জাতীয়

বিধিনিষেধেই কাটতে পারে ঈদ

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি তো হচ্ছেই না বরং দিন দিন অবনতি হচ্ছে। প্রতিদিনই মৃত্যু ও সংক্রমণের হার রেকর্ড ভাঙছে। কঠোর বিধিনিষেধের (লকডাউন) মেয়াদ আরও এক দফা বাড়ানো হয়েছে। আগামী ১৪ জুলাই বিধিনিষেধের এই মেয়াদ শেষে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদের বাকি থাকবে এক সপ্তাহ।

Advertisement

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি যে পর্যায়ে রয়েছে সহসাই তা নিয়ন্ত্রণে আসার সম্ভাবনা নেই। তাই বিধিনিষেধের মধ্যেই কাটতে পারে এবারের ঈদ। কোরবানির পশু কেনাকাটা সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে সম্পন্ন করতে কিছুটা শিথিল হতে পারে বিধিনিষেধ। ঈদের সময় শহর ছেড়ে গ্রামে যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না, এটা অনেকটাই নিশ্চিত।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২১ বা ২২ জুলাই দেশে মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। ২১ জুলাই ঈদ হলে আগামী ২০, ২১ ও ২২ জুলাই (মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতি) ছুটি থাকবে, এরপর ২৩ ও ২৪ জুলাই (শুক্র ও শনিবার) দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি। ২২ জুলাই ঈদ হলে ঈদের ছুটি থাকবে ২১, ২২ ও ২৩ জুলাই (বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার), এক্ষেত্রে ঈদের ছুটির একদিন চলে যাবে সাপ্তাহিক ছুটির মধ্যে।

কোনো কারণে বিধিনিষেধ না থাকলেও, এই পরিস্থিতিতে সরকার ঈদের ছুটি দিলেও কর্মস্থল এলাকায় থাকতে হবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। আবার ছুটি কমিয়েও দেয়া হতে পারে। যেমনটি গত ঈদুল ফিতরের সময় ছুটি একদিন কমিয়ে দেয়া হয়েছিল।

Advertisement

করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের ঈদ ব্যবস্থাপনা কেমন হবে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছি। কারণ ঈদ আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা দুই সপ্তাহ ধরে যে অর্জনটা করব, সেটা যেন তৃতীয় সপ্তাহে গিয়ে নষ্ট না হয়, সে বিষয়ে আমরা চিন্তা-ভাবনা ইতোমধ্যে শুরু করেছি।’

তিনি বলেন, ‘একটি সুপরিকল্পনার মধ্য দিয়ে আমরা ঈদের সপ্তাহ ট্যাকেল করার চেষ্টা করব। আমরা দেখছি কীভাবে কী করা যায়।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কোরবানির পশুর হাটগুলো ডিজিটালি খুব বেশি ইফেকটিভ করার চেষ্টা করছি। মানুষ যাতে গরু কিনতে কম বের হয়। (ঈদের সময়) বাড়ি যাওয়ার ইম্প্যাক্টটি আমরা এখন বেশি পাচ্ছি। আমরা চ্যালেঞ্জগুলো সামনে রেখে কীভাবে ছক করা যায়, সেটি ঠিক করব। কীভাবে কী করব ১২-১৩ জুলাইয়ের মধ্যে সেই অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন হবে।’

ঈদে গ্রামে যাওয়ার সুযোগ থাকবে কিনা- জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যে পরিস্থিতি তাতে মনে হয় ওটা করার আর স্কোপ থাকবে না। আমাদের সংযত হতে হবে। কারণ এবার এমনভাবে ভাইরাস ছড়িয়ে গেছে যে, অবস্থা খুব মারাত্মক। এই ১৪ দিনে কতটুকু আমরা ফল পাব, সেটা দেখতে হবে। সেটা দেখার বিষয় আছে। কারণ এটা (করোনা সংক্রমণ) একেবারে রুট লেভেল পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। গ্রামের মানুষ তো এত সচেতন নয়। আগে গ্রামে (করোনা সংক্রমণ) ছিল না, ওনারা ঈদে বাড়ি গিয়ে সব ছড়িয়ে দিয়ে এসেছে। এখন যারা মারা যাচ্ছেন তারা ১৪ থেকে ২০ দিনের আগের রোগী।’

Advertisement

ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘১৪ দিনে সুফল পেলেও আমাদের কার্যক্রম খুবই সুনিয়ন্ত্রিত ও সুপরিকল্পিত হবে। এই অবস্থাটা ঈদ পর্যন্ত রাখা গেলে ভাল হতো। তবে আমাদের সবকিছু চিন্তা-ভাবনা করতে হচ্ছে। যদিও কিছুটা রিল্যাক্স হয় সেটাও সুপরিকল্পিতভাবে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সংক্রমণ কমিয়ে আনতে যা করা দরকার আমরা করব। মোটামুটি সংক্রমণ কমিয়ে আনতে আমাদের এক মাস প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে ঈদটা যেহেতু সামনে আছে সেটা খুবই সংযতভাবে আমাদের পার করতে হবে। তৃতীয় সপ্তাহটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেটা ধরেই আমরা কাজ করব। চ্যালেঞ্জগুলো আমরা কীভাবে সুন্দরভাবে ম্যানেজ করতে পারি সেই পরিকল্পনা করছি।’

দেশে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করলে সরকার গত ১ জুলাই থেকে সাতদিনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে। দেয়া হয় ২১টি নির্দেশনা। বিধিনিষেধের পাঁচদিন পার হতে চললেও করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। কিন্তু সেই বিধিনিষেধের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল বুধবার (৭ জুলাই) মধ্যরাতে। এরমধ্যে বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর সুপারিশ করে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এই প্রেক্ষাপটে বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে।

বিধিনিষেধে জরুরি সেবা দেয়া দফতর ও সংস্থা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিস, যন্ত্রচালিত যানবাহন, শপিংমল, দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। তবে খোলা রয়েছে শিল্প কারখানা। জনসমাবেশ হয় এমন কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজনের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী। বিধিনিষেধ ভেঙে বাইরে বের হওয়া ব্যক্তিদের প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা বা কারাদণ্ড দেয়া হচ্ছে।

সবশেষ সোমবার (৫ জুলাই) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে আরও ১৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে একদিনে এটাই সর্বোচ্চ মৃত্যু। একই সঙ্গে করোনা শনাক্তের রেকর্ডও হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৯ হাজার ৯৬৪ জনের দেহে এই ভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে।

আরএমএম/জেডএইচ/জিকেএস