অর্থনীতি

অনলাইনভিত্তিক শ্রমবাজারের ১৬ ভাগ বাংলাদেশের দখলে : সিপিডি

বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অনলাইনভিত্তিক শ্রম সরবরাহকারী দেশ। বিশ্বের অনলাইনভিত্তিক শ্রমবাজারের ১৬ শতাংশ এখন বাংলাদেশের দখলে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

Advertisement

সোমবার (৫ জুলাই) ‘ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ইকোনমি’ শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল সংলাপে জরিপের এ তথ্য তুলে ধরা হয়। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ এবং ফ্রেডরিখ-ইবার্ট-স্টিফটুং (এফইএস), বাংলাদেশ অফিস যৌথভাবে এ সংলাপের আয়োজন করে।

সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডি-এর জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী সৈয়দ ইউসুফ সাদাত। তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্বের অনলাইনভিত্তিক শ্রমবাজারের ১৬ শতাংশ এখন বাংলাদেশের দখলে এবং বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অনলাইনভিত্তিক শ্রম সরবরাহকারী দেশ।

সৈয়দ ইউসুফ সাদাত বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ২ হাজার ওয়েব-ভিত্তিক উদ্যোক্তা এবং প্রায় ৫০ হাজার ফেসবুকনির্ভর উদ্যোক্তা রয়েছেন। বিশেষত চলমান কোভিড অতিমারির প্রেক্ষিতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসায়ের সুযোগ বেড়েছে। আগামী এক বছরে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রায় পাঁচ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

Advertisement

সংলাপে মূল প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইন্টারনেটের বিস্তার এবং স্মার্টফোনের জনপ্রিয়তার কারণে যদিও প্রচুর মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপ) বাজারে আসছে, সেই অ্যাপগুলোর বিষয়ে এখনো কোনো যথাযথ নীতিমালা তৈরি হয়নি। এছাড়া গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য অনেক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকেই নিজেদের কৌশলগত পন্থায় পরিবর্তন আনতে হবে এবং গ্রাহক সেবার গুণগতমান নিশ্চিত করতে হবে।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মভিত্তিক অর্থনীতির প্রসারের কৌশল হিসেবে এতে কিছু সুপারিশ করা হয়। সেগুলো হলো- পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করা, সময়মতো পরিষেবা সরবরাহ করা, ই-শপের জন্য দক্ষ ইনভেনটরি পরিচালনা, নমনীয় রিটার্ন পলিসি, সার্বিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। এর ফলে বাংলাদেশের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মনির্ভর অর্থনীতির বিকাশ ত্বরান্বিত হবে।

দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং সংশ্লিষ্ট নানামুখী চ্যালেঞ্জের ওপরে জোর দিয়ে সিপিডি-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এবং এফইএস বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি ফেলিক্স কোলবিৎজ সংলাপে সূচনা বক্তৃতা করেন।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধাগুলো কাজে লাগাতে হলে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। মানবসম্পদের দক্ষতা বাড়ানো, আর্থিক সুবিধা এবং নীতিমালা তৈরি করে এ খাতটি থেকে আমরা লাভবান হতে পারব। উদ্যোক্তা ও ভোক্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থান তৈরিতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

Advertisement

ফেলিক্স কোলবিৎজ বলেন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মভিত্তিক অর্থনীতি একটি সম্ভাবনাময় খাত। প্রভাবশালী স্টেকহোল্ডারদেরকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে এ ধরনের গবেষণা ও আলোচনা এই নতুন খাতগুলোর প্রসারের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করবে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. এম আসাদুজ্জামান বলেন, এই খাতে ক্রমাগত প্রযুক্তিগত অভিযোজনের ব্যাপার থাকে, সে কারণে প্রশিক্ষিত ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল অপরিহার্য।

এই খাতে, বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সিং-এ রেমিট্যান্স নিয়ে আসার বিষয়টিকে সহজ করার জন্য যথেষ্ট নীতি সহায়তা বা পলিসি সাপোর্ট প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সিনিয়র সহসভাপতি ফারহানা এ রহমান।

অভ্যন্তরীণ বাজার বাড়ানোর জন্য দেশীয় প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার, আরও বেশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির দিকে নজর দেয়া, ফেসবুকনির্ভর ই-কমার্সের ক্ষেত্রে একটি ডেটাবেজ তৈরির মাধ্যমে অথেন্টিকফিকেশন তৈরি করা ইত্যাদি বিষয়ের ওপরেও জোর দেন ফারহানা এ রহমান।

সংলাপে অংশ নিয়ে পাঠাও-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হুসেইন মো. ইলিয়াস উচ্চমানের প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনবল, নীতিমালার নিয়ন্ত্রণ ও সুষ্ঠু বাস্তবায়ন অভাবকে এই খাতের চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরেন।

সেবা এক্সওয়াইজেডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও চিফ অপারেশনস অফিসার ইলমুল হক সজীব বলেন, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের একটা বড় অংশ রয়েছে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে, যাদের নিয়ে কাজ করার সুযোগ প্রচুর। তাই ই-কমার্স খাতে ব্যবসায় প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও ব্যবহারবান্ধব করা প্রয়োজন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন অথোরিটির মধ্যে সিনক্রোনাইজেশন এবং পণ্য শোকেসিং বা উপস্থাপনার সুবিধার বিষয়গুলো তুলে ধরেন।

এছাড়াও সংলাপে আলোচক হিসেবে ব্ক্তৃতা করেন গারবেজম্যান-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম উদ্দিন শুভ, আইফার্মার-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহাদ ইফাজ এবং ডক্টোরোলা লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও পালস হেলথকেয়ার সার্ভিসের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আবদুল মতিন ইমন।

তাদের বক্তব্যে একটি রেগুলেটরি বা নিয়ন্ত্রক স্যান্ডবক্স তৈরি, ব্লকচেইন প্রযুক্তি, মূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজার প্রতিযোগিতা প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে।

সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি দেশের অর্থনীতিকে আগামীতে এগিয়ে নিতে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রেক্ষিতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ইকোনমির গুরুত্ব তুলে ধরেন। আর সেজন্য বিদ্যমান বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্মিলিতিভাবে কাজ করতে হবে বলে মত দেন।

এমএএস/এএএইচ/জিকেএস