শিক্ষা

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে ডিজিটালাইজড হচ্ছে ডিআইএ

ডিজিটালাইজড হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের (ডিআইএ) সব কার্যক্রম। সফটওয়্যার ব্যবহার করে দ্রুত সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তদন্ত কাজ করা হবে। এতে কাজে গতি বাড়বে, কর্মকর্তাদের স্বচ্ছতা ও জবাদিহিতা তৈরি হবে। আগস্ট থেকে এটি কার্যকর হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

Advertisement

জানা গেছে, ডিআইএ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংস্থা। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কাজ দেশের সব ধরনের মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা নিয়মিত পরিদর্শন করে শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং স্বচ্ছ শিক্ষা প্রশাসন গঠনে সহায়তা করা। এ ছাড়া অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা তুলে ধরে সে বিষয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ পেশ করা। তার ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এ কাজ করতে গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। তার সঙ্গে জনবল সংকটের কারণে এ প্রতিষ্ঠানের কাজ কচ্ছপের গতিতে পরিণত হয়েছে।

আরও জানা যায়, ১৯৮০ সালে সরকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা বিভাগ তৈরি করে। এটি স্কটল্যান্ডের হার্জেস্টি ইন্সপেক্টর অফ অ্যাডুকেশনের আদলে তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সংস্থাটি এখন তার গতি হারিয়েছে। বর্তমানে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের মাধ্যমে বছরে গড়ে এক হাজার ৭০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা সম্ভব হয়ে থাকে। সারাদেশে ৩৬ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তদন্ত কাজ শেষ করতে প্রায় ২০ বছর লেগে যাবে। কিন্তু শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য নিয়মিত পরিদর্শন দরকার। এই চিন্তা থেকেই সরকারের এ প্রতিষ্ঠানটি ডিজিটালাইজ করতে অটোমেশন সফওয়্যারের তৈরি করা হয়েছে। ডিআইএ’র কর্মকর্তারা জানান, বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে ডিআইএ’র কাজের গতি বাড়ানো ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার হিসেবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর ৩১ ডিসেম্বর প্রায় ৪৮ লাখ টাকায় ডিআইএ অটোমেশন সফটওয়্যার তৈরির কাজ শুরু করা হয়। এরপর গত বছরের পহেলা মার্চ শিক্ষামন্ত্রী দীপুর মনি সে সফটওয়্যারের প্রথম ধাপের পাইলটিং কাজের উদ্ভোধন করেন। এর মাধ্যমে সহস্রাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সফলভাবে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়।

জানা গেছে, সফটওয়্যারের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তদন্ত কাজ করতে সেসকল ক্রটি ও অসঙ্গতি ধরা পরে তা সংশোধন করে চলতি বছরের জুন মাস থেকে দ্বিতীয় ধাপের পাইলটিং কাজ শুরু করা হয়েছে। বর্তমানে এ সফটওয়্যার পুরোদমে কার্যকর করতে চায় ডিআইএ। এটি উদ্বোধন করতে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে সময় চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে ডিআইএ কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

সংশ্লিষ্টরা জানান, এ সফটওয়্যারটি কার্যকর হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডিআইএ’র সকল কার্যক্রম সহজীকরণসহ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। এর বাস্তবায়নে পরিদর্শনজট কমবে, কর্মকর্তাদের কাজের গতি বাড়বে। এটি উদ্বোধনে শিক্ষামন্ত্রী সময় নির্ধারণ করলে ঈদুল আজহার পর যে কোনো সময় অটোমেশন সফটওয়্যারের কাজ পুরোদমে শুরু করা হতে পারে।

এ বিষয়ে ডিআইএ’র যুগ্ম পরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকার জাগো নিউজকে বলেন, অটোমেশন সফটওয়্যার কার্যকর হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তদন্ত কাজ অনেক দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হবে। আগে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করতে তিন মাস সময় নেয়া হলেও এখন তদন্ত কর্মকর্তা সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে যেসকল তথ্য পাবে তা ইনপুট (সফটওয়্যারে যুক্তকরণ) করলে তৎক্ষণাৎ সক্রিয়ভাবে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি হয়ে যাবে। এর জন্য বাড়তি সময় প্রয়োজন হবে না।’

তিনি বলেন, ‘আগে তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করতে নানা মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হতো। এখন সফটওয়্যারের মাধ্যমে সংগ্রহ করে সরেজমিনে যাবেন। কেউ তথ্য দিতে বিলম্ব করলে নির্ধারিত সময়ের পর সক্রিয়ভাবে সেটি ব্লক হয়ে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে একটি ম্যাসেজ চলে আসবে। তদন্তকারী কর্মকর্তা যে সকল নথি সংগ্রহ করবে তা সংরক্ষিত থাকবে, কোনো ধরনের অনিয়ম হলে সহজেই তা চিহ্নিত করা যাবে।’ অটোমেশন সফটওয়্যার ব্যবহারে ডিআইএ’র সকল কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে বলেও জানান এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

এমএইচএম/ইএ/এমএস

Advertisement