই সিদ্ধান্তগুলোই বাস্তবায়ন করা হবে। সমন্বয়ের দায়িত্ব যে সচিবকে দেয়া হয়েছে, তিনি সেই সমন্বয়টা করবেন। অন্যান্য জেলার ক্ষেত্রেও তাই।’
মেগা প্রকল্পগুলোর অর্থ কমিয়ে করোনার টিকা সংগ্রহের কাজে লাগানোর জন্য বিএনপি নেতা মোশাররফ হোসেনের প্রস্তাবের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপির মত জোড়াতালি দিয়ে আওয়ামী লীগ দেশ চালায় না। টিকা ক্রয়ের জন্য কোনো প্রকল্পের বরাদ্দ কমানোর প্রয়োজন নেই।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি নিজেরা দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ ছিল, সেজন্য তারা এদিক থেকে কাট করে ওদিক; এভাবে জোড়াতালি দিয়ে দেশ চালিয়েছে। তাদের সেই জোড়াতালি দিয়ে আমাদের দেশ চালাতে হবে না। প্রধানমন্ত্রী সফলভাবেই দেশ পরিচালনা করছেন, কোনো জায়গা থেকে কমিয়ে কোনো কিছু করতে হবে না। করোনা মোকাবিলার জন্য বিশেষত করোনার টিকা কেনার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।’
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি নজর দেয়া নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের পরামর্শের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার প্রথমদফা লকডাউনের সময় ৭ কোটির বেশি মানুষকে সহায়তা দিয়েছে। ইতোমধ্যে আরো কয়েক কোটি মানুষকে সহায়তা দেয়া হয়েছে এবং এই সহায়তা চলমান রয়েছে। একইসঙ্গে আমাদের দলের পক্ষ থেকেও পর্যাপ্ত পরিমাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা দলের সব নেতা-কর্মীদের জনগণের পাশে থাকতে বলেছেন এবং সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমাদের দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে।’
পরে টিভি নাট্য পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড এবং অভিনয় শিল্পী সংঘের নেতরা মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে তার বাসভবনে এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন। চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন ২০২১ এর আওতায় প্রযোজ্য ক্ষেত্রে টেলিভিশন শিল্পীদের অন্তর্ভুক্ত করায় মন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানান তারা।
এসময় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেন, ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশনস-এফটিপিও চেয়ারম্যান নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, ডিরেক্টরস গিল্ড সভাপতি সালাউদ্দিন লাভলু, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সাগর, অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম, সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম ও প্রেজেন্টারস প্ল্যাটফর্মের সাধারণ সম্পাদক আনজাম মাসুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আইএইচআর/এএএইচ/জেআইএম