দোর্দণ্ডপ্রতাপে নেতৃত্ব দিয়ে বিধানসভা নির্বাচনে দলকে জিতিয়েছেন, টক্কর দিয়েছেন খোদ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী তিনি হবেন কি-না তাই নিয়েই যেখানে আলোচনা হচ্ছে, সেখানে মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়েই টানাটানি পড়ে গেছে মমতা ব্যানার্জির। এক্ষেত্রে তার ভাগ্য নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছে মহামারি করোনাভাইরাস। শুনতে অবাক লাগলেও এটিই এখন বাস্তব।
Advertisement
সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে বিপুল ভোটে জিতিয়ে আনলেও মমতা নিজে জিততে পারেননি। নন্দীগ্রাম আসনে দাঁড়িয়ে হেরে গেছেন তারই একসময়ের সহযোগী শুভেন্দু অধিকারীর কাছে। ফলে মমতা মুখ্যমন্ত্রী হলেও বিধানসভার সদস্য নন। ভারতের আইন অনুসারে, ছয় মাসের মধ্যে তাকে বিধানসভার সদস্য হতে হবে। তার জন্য ইতোমধ্যে ভবানীপুর আসন থেকে পদত্যাগ করেছেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। এবার নিজের পুরোনো ঠিকানা থেকে উপনির্বাচনে লড়ার পালা মমতার।
কিন্তু সমস্যা বেঁধেছে অন্য জায়গায়। ভারতের একাধিক রাজ্যে বিধানসভা ও লোকসভার উপনির্বাচন বাকি রয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে কোথাও উপনির্বাচন করায়নি দেশটির নির্বাচন কমিশন। ভারতের জনপ্রতিনিধি আইন অনুসারে, বিধানসভার কোনো আসন খালি হলে তার ছয় মাসের মধ্যে উপনির্বাচন করতে হবে। অবশ্য সেই পদের মেয়াদ এক বছর বা তার কম হলে তেমন বাধ্যবাধকতা নেই। অথবা নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় সরকার যদি মনে করে পরিস্থিতি ভোট করানোর মতো নয়, তাহলেও উপনির্বাচনে বিলম্ব করা যেতে পারে।
এখানেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে তৃণমূল। তাদের আশঙ্কা, পশ্চিমবঙ্গে যদি আগামী নভেম্বরে উপনির্বাচন না হয়, তাহলে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হবে মমতাকে। তৃণমূল সুপ্রিমো নিজেও উপনির্বাচনের জন্য একাধিকবার তাগাদা দিয়েছেন।
Advertisement
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এখনো করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ পুরোপুরি ওঠেনি। পরিস্থিতি আগের তুলনায় ভালো হলেও ভাইরাসের প্রকোপ রয়েছে। এখনো দৈনিক হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। রোববার সেখানে ২০ জন মারাও গেছে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ভারতে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ করোনার তৃতীয় ঢেউ আঘাত হানতে পারে। সেটি সত্য হলে তখন উপনির্বাচনের প্রশ্নই ওঠে না। ফলে উপনির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।
প্রবীণ সাংবাদিক সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এস আর চৌধুরী বনাম পাঞ্জাব সরকার মামলায় সুপ্রিম কোর্ট ২০০১ সালে রায় দিয়েছে, ছয় মাসের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তারপর আর না জিতে এসে মন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী হওয়া যাবে না। ফলে উপনির্বাচন সময়মতো না হলে মমতাকে পদত্যাগ করে অন্য কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করতে হবে।
অর্থাৎ, এখন করোনার ওপরই নির্ভর করছে, মমতা মুখ্যমন্ত্রী থাকতে পারবেন কি-না।
Advertisement
সূত্র: ডয়েচে ভেলে
কেএএ/এমএস