সাহিত্য

অদৃশ্যজন

 

রাশিদ হুসেইন ঈশ্বর স্বয়ং শরণার্থী যখন, হে প্রভুতো এবার বাজেয়াপ্ত করে ফেলুন আপনাকে সেজদার সব গালিচা আর জায়নামাজ বেচে দিন তাহলে গির্জেগুলো তার সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিসহআর পাচার করে দিন মুয়াজ্জিনদের কালোবাজারে এবং, গুম করে ফেলুন মিটিমিটি তারার দল—ওরা কিনা দেখায় পথ ঘরবাড়িহারা পথিকদের! এমনকি আমাদের এতিমেরা— যাদের বাবা ‘অদৃশ্যজন’শুষে নিন তাদেরও হৃদয়, হে মহামহিম ঈশ্বর

Advertisement

ক্ষমা চাইবেন না, যদি কেউ বলে আপনি জালেম বেজার হবেন না, যদি আপনাকে বলে আগ্রাসী আপনিই তিনি, যিনি মুক্ত করে দিয়েছেন পশুর দলআর দিয়েছেন আব্রাহামের বংশকে মুহাম্মদের ভূমি

আপনিই কি তিনি, যিনি হত্যা করেছেন বসন্তকে?তাহলে দাউদাউ করে জ্বলবে ক্রোধ নিভবে না ইনকিলাবের অগ্নি। আপনিই কি তিনি, যাঁর হাত খুবলে নিয়েছে আমার পুষ্পোদ্যান আর উজাড় করে দিয়েছেরক্তরাঙা বাদাম তোলার মওসুম? আপনিই কি তিনি, মিথ্যে দেবতাকে যিনি ইমাম বানিয়েছেন নামাজেরতারা নিজেরাই দাস, কেঁদে কী হবে অপর দাসেরজন্যে মুক্তির মুনাজাতে?এবং, আপনি কি চেয়েছেন আমি হই বাজারে বেচা অতঃপর কেনা, আবার বেচা গোলাম?আপনিই কি আমায় দিয়েছেন নৈরাশ্যবাদ ঠেলে দিয়েছেন আমার ভবিষ্যৎ কোনো বেনামি কৃষ্ণগহ্বরে?

রেগে যাবেন না, কারণ এসব কথার কোনো মুখ নাই ভয় পাবেন না, কারণ এসব কথার কোনো হাত নাই আমি তো নামঠিকানাহীন অদৃশ্যজনআমার কিছুই নাই হারাবার তবে, আমি যদি আপনার হাতে থাকা রুটি খাবলে ধরিতাহলে অদৃশ্য আমার একটি জিনিসইআপনার আঙুলের ডগায় পাবেন— আমার শরীরে বয়ে চলা রক্তস্রোত।

Advertisement

কবি পরিচিতি : রাশিদ হুসেইন (১৯৩৬ - ১৯৭৭) ফিলিস্তিনি কবি ও সাংবাদিক। তিনি ব্রিটিশ ম্যান্ডেটরি আমলে হাইফার মুসমুস শহরে জন্মগ্রহণ করেন, পরবর্তীতে যা ইসরায়েল দখল করে নেয়। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ বের হয় ১৯৫৭ সালে। তিনি বহুভাষাবিদ ছিলেন। ১৯৫৮ সালে আরব ও হিব্রু লেখকদের সমাবেশে স্বরচিত হিব্রু কবিতা আবৃত্তি করে সবাইকে আশ্চর্য করে দিয়েছিলেন। ইরাকি ইহুদি সমালোচক এলিয়াহু খাজুম তাঁকে বলেন, ‘সবচেয়ে প্রত্যাশিত আরব-ইসরায়েলি কবি’। ১৯৫৯ সালে তাঁর বেশ কিছু কবিতা হিব্রুতে তর্জমা করেন। এছাড়াও তিনি জার্মান কবি ব্রেটল্ট ব্রেখট, তুর্কি কবি নাজিম হিকমেত, কঙ্গোর স্বাধীনতাকামী নেতা পাত্রিক লুমুম্বা ও ফারসি কবি আশুবের কাজ আরবিতে তর্জমা করেন। তিনি ইসরায়েলের বামপন্থী রাজনৈতিক দল মাপামের সদস্য ছিলেন, এবং এর মুখপাত্র ‘আল মিরসাদ’ সম্পাদনা করতেন। ১৯৬২ সালে তিনি মাপাম থেকে বহিস্কৃত হন। ১৯৬৫ সালে তিনি পারিতে স্থানান্তর হন, এবং এর দুই বছর পর ইয়াসির আরাফাত প্রতিষ্ঠিত ফিলিস্তিনের বাম রাজনৈতিক দল ফাতাহতে যোগ দেন। ১৯৭৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের অ্যাপার্টমেন্টে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ফিলিস্তিনি জাতীয় কবি মাহমুদ দারবিশ তাঁকে বলতেন ‘মহাতারকা’, তাঁর মৃত্যুর পর তাঁকে উৎসর্গ করে একটি কবিতাও লেখেন।

‘অদৃশ্যজন’ কবিতাটি অনেকটা আল্লামা ইকবালের ‘শিকওয়া’র আদলে করে লেখা। ২০১৩ সালে ফিলিস্তিনি সঙ্গীতশিল্পী রিম বান্না তাঁর Revelation of Ecstasy and Rebellion অ্যালবামে কবিতাটি গানে রূপ দেন। রিম বান্নার কণ্ঠে আশা ও ক্ষোভের সমন্বিত মূর্চ্ছনায় আবিষ্ট করে রাখে আমাদের ‘অদৃশ্যজন’।

তর্জমা : মওলবি আশরাফ

এসএইচএস/এমএস

Advertisement