ফিচার

অভিশপ্ত পুতুল, খুন করাই তার নেশা!

কানিছ সুলতানা কেয়া

Advertisement

আনাবেলা পৃথিবীর অভিশপ্ত পুতুলের মধ্যে একটি। এটি আর ১০টি সাধারণ পুতুল ছিল না কোনোদিনই। এর ভয়ংকর রূপের সাক্ষী হয়েছে প্রথম ডোনা নামের এক কিশোরী। সময়টা ১৯৭০ সাল, ইংল্যান্ড। ডোনার মা তাকে তার এক জন্মদিনে আনাবেলা পুতুলটি উপহার দিয়েছিলেন।

ডোনা ছোট থেকেই পুতুল নিয়ে খেলতে খুবই ভালোবাসতো। এমনকি সে যখন কলেজে পড়ে; তখনও পুতুল সঙ্গে নিয়ে ঘুমাত ডোনা। মেয়ের এমন পুতুল পছন্দ দেখে একবার তার জন্মদিনে আনাবেলাকে এনে দিয়েছিলেন। এটি দেখতে অন্যান্য পুতুলের মতোই ছিল। তবে ডোনার সংগ্রহে থাকা পুতুলগুলোর মধ্যে আনাবেলা ছিল একটু বড়।

ধীরে ধীরে ডোনা আনাবেলাকে খুবই ভালোবেসে ফেলে। খুবই আদর করতো তাকে। এরই মধ্যে আনাবেলার নাম শুনে হরর সিনেমার সেই দৃশ্যপটে হারিয়ে গেছেন নিশ্চয়ই! তবে সিনেমায় যে পুতুলটি দেখানো হয়েছে, সেটি বাস্তবের পুতুল থেকে একটু আলাদা ছিল।

Advertisement

সিনেমায় দর্শকদের পিলে চমকে দিতেই মূলত পুতুলটি একটি ভয়ংকর রূপ দিয়ে তৈরি করা হয়। বাস্তবের আনাবেলা ছিল তখনকার সময়ের অন্যান্য পুতুলগুলোর মতোই। পুতুলটির নাম আনাবেলা দিয়েছিল ডোনাই।

সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল।

সমস্যা শুরু হয় যখন ডোনা নার্সিং এ ভর্তি হয়। হোস্টেলে থাকার সময় সে আনাবেলাকেও সঙ্গে করে নিয়ে যায়। ডোনার রুমমেট ছিলেন এনজি নামের একটি মেয়ে। সেও ধীরে ধীরে আনাবেলাকে পছন্দ করতে শুরু করে। আনাবেলাকে নিয়ে প্রথম সন্দেহ হয় এনজির।

তারা দু’জনই লক্ষ্য করেন, আনাবেলাকে ঘরের যেখানে রেখে যাচ্ছেন; পরে এসে তাকে অন্যত্র দেখা যাচ্ছে। প্রথমত কল্পনা ভেবে তেমন পাত্তা দেয়নি তারা।

Advertisement

এরই মধ্যে ডোনা একদিন কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে আনাবেলাকে আর দেখতে পায়নি।

তখন সে পুরো ঘরে আনাবেলাকে খুঁজতে থাকে। এই সময় সে ঘরের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট চিরকুট পায়। একটি চিরকুট আনাবেলার হাতেও ছিল। যেখানে লেখা ছিল ‘হেল্প মি’। ডোনা সেটিকেও কারো ঠাট্টা ভেবে নেয়। বিষয়টিকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করে।

তবে বিষয়টি ভুলে যাওয়ার আগেই ডোনা একদিন আনাবেলার দিকে তাকিয়ে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করে। কাছে যেতেই সে দেখে আনাবেলার চোখে রক্ত। যেন সে কান্না করছে, খুব কষ্ট অনুভব করছে। ডোনা এবং তার বন্ধুরা বিষয়টিকে আর তুচ্ছ না ভেবে প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেটর এর সাহায্য নিবে বলে ঠিক করে।

তাদের বাসার কাছেই একজন প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেটর এবং এক যাজকের এর কাছে নিয়ে যায়। তারা দুইজনই আনাবেলাকে পরীক্ষা করেন। তারা বুঝতে পারেন আনাবেলার মধ্যে একটি আত্মা বসবাস করছে! আত্মাটি জানায়, ডোনা এবং এনজির সঙ্গে থাকতে চায় এবং তাদের ভালোবাসা পেতে চায়।

ওই আত্মার বয়স মাত্র ৭ বছর। যেহেতু ডোনা এবং এনজি নার্সের প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল, তাই তাদের মনে ছিলো অনেক দয়া। তারা আনাবেলাকে তাদের সঙ্গেই রাখতে চায়। তবে এটিই ছিল তাদের জন্য চরম ভুল। একদিন এনজির এক বন্ধু এসেছিল তাদের বাসায়। সে সময় ডোনা বাসায় ছিলেন না।

তবে লিও স্পষ্ট ডোনার চিৎকার শুনতে পায়। এরপর দৌড়ে তার ঘরে গেলে, সেখানে আনাবেলা ছাড়া আর কেউ নেই। হঠাৎ করেই লিও তার বুকে ব্যথা অনুভব করে। এনজি দেখে তাদের জামা রক্তে ভেজা এবং লিও’র বুকে ৭টি বড় বড় ক্ষত-বিক্ষত দাগ।

এরপর একজন ফাদারের সাহায্য চায় ডোনা এবং তার বন্ধুরা। ফাদার হেগান তাদের জানান, আনাবেলার মধ্যে যে আত্মাটি আছে, সেই বাচ্চা মেয়েটির লাশ অনেক বছর আগে এই বাসাতেই পাওয়া যায়। তখন তার লাশের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। সেই মেয়েটির আত্মাই এই পুতুলে ভর করেছে।

তবে সে একেবারেই ভালো আত্মা নয়। বরং ডোনা আর এনজির ক্ষতি করাই তার লক্ষ্য। এসব শুনে পিরে চমকে ওঠে ডোনা ও তার বন্ধুদের। তাদের অনুরোধে ফাদার এড এবং লরেন পুতুলটি মিউজিয়ামে রাখার সিন্ধান্ত নেন। যাওয়ার সময় আনাবেলাকে গাড়ির পেছনের সিটে বসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তারা।

হঠাৎ তারা বুঝতে পারেন যে গাড়ির ব্রেক ফেইল হয়ে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সে সময় এড মন্ত্র পড়ে পানি ছিটিয়ে দেন আনাবেলার উপর। এরপর তাদের গাড়ি স্বাভাবিক হয়।

মিউজিয়ামে পৌঁছে আনাবেলাকে তারা কাঠের বাক্সে বন্দি করে রাখে।

এরপর এড এবং লরেন বুদ্ধি করতে থাকে আনাবেলাকে তারা বিশেষ এক ধরনের বাক্সে বন্দি করবেন। যার উপরে থাকবে প্রার্থনা বাণীসহ নানা মন্ত্র। সেই থেকেই আনাবেলা মিউজিয়ামে বাক্সে বন্দি হয়ে আছে। তবে একবার একজন দর্শনার্থী আনাবেলাকে দেখে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে থাকে।

তিনি বলেন, এমন সাধারণ পুতুল কীভাবে ভুতুড়ে হতে পারে। সবই মিথ্যা ঘটনা। এসব শুনে আনাবেলা খুবই রেগে যায়। জানা যায়, বাড়ি যাওয়ার পথে সেই দর্শনার্থী দুর্ঘটনায় মারা যান। তার বাইক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। তার সঙ্গে একজন বান্ধবীও ছিলেন।

তিনিই পরবর্তীতে মিউজিয়ামে এসে এই ঘটনার কথা জানান। তারপর প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেটররা আনাবেলা পুতুলের মুখে হাসির রেখা দেখতে পেয়েছিলেন। এ ছাড়াও আনাবেলাকে নিয়ে গবেষণা করা এক ফাদারও আশ্চর্যজনকভাবে মারা গিয়েছিলেন।

তিনিও আনাবেলাকে নিয়ে ঠাট্টা করেছিলেন।

তবে এই ফাদার এবং সেই দর্শনার্থীর নাম কোথাও প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি যারা আনাবেলাকে পরীক্ষা করেছেন, তারাও পরবর্তীতে পুতুলটি নিয়ে আর কোনো কথা বলতে চাননি। ২০১৪ সালে আনাবেলার সত্যি ঘটনা অবলম্বনে হলিউডে একটি হরর সিনেমা তৈরি করা হয়।

সিনেমায় ব্যবহৃত পুতুলটির চোখ ছিল কাঁচের এবং সোনালি চুলের মাথাটি তৈরি করা হয় চীনামাটি দিয়ে।

২০০৬ সালে এড এবং লরেন দু’জনই মারা যান। এরপর তাদের মেয়ে জুডি এবং তার স্বামী টনি স্পেরা মিউজিয়ামে রাখা আনাবেলা পুতুলের দেখাশোনা করেন। অন্যদেরকে এই পুতুল থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন তারা।

আজও অভিশপ্ত এই পুতুলটি মিউজিয়ামে কাঁচের সুরক্ষা বাক্সে বন্দি আছে। চাইলে গিয়ে দেখে আসতে পারবেন।

তবে নিউ ইংল্যান্ড স্কেপটিকাল সোসাইটির তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে, ওয়ারেনস অবল্ট মিউজিয়ামের এসব অভিশপ্ত জিনিস না-কি পুরোপুরি ভুয়া।

সেইসঙ্গে আনাবেলা পুতুলের গল্পকেও তারা নিছিক বানানো বলেই মনে করছেন। তাদের ধারণা এড এবং লরেন দম্পতি শুধু মাত্র তাদের মিউজিয়ামের প্রচারণার জন্যই এমন গল্প রটিয়েছিলেন!

সূত্র: অ্যামিউজিন প্ল্যানেট

জেএমএস/এমকেএইচ