মহামারি করোনাভাইরাসের সঙ্কটকালীন এই সময়ে কুরবানি না করে পশুর মূল্য গরিব-দুঃখীদের দান করা যাবে কি? এতে কুরবানির হক আদায় হবে কি? কুরবানি না করে এ মূল্য দান করলে কি গোনাহ হবে?
Advertisement
‘না’, কুরবানি দাতার জন্য পশু খরিদ না করে বা কুরবানি না করে করোনার সঙ্কটকালীন সময়ে এ টাকা গরিব-অসহায় বা অন্য সেবামূলক কাজে ব্যয় করা যাবে না। যার ওপর কুরবানি আবশ্যক তাকে কুরবানি করতে হবে। কারণ-
ইসলামি শরিয়তের একটি স্বতন্ত্র হুকুম কুরবানি। সাহাবায়ে কেরাম একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই কুরবানি কি?রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এটা তোমাদের পিতা হজরত ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম)-এর সুন্নাত (রীতিনীতি)। এ কুরবানির বিশেষে আমলও বটে। হাদিসে এসেছে-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কুরবানির দিনগুলোতে আল্লাহর কাছে পশুর রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে অধিক পছন্দনীয় আমল আর নেই।’ (তিরমিজি)
কুরবানি করার ব্যাপারেও কুরআনের নির্দেশ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন- فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ‘অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কুরবানি করুন।’ (সুরা কাউসার : আয়াত ২)
Advertisement
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা কুরবানি সম্পর্কে মানুষের সামনে এ বক্তব্য পেশ করার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন-قُلْ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ للهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ‘(হে রাসুল! আপনি) বলুন, অবশ্যই আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই।’ (সুরা আনআম : আয়াত ১৬২)
অতএব কুরবানির এসব নির্দেশনা আসার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি বছর কুরবানি করেছেন ।’ (তিরমিজি)
মনে রাখতে হবেযে ব্যক্তির উপর কুরবানি ওয়াজিব হয়েছে ওই ব্যক্তির জন্য কুরবানির নির্ধারিত দিনগুলোতে পশু জবাই করলেই কেবল কুরবানির হুকুম আদায় হবে। কুরবানি না করে এর পরিবর্তে পশুর মূল্য দান-সাদকা করে দিলে কুরবানির ওয়াজিব আদায় হবে না। বরং ওয়াজিব বিধান লংঘন করার কারণে গোনাহগার হতে হবে।
সুতরাং মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে কুরবানি না করে পশুর মূল্য দান করে দিলে কুরবানি যেমন আদায় হবে না। তেমনি কুরবানি না করে পশুর মূল্য দান-সাদকাও করা যাবে না। কেননা দান-সাদকা কুরবানির বিান, স্থান বা আমল পরির্তন করতে পারে না।
Advertisement
উল্লেখ্য, যদি কোনো অঞ্চলে পশু সংকট দেখা দেয় তবে গরু, মহিষ, উট- এধরণের বড় একটি পশুতে সাতজন শরিক হয়ে কুরবানি দিতে পারবে। অথবা যার উপর কুরবানি আবশ্যক হয়েছে তার পক্ষ থেকে এক বছর বয়সের একটি ছাগল দিয়ে, কুরবানি আদায় করবে। অন্যথায় গোনাহগার হতে হবে।
মুসলিম উম্মাহর উচিত, যার উপর কুরবানি ওয়াজিব; সে যেন তা যথাযথভাবে আদায় করে। কুরবানির পর চাইলে যে কেউ ব্যক্তি উদ্যোগ বা সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যেমে সাধ্যমতো করোনা সঙ্কট উত্তরণে কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে।
আল্লাহ তাআলা বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহকে করোনাকালীন এ সময়ে কুরবানি আদায়সহ গরিব-দুঃখী ও অসহায়দের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম