আজ ৯ ডিসেম্বর। করিমপুর মুক্ত দিবস। প্রতি বছরই ফরিদপুরবাসী গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে দিনটি স্মরণ করে থাকে। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ফরিদপুরের করিমপুরে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধা কাজী সালাউদ্দিন আহম্মেদ ও মেজবাউদ্দিন নোফেলসহ সাতজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা কারার জন্য হত্যা করা হয় আরও চার গ্রামবাসীকে। পরাজয় আসন্ন জেনে যশোর-খুলনা অঞ্চল হতে পাকিস্থানি বাহিনী পিছু হটতে শুরু করে। পিছু হটে আসা যশোর থেকে ঢাকাগামী পাকসেনাদের একটি গাড়িতে শহীদ সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে প্রায় ৭৪ জন মুক্তিযোদ্ধা গ্রেনেড চার্জ করে উড়িয়ে দেয়। ফরিদপুর শহর থেকে মাত্র ১০কিলোমিটার দূরে কানাইপুর ইউনিয়নের করিমপুর সেতুর নিকট সম্মুখ যুদ্ধের ওই ঘটনাটি ঘটে। কিছুক্ষণের মধ্যে সেনাবাহিনীর একটি বড় বহর ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছালে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হয়। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা তিন-চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পাল্টা গুলি করতে করতে পিছু হটে করিমপুর গ্রামে আশ্রয় নেয়। হানাদার বাহিনী গ্রামটি ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল যে বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল সে বাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে পুড়ে শহীদ হন সাত মুক্তিযোদ্ধা।সেখানে মুক্তিযোদ্ধা সালাউদ্দিন ও নৌফেল ছাড়াও শহীদ হন আব্দুল ওয়াহাব, সোহরাব হোসেন, আব্দুল আওয়াল, আব্দুল হামিদ ও মজিবুর রহমান। গ্রামবাসীদের মধ্যে শহীদ হন তিন সহোদর বাকেলউদ্দীন মন্ডল, হযরত উদ্দীন মন্ডল, হাশেম আলী মন্ডল ও স্থানীয় কৃষক আবু খাঁ। মুক্তিযোদ্ধা আমিনুর রহমান ফরিদ বলেন, দেশ স্বাধীনের শেষ মুহূর্তে এই দিনটিতে ফরিদপুরে ঘটে যায় অনেক বড় সম্মুখ যুদ্ধ। করিমপুরের যুদ্ধে আমাদের সহযোদ্ধাসহ গ্রামের নিরীহ মানুষকে হত্যা করে পাকহানাদাররা। নিহত ৪ পরিবারের সদস্যরা এখনও মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। বিজয়ের পর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আগুনে পোড়া দেহাবশেষ উদ্ধার করে ফরিদপুরের আলীপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়। নিহত পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধারা করিমপুরের যুদ্ধস্থলে ১টি স্মৃতি সৌধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছে। তাদের দাবি এখানে একটি স্মৃতিসৌধ বা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ হলে আগামী প্রজন্ম করিমপুর যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারবে। এসএম তরুন/এসএস/আরআইপি
Advertisement