বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি তিনি। এখনও সুস্থভাবে জীবন উপভোগ করছেন। জীবনে প্রচুর কষ্ট করেছেন তিনি। পরিবারের সবার মুখে খাবারের যোগান দিতে দিন-রাত কৃষিকাজ করেছেন। তবুও ক্লান্ত হয়ে পড়েননি। হাসিমুখে ও ভালোবেসে পরিবারের সবার দায়িত্ব ঘাড়ে তুলে নিয়েছেন। তার মতে, ‘ভালোবাসা এবং ভালো কাজের বিনিময়েই ১১২ বছর বেঁচে আছি!’
Advertisement
বলছি, পুয়ের্তো রিকোর এমিলিও ফ্লোরেস মারকেজের কথা। বর্তমানে তার বয়স ১১২ বছর। খুব শিগগিরই তিনি ১১৩ বছরে পদার্পন করবেন। বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি (পুরুষ) জীবিত হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম উঠেছে তার।
পুয়ের্তো রিকোর ক্যারোলিনায় ১৯০৮ সালের ৮ আগস্ট জন্মগ্রহণকারী তিনি। ১১ ভাইবোনের মধ্যে এই ব্যক্তি দ্বিতীয়। যদি শিক্ষার তেমন সুযোগ পাননি মারকুইজ। কারণ খুব অল্প বয়স থেকেই, সে তাদের আখ খামারে বাবাকে সহায়তা করে এসেছেন।
পরিবারের প্রথম পুত্র হিসেবে সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে মারকুইজের উপর। তিনি গৃহস্থালির কাজ, ছোট ৯ ভাইবোনের দেখাশোনা সবই করতেন। তিনি বলেন, ‘ভাইবোনদের মধ্যে আমি বড় ছিলাম, তাই আমি সব কিছু আমিই করতাম।’ কৃষিকাজেই মারকুইজ তার নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। তিনি একাই বিরাট সংসারের বোঝা টেনেছেন হাসি মুখে।
Advertisement
আন্দ্রেয়া পেরেজের সঙ্গে মারকুইজ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর তাদের সংসার আরও বড় হতে শুরু করে। একে একে চার সন্তানের বাবা হন মারকুইজ। পেরেজের সঙ্গে মারকুইজের সংসার যখন ৭৫ বছর অতিক্রম করেছেন; তখনই মারা যান পেরেজ।
যিনি ২০১০ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মারকুইজের এখন ৫ জন নাতি-নাতনি আছেন। বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি হিসেবে গিনেস বুকে নাম ওঠাতে পেরে গর্বিত মারকুইজ। সেইসঙ্গে তার পরিবারও অনেক খুশি।
বর্তমানে পুয়ের্তো রিকোর রিও পাইদ্রেসে থাকেন মারকুইজ। যেখানে তার দুই সন্তান তির্সা এবং মিলিটো তার দেখাশোনা করেন। ১০১ বছর বয়সে মারকুইজের শরীরে পেসমেকার বসানোর জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। এরপর থেকে সুস্থ হয়েই জীবনযাপন করছেন বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক এই ব্যক্তি। যদিও তার শ্রবণশক্তি কমেছে, তবে এখনো দিব্যি জীবন উপভোগ করে চলেছেন।
দীর্ঘায়ুর বিষয়ে মারকুইজ জানান, ‘আমি বিশ্বাস করি, সুখীভাবে বাঁচলে আপনি সুস্থ থাকবেন। এজন্য প্রচুর ভালবাসা প্রয়োজন এবং রাগ ছাড়াই জীবনযাপন করা দরকার। আমার বাবা আমাকে সবসময় পরিবারসহ সবাইকে ভালোবাসতে বলতেন।’
Advertisement
‘বাবা আমাকে এবং আমার ভাইবোনদেরকে সবসময় ভালো কাজ করার পরামর্শ দিতেন। আমরাও আজীবন বাবার পরামর্শ অনুযায়ীই চলেছি। ভালোবাসা ও ভালো কাজ করলে আপনার মধ্যে আনন্দ অনুভূতির সৃষ্টি হবে। মানসিকভাবে সুস্থ থাকলেই শারীরিক সব অসুস্থতাকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে পারবেন।’
মারকুইজের আগে বিশ্বের প্রাচীনতম জীবিত ব্যক্তি হিসেবে গিনিস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লেখান রোমানিয়ার দুমিত্রু কমেসেকু। তিনি ২০২০ সালের ২৭ জুন তিনি এই স্বীকৃতি গ্রহণ করেন। এর এক মাস পরেই তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর পরেই গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস মারকুইজকে বেছে নেয়। যিনি দুমিত্রুর চেয়েও তিন মাসের বড়।
সবচেয়ে বেশি বয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে বেঁচে ছিলেন জেন কলমেন্ট (ফ্রান্স)। তিনি বেঁচে ছিলেন ১২২ বছর ১৬৪ দিন। অন্যদিকে আরও একজন প্রাচীনতম ব্যক্তি জিরোমন কিমুরা (জাপান), বেঁচে ছিলেন ১১৬ বছর ৫৪ দিন।
বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি জীবিত (নারী) জাপানের কেন তানাকা। ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ১১৭ বছর ৪১ দিন বয়সে তিনি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকের্ড স্বীকৃতি পান। এখন তার বয়স ১১৮ বছর ১৭৯ দিন। তিনি বর্তমানে জাপানের ফুকুয়োকায় বসবাস করছেন।
সূত্র: গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস
জেএমএস/জিকেএস