পল্লী বিদ্যুতের কর্মচারী শাহ আলম হাওলাদার (৬৫) থাকতেন রাজধানীর খিলক্ষেতে। সপ্তাহখানেক আগে তার শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি হন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় রোববার (৪ জুলাই) দুপুরে তাকে মহাখালীর ডিএনসিসি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। ২৪ ঘণ্টার মাথায় সোমবার (৫ জুলাই) দুপুরে তিনি মারা যান।
Advertisement
শাহ আলম হাওলাদারের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন স্ত্রী লুৎফা বেগম। পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে হাসপাতালের ফটকে কান্না করছিলেন তিনি। লুৎফা বেগম বলেন, ‘স্বামী খিলক্ষেতে থাকলেও আমি থাকতাম গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীতে। করোনা সংক্রমণের খবর পেয়ে লকডাউনের আগেই ঢাকায় আসি। হাসপাতালে স্বামীর সেবা করি। কিন্তু তারপরও স্বামীকে বাঁচাইতে পারলাম না।’
জানা গেছে, শাহ আলম হাওলাদারের সংসারে চার মেয়ে এবং দুই ছেলে রয়েছে।
সোমবার দুপুর ২টার দিকে রাজধানীর কচুক্ষেত থেকে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন সালমা আহমেদ (৫২)। তিনিও দুদিন আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়ায় আজ তাকে হাসপাতালে ভর্তির জন্য আনা হয়। পরে সালমা আহমেদকে হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) ভর্তি করান চিকিৎসকরা।
Advertisement
এভাবে আজ সোমবার সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের ২২ জন রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১০ জনকে আইসিইউতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বাকিরা এইচডিইউতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ডিএনসিসি করোনা ডেডিকেট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, এক সপ্তাহ ধরে এ হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি বেড়েছে। এখন দিনে গড়ে ৬০ জন করে ভর্তি হচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে এক হাজার শয্যার এই হাসপাতালে আর কোনো শয্যা ফাঁকা থাকবে না। করোনা চিকিৎসা নিয়ে হাহাকার পরিস্থিতি তৈরি হবে। নাগরিকদের সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই।
করোনা সংক্রমণ রোধে গত ১ জুলাই থেকে সারাদেশে সাত দিনের কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। কিন্তু দিন দিন সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় আজ ফের সাতদিন লকডাউন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন নয় হাজার ৯৬৪ জন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএনসিসি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ‘এখন করোনা পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। প্রতিদিন যে হারে মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে এক সপ্তাহ পরে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। তাই চলমান লকডাউন কঠোর থেকে আরও কঠোর করতে হবে। জনগণকে স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে।’
Advertisement
ডিএনসিসি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি, কয়েক দিন ধরে সারাদেশে সংক্রমণের হার বাড়ছে। এর একটা প্রভাব আমাদের হাসপাতালেও পড়েছে। আমাদের এখানেও রোগী ভর্তি এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘গতকালই (৪ জুলাই) একদিনে ৬০ জন রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। এ সংখ্যাটা অনেক বেশি। কারণ ৬০ জনের মধ্যে সবার অবস্থাই সিরিয়াস। তাদের মধ্যে ৩০ জনের মতো আইসিইউতে নিতে হয়েছে। বাকিরা এইচডিইউতে আছেন।’
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন আরও বলেন, ‘আজ থেকে ১০-১২ দিন আগে এই হাসপাতালে মাত্র ৬৫ জন করোনা রোগী ভর্তি ছিল। কিন্তু এখন হাসপাতালটিতে প্রায় ৪০০ রোগী ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে আইসিইউতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন ১২৭ জন। বাকিরা এইচডিইউতে। বিদেশফেরত ২০ জন সাধারণ ওয়ার্ডে ভর্তি। এভাবে চলতে থাকলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আইসিইউ এবং এইচডিইউ শয্যা ফাঁকা থাকবে না।’
এমএমএ/এমআরআর/এমএস