করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় হাসপাতালে রোগীর চাপ, অক্সিজেনের সঙ্কটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ইন্দোনেশিয়া। লকডাউন জারি করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। কোনভাবেই সংক্রমণ কমার কোনও লক্ষণ নেই। সংক্রমণ এবং মৃত্যু পাল্লা দিয়ে বাড়ছেই। খবর বিবিসি, এএফপি।
Advertisement
বেশ কিছু শহরে অক্সিজেন সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। ফলে অক্সিজেন সরবরাহের ক্ষেত্রে অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগে হাসপাতালগুলোকে প্রাধান্য দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সরকার। বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের সামর্থ্যের মধ্যে যা আছে তা নিয়েই তারা কাজ চালানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়ায় বাইরে তাবু টানিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও চিকিৎসকরা হিমসিম খাচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে লোকজনকে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং ভ্যাকসিন সম্পর্কে সচেতন করতে অপ্রচলিত বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশজুড়ে লকডাউনের সময়সীমাও আরও বাড়ানো হয়েছে। আগামী ২০ জুলাই পর্যন্ত লকডাউন জারি থাকবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ায় বর্তমানে প্রতিদিন ২৫ হাজারের বেশি নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে।
Advertisement
গত কয়েক মাসে ইন্দোনেশিয়ায় কয়েক লাখ কোভিড কেস শনাক্ত হয়েছে। ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের ভিড় বেড়ে যাওয়া এবং ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণেই সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার করোনা পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ।
চলতি সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে রাজধানী জাকার্তায়। এছাড়া জাভা এবং বালি দ্বীপেও সংক্রমণ বেড়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ইন্দোনেশিয়ায় নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ৩১ হাজার ১৮৯। অপরদিকে মারা গেছে ৭২৮ জন। কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, আগামী দিনগুলোতে হয়তো প্রতিদিন ৫০ হাজারের বেশি সংক্রমণ শনাক্ত হতে পারে।
এর আগে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সিতি নাদিয়া তারমিজি জানান, তারা গ্যাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেডিক্যাল অক্সিজেন উৎপাদনের আহ্বান জানিয়েছে। তিনি লোকজনকে অতিরিক্ত অক্সিজেন মজুত না করার আবেদন জানান।
অনাবশ্যক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বাড়িতে বসেই কাজের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া দোকান, রেস্টুরেন্ট খুলে রাখার ক্ষেত্রে সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
Advertisement
ইন্দোনেশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সুরাবায়ার হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ অনেক বেড়ে গেছে। ফলে নতুন করে আর কোনও রোগীকে ভর্তি করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বাড়িতে গুরুতর অসুস্থ ও মৃতপ্রায় রোগীদের স্বজনরা অক্সিজেন ট্যাঙ্কের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন।
করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যেও সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় এক হাজার চিকিৎসক মারা গেছেন। এদের মধ্যে ডজনখানেকের বেশি ইতোমধ্যেই ভ্যাকসিনের দু'টি ডোজই গ্রহণ করেছেন। কিন্তু তারপরেও তারা আক্রান্ত হয়েছেন এবং শেষ পর্যন্ত তাদের বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
জাভা দ্বীপে মসজিদ, পার্ক, শপিংমল, রেস্টুরেন্ট, অফিস বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু বিধি-নিষেধ অমান্য করে অনেক অফিস এবং দোকান-পাট খুলে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে জাকার্তা কর্তৃৃপক্ষ বলছে, তারা প্রতিবেশী সিঙ্গাপুরের কাছ থেকে জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন সহতায়তা চেয়েছে।
টিটিএন/এমকেএইচ